দাম বেড়েছে তেল, চিনি, আটা, পেঁয়াজ, সবজি, মুরগি, মাছের

স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর দ্রব্যমূল্যের কষাঘাত
স্টার ফাইল ছবি

কাঁচাবাজারে প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মন্দার কারণে চাপে থাকা স্বল্প আয়ের কর্মজীবী মানুষ ওপর এই মূল্য বৃদ্ধি বাড়তি দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত কয়েক সপ্তাহে পণ্য সরবরাহে সমস্যাসহ মহামারি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর কারণে বাড়তে থাকা চাহিদা ও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে চিনি, আটা, মুরগি, মাছ, রান্নার তেল, মসল্লা ও সবজীর দাম বেড়ে গেছে।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজারে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, সরকারের নির্ধারিত ৭৪ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দামের চেয়েও প্রায় ১১ শতাংশ বেশি দামে (প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৮৬ টাকা) চিনি বিক্রি হচ্ছে।

শুক্রাবাদ বাজারের খুচরা বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, পাইকারি বাজার থেকে আমি ৭৮ টাকা দরে চিনি কিনেছি। 'তাহলে কীভাবে সরকারের নির্ধারণ করা দামে বিক্রি করব?', বলেন হোসেন।

সম্প্রতি চালের দাম স্থিতিশীল থাকলেও, আটা-ময়দা কিনতে বেশি খরচ করতে হচ্ছে। আটা ও ময়দার দাম যথাক্রমে প্রতি কেজিতে ৪২ টাকা ও ৫২ টাকা, যা আগের চেয়ে ৯ থেকে ১৩ শতাংশ বেশি।

দেশের অন্যতম প্রধান নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি ও প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান টিকে গ্রুপের ফাইন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন্সের পরিচালক মোহাম্মদ শফীউল আতহার তাসলিম জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে আটা-ময়দার দাম বেড়েছে। এখন প্রতি টন ময়দার দাম ৪৫০ ডলার, যা কয়েক সপ্তাহ আগেও ২৯ শতাংশ কম ছিল।

পেঁয়াজের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে এক সপ্তাহের মধ্যে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে পৌঁছেছে। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ার জন্য সরবরাহ সংকটকে দায়ী করছেন।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এক মাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম প্রতি লিটারে ৩ থেকে ১০ শতাংশের মতো বেড়েছে।

গত রোববার খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকা এবং খোলা পাম তেল প্রায় ১২৫ থেকে ১২৮ টাকা দরে বিক্রি হয়।

ভোজ্য তেলের দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করে তাসলিম বলেন, সম্প্রতি অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে টন প্রতি ২১ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৩৯০ ডলার হয়েছে।

টাউন হল বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৬০ টাকা ও সোনালী জাতের মুরগি ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে এর দাম ছিল যথাক্রমে ১৪০ টাকা ও ২৩০ টাকা।

পোল্ট্রি ও ব্রয়লার মুরগির খুচরা বিক্রেতারা জানান, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় সম্প্রতি মুরগির দাম অনেক বেড়েছে।

পোল্ট্রি খামারিরা জানান, মুরগির খাবারের দাম প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় সার্বিকভাবে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ কারণে অনেক খামারি উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছেন।

এই সপ্তাহে ডিমের দাম প্রতি ডজনে প্রায় ১০ টাকা করে বেড়েছে।

সরকার গতকাল ইলিশ মাছ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর মাছের দামও বেড়েছে। রুই মাছের দাম এখন ২৬০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি। এছাড়াও তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস যথাক্রমে ১৬০ থেকে ১৮০ এবং ১২০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

গত দুই সপ্তাহে কাঁচামরিচের দাম প্রতি কেজিতে ৮০-১০০ টাকা বেড়ে ২০০-২২০ টাকা হয়েছে।

শীতের আগে শিম ১২০ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে আর গাজর ও টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা।

৩০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া কাঁচা পেঁপে ছাড়া নগরীর বাজারগুলোতে ৫০ টাকার কম দামের কোনো সবজী নেই।

তবে যশোরের বড় বাজার পাইকারি বাজারে বেশিরভাগ সবজীর দাম প্রতি কেজিতে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। উল্লেখ্য, দেশে যেসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয় যশোর অঞ্চল তার মধ্যে অন্যতম।

যশোর সদর উপজেলার সাতমাইল এলাকার একজন কৃষক ও ব্যবসায়ী সুকুমার রায় বলেন, বাজারে সবজীর সরবরাহ খুবই কম, কারণ গ্রীষ্মকালীন সবজী প্রায় শেষে হয়ে এসেছে এবং শীতকালীন সবজী এখনো বাজারে ওঠেনি।

রসুন ও আদা সহ সব ধরনের মসলার দাম কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।

রাজধানীর তেজকুনিপাড়া এলাকার রিকশা চালক রহমত আলি জানান, সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তার সংসার চালানোর খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

'কয়েক মাস আগে আমি ৩০০ টাকায় দৈনন্দিন বাজার করতে পারতাম। এখন খরচ ৫০০ টাকায় ঠেকেছে', বলেন তিনি।

কলাবাগানের বাসিন্দা শাকিল আহমেদ জানান, তিনি এখন সস্তায় সবজী ও অন্যান্য পণ্য কেনার জন্য পায়ে হেঁটে কারওয়ানবাজারে যান।

কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান জানান, সরবরাহ সংকটের কারণে প্রতি বছর অক্টোবর মাসে সবজীর দাম বেশি থাকে।

তিনি বলেন, 'তবে অন্যান্য পণ্য, যেমন তেল, চিনি, আটার দাম স্থানীয় বাজারে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়েও বেশি বেড়ে গেছে। আমাদের ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দেন।'

প্রতিবেদনটি অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Govt relieves Kuet VC, Pro-VC of duties to resolve crisis

A search committee will soon be formed to appoint new candidates to the two posts

1h ago