কলকাতায় কবি, কবিতার নতুন স্থান 'কবিতা কর্ণার'
এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি এক লাইনও কবিতা পড়েননি। কিংবা এমনও বিরল হবে, যে এক লাইন কবিতা লিখেননি। গুনগুন করে আবৃতি করেননি রবিঠাকুর কিংবা বিদ্রোহী কবির লেখা বা কবিতার পংক্তি। জীবনের সুখ, দুঃখ, যন্ত্রণা, চাওয়া-পাওয়া কিংবা না পাওয়ায় যে অনুভূতির জন্ম দেয় আমাদের মস্তিষ্ক, বর্ণমালার গাঁথুনিতে সেই অনুভূতির প্রকাশ পায়, হয়ে উঠে কবিতা। আর এমন কবিতার জন্ম দিয়ে কেউ হয়ে উঠেন বিখ্যাত, কেউ নিজের গণ্ডির মধ্যেই অপরিচিত থেকে যান সারা জীবন।
কলকাতার নন্দনে শরৎ সন্ধ্যায় (৩১ আগস্ট) কবিতা কর্ণারের আড্ডায় যেন "তোমার জন্যই বেঁচে আছি কবিতা" স্বার্থক রূপ দেখলো বোদ্ধামহল। প্রখ্যাত, অখ্যাত কবি এবং আবৃত্তিকারদের নিয়ে বৈঠকে আড্ডার সঙ্গে গান, আঁকা এবং বির্তক যুক্ত হয়ে গিয়েছিল কিছু সময়ের জন্য।
সেখানে কবিরা নিজেরই পড়েছেন নিজেদের কবিতা, কেউ আবার কোনও কবির মুখ থেকেই তাঁর আবৃত্তি করা কবিতা টেনে নিয়ে নিজেই আবৃত্তিও করে শুনিয়েছেন।
তা নিয়েই শুরু দর্শকসারিতে তর্ক, বির্তক; আবার উপস্থিত শিল্পীর তুলিতে কবি-কবিতার মিলন ক্ষেত্রের পটভূমিও সাদা ক্যানভাসে জায়গা পেয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কবিতা একাডেমি প্রতি মাসের শেষ দিন এই রকম কবিতা কর্ণারে ব্যতিক্রমী আড্ডার আয়োজন করে। এই আয়োজনে কলকাতা, শহরতলি কিংবা জেলা শহর থেকে পরিচিত, অপরিচিত কবি, আবৃত্তিকার কিংবা কবিতা প্রেমিরা জড়ো হন। নিজেদের মধ্যে কথা হয়, তর্ক হয়, দ্য ডেইলি স্টারকে বললেন কবিতা একাডেমির চেয়ারম্যান কবি সুবোধ সরকার।
কলকাতার এই কবিতা কর্ণারের আড্ডায় বাংলাদেশি কবি এবং তাঁদের লেখা কবিতাও জায়গা পাবে বলে এদিনের মঞ্চে ঘোষণা করেছেন পশ্চিমবঙ্গ কবিতা একাডেমির চেয়ারম্যান।
কিন্তু, আজকের দিনে যেখানে তরুণ-নবীন-কিংবা বয়স্কদের হাতের মুঠোয় উঠেছে মোবাইল, ফেসবুক, হোয়াটসআপসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সেখানে দাঁড়িয়ে কবিতার অস্তিত্ব নিয়ে কি কোনও সংশয় দেখছেন আয়োজকরা? আর সে কারণেই কি এভাবে কবিতা ও কবিদের বাঁচাতে নিয়ম করে আড্ডায় বসতে হচ্ছে? নাকