‘অসংখ্য তরুণের ফ্যাশন আইকন ছিলেন’

বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম ফ্যাশন আইকন নায়ক জাফর ইকবালের জন্মদিন আজ। ১৯৫০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বোন কণ্ঠশিল্পী শাহানাজ রহমতুল্লাহ এবং বড় ভাই সংগীত পরিচালক আনোয়ার পারভেজ। তারা কেউই আর আমাদের মাঝে বেঁচে নেই।
নায়ক জাফর ইকবালের ঘনিষ্ঠজন সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ আজ শনিবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জাফর ভাই বয়সে বড় হলেও আমরা বন্ধুর মতো মিশতাম। সেই সময়ে অসংখ্য তরুণের ফ্যাশন আইকন হয়ে উঠেছিলেন তিনি। আমিসহ অনেকেই তার ফ্যাশন অনুসরণ করতাম। রুচিবোধ থেকে শুরু করে তার ব্যক্তিত্ব ছিল নজরকাড়া। "প্রেমিক" নামের একটি সিনেমা প্রযোজনা করেছিলেন জাফর ভাই। সেখানে আমাকে অভিনয় করতে বলেছিলেন। সারারাত ধরে তার ধানমন্ডির বাসায় বুঝিয়েছিলেন অভিনয় করার বিষয়ে। যদিও শেষ পর্যন্ত আমার অভিনয় করা হয়নি। মেয়েরা তাকে অনেক পছন্দ করতো। খুব সচেতন হয়ে ড্রেসআপ করতেন। সিনেমায় তার লিপে আমার কণ্ঠের অসংখ্য গান ব্যবহৃত হয়েছে। গানগুলো শুনলে সেই দিনগুলোতে ফিরে যাই। অনেক রাত-দিন আমরা আড্ডা দিয়েছি। খুব মিস করি তাকে।'
জাফর ইকবাল অভিনীত প্রথম সিনেমার নাম 'আপন পর'। সিনেমাটি পরিচালনা করেন বশির হোসেন। ১৯৬৯ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমায় তার নায়িকা ছিলেন কবরী। এই ছবির 'যা রে যাবি যদি যা' গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পায় সেই সময়ে। ৭০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে 'সূর্য সংগ্রাম' ছবিতে ববিতার বিপরীতে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। পরে একসঙ্গে জুটি হয়ে ৩০টি সিনেমায় অভিনয় করেন তারা। বাস্তব জীবনে এই জুটির প্রেমের কথা সেসময় আলোচনা হতো। তবে ব্যক্তিজীবনে জাফর ইকবাল বিয়ে করেছিলেন সোনিয়াকে। এই দম্পতির দুই ছেলে সন্তান আছে।

১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া 'মাস্তান' ছবির বদৌলতে ড্যাশিং নায়কের পরিচিতি পান জাফর ইকবাল। রোমান্টিক নায়ক হিসেবে পরিচিতি পান 'নয়নের আলো' সিনেমার মাধ্যমে। সর্বমোট ১৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন জাফর ইকবাল। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কিছু সিনেমা হলো, 'অবুঝ হৃদয়', 'ভাই বন্ধু', 'অবদান', 'প্রেমিক', 'সাধারণ মেয়ে', 'ফকির মজনু শাহ', 'দিনের পর দিন', 'বেদ্বীন', 'অংশীদার', 'মেঘ বিজলী বাদল', 'নয়নের আলো', 'সাত রাজার ধন', 'আশীর্বাদ', 'অপমান', 'এক মুঠো ভাত', 'গৃহলক্ষ্মী', 'ওগো বিদেশিনী', 'প্রেমিক', 'নবাব', 'প্রতিরোধ', 'ফুলের মালা', 'সিআইডি', 'মর্যাদা', 'সন্ধি', 'বন্ধু আমার' এবং 'উসিলা' ইত্যাদি।
গায়ক হিসেবেও তিনি ছিলেন অনন্য। ছোটবেলা থেকেই গানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৬৬ সালে বন্ধুদের নিয়ে 'রোলিং স্টোন' ব্যান্ড গড়েছিলেন। এলভিস প্রিসলি তার খুব প্রিয় ছিল। সংগীত পরিচালক ভাই আনোয়ার পারভেজের সুরে 'বদনাম' ছবির 'হয় যদি বদনাম হোক আরও' গানটি দিয়ে চলচ্চিত্র প্লেব্যাকে অভিষেক হয় তার। সুরকার আলাউদ্দিন আলীর সুরে অনেক গান গেয়েছেন তিনি। তার গাওয়া শ্রোতা প্রিয় গানের মধ্যে আছে 'সুখে থেকো ও আমার নন্দিনী হয়ে কারো ঘরনি', 'তুমি আমার জীবন, আমি তোমার জীবন', 'হয় যদি বদনাম হোক আরও'। ৮০ দশকে 'কেন তুমি কাঁদালে' শিরোনামে একটি অডিও অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছিল তার।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের ২৫ বছর উদযাপন অনুষ্ঠানে 'এক হৃদয়হীনার কাছে হৃদয়ের দাম কি আছে' গানটি গেয়েছিলেন জাফর ইকবাল। পরে রফিকুল আলমও এই গানটি গেয়েছিলেন।
নায়ক, গায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর ইকবাল অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। ১৯৯১ সালে ২৭ এপ্রিল মাত্র ৪০ বছর বয়সে মারা যান তিনি।
Comments