মতামত: রবীন্দ্রনাথ এবং জাতীয়তাবাদ

শত বছর আগে রবীন্দ্রনাথ দ্বিতীয়বারের জন্য আমেরিকা ভ্রমণ শুরু করেন এবং ১৯১৭ সালে প্রথম সম্ভবত মার্চ মাসে ফিরে আসেন। বহুবছর আগে সম্ভবত দেশ পত্রিকায় জাতীয়তাবাদ ও রবীন্দ্রনাথ শীর্ষক এক প্রবন্ধ পড়েছিলাম যেখানে রবীন্দ্রনাথের নোবেল বিজয়ের পর দ্বিতীয়বার আমেরিকা সফরের কথা পড়েছিলাম।
মতামত: রবীন্দ্রনাথ এবং জাতীয়তাবাদ
রবীঠাকুর

শত বছর আগে রবীন্দ্রনাথ দ্বিতীয়বারের জন্য আমেরিকা ভ্রমণ শুরু করেন এবং ১৯১৭ সালে প্রথম সম্ভবত মার্চ মাসে ফিরে আসেন। বহুবছর আগে সম্ভবত দেশ পত্রিকায় জাতীয়তাবাদ ও রবীন্দ্রনাথ শীর্ষক এক প্রবন্ধ পড়েছিলাম যেখানে রবীন্দ্রনাথের নোবেল বিজয়ের পর দ্বিতীয়বার আমেরিকা সফরের কথা পড়েছিলাম।

রবীন্দ্রনাথ তখন নোবেল বিজয়ী বিশ্বখ্যাত। ১৯১৩ সালে তার কবিতা সঙ্কলনের প্রথম ইংরেজী ভাষায় অনুবাদ গীতাঞ্জলীর জন্য সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ লাভ করেন।

নোবেল বিজয়ের আগে প্রথমবার আমেরিকা সফর করেন ১৯১২ সালে। রবীন্দ্রনাথের ছেলে রথীন্দ্রনাথ তখন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি কৃষির ছাত্র। বাবার মতই তাঁর সাহিত্য নিয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল। অক্সফোর্ড অথবা লন্ডনের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও তার বাবার ইচ্ছায় রথীন্দ্রনাথ আমেরিকায় কৃষি নিয়ে লেখাপড়া করেন। রথীন্দ্রনাথই আমেরিকা থেকে আলু চাষ শিখে আসেন এবং পাবনার পতিসর ও কুষ্টিয়ার শিলাইদহ অঞ্চলের কৃষকদের আলুর বীজ সরবরাহ করে আলু চাষ পদ্ধতি শেখানোর কথা বহুল প্রচারিত। নোবেল বিজয়ের ফলে আমেরিকার শিক্ষাঙ্গণে রবীন্দ্রনাথ ব্যাপক পরিচিত লাভ করায় সাহিত্য অনুরাগী আমেরিকানরা তাঁর চিন্তা-ভাবনার বিষয় ব্যাপক আগ্রহ প্রাকাশ করে। সে সময়ের বিখ্যাত প্রকাশক ম্যাকমিলানের উদ্যোগে সেপ্টেম্বর ১৯১৬ থেকে মার্চ ১৯১৭ প্রায় ছয় মাস সময়ে আমেরিকার নানা প্রান্তে ২৫ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ে ভাষণ প্রদান করেন রবীন্দ্রনাথ। সেই সময়ে, প্রতিটি ভাষণের জন্য তাঁকে ৭০০ ডলার থেকে ১০০০ ডলার পর্যন্ত প্রদান করেছিল আয়োজকরা। আজকের হিসাবে যা কয়েক লক্ষ টাকা। মজার কথা হলো, সেই পুরো টাকা পরিবারের প্রয়োজনে ব্যবহার না করে আজকের শান্তিনিকেতন তৈরীর কাজে তিনি ব্যয় করেছেন, তার আগে নোবেল প্রাইজ মানি শান্তিনিকেতনের জন্য ব্যয় করেছিলেন।

জাতীয়তাবাদ শীর্ষক নিউইয়র্কে দেয়া তাঁর ভাষণ বিখ্যাত। ইউরোপের দেশগুলিতে তখন জাতীয়তাবাদের তীব্র বিকাশ ঘটছে। বহু শতাব্দী ধরে ইউরোপে জাতীয়তাবাদের আস্ফালণের কারণে প্রায় সবগুলি দেশ পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মনোভাবে নিয়ে অবস্থান করছিল।

তখনও ইমিগ্রান্টদের দেশ আমেরিকাতে পৌঁছালে যে কেউ চাইলেই বসতি স্হাপন করতে পারতেন এমন কোন আইন ছিলোনা। আমেরিকায় বসতি স্হাপনকারীরা বিভিন্ন দেশ থেকে আসায় তখনও আমেরিকাতে কোন জাতীয়তাবাদী ধারার সৃষ্টি হয়নি।

রবীন্দ্রনাথ তার নিউইয়র্কের ভাষণে ইউরোপের জাতীয়তাবাদের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন এবং আশংকা করেছিলেন ইউরোপের সম্ভাব্য যুদ্ধের যা কয়েক সপ্তাহের মধ্য সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছিল। ইউরোপের সেই জাতীয়তাবাদী চেতনার কারণে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরু হয়েছিল এবং কয়েক বছর সেই যুদ্ধ চলেছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্রমাণিত হয়েছিল যে জাতীয়তাবাদ মানবতা হত্যা করে। তা সেই জাতীয়তাবাদ যেকোনো ধর্ম, ভাষা কিংবা ভৌগলিক এলাকা নিয়েই হোক না কেন।

রবীন্দ্রনাথ, তাঁর নিউইয়র্কে জাতীয়তাবাদ বিরোধী ভাষণের কয়েক বছর পূর্বে, ১৯০৬ থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত চলতে থাকা বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে জমিদারদের পক্ষ নিয়ে নেতৃত্ব দেন।

সেই যুদ্ধের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ব্রিটিশরা, ভারতে তাদের ঔপনিবেশিক শাসনের শক্তির বলে ভারতীয় কৃষকদের মধ্য হতে সহজেই সৈন্য সংগ্রহ করতে পেরেছিল। যে কারণে সেই যুদ্ধে, ভারতীয় জনগনের কোন স্বার্থ না থাকা সত্ত্বেও দরিদ্র ভারতীয় কৃষক ও বেকার যুবকরা মোটা বেতনের লোভে ভাড়াটে সৈন্য হিসাবে ব্রিটিশ সেনাবাহীনীতে পৃথিবীর নানা প্রান্তে যুদ্ধ করেছে। প্রায় দশ লক্ষ ভারতীয় সেই যুদ্ধে ভাড়াটে যোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধ করছে, যাদের প্রায় নব্বই হাজারই নিহত হয়। যুদ্ধে নিহত সৈনিক পরিবারদের কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। পরিবারের কাছে মৃত্যু বিবরনী প্রকাশ করা হয়নি। যুদ্ধ শেষের অনেক পরে, ১৯৩১ সালে নিহতদের স্মরণে দিল্লীতে আজকের ইন্ডিয়া গেইট তৈরী করা করেছিল ।

রবীন্দ্রনাথ ১৯৩২ সাল পর্যন্ত মোট পাঁচবার আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন। শান্তিনিকতনের জন্য অর্থ সংগ্রহে ১৯২০ সালে তৃতীয়বার আমেরিকা ভ্রমণ করেছিলেন তিনি। সেই সফর দারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। নিউইয়র্ক শহরে জেপি মরগ্যানের বিশিষ্ট ধনীদের সাথে দেখা করে তিনি তেমন কোনো সমর্থন পাননি। পুঁজিবাদ নিজের মুনাফা খোঁজে। জেপি মরগ্যান ভারতের শান্তিনিকেতনে টাকা দেবেনা এ সত্য রবীঠাকুর বুঝতে পারেননি।

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago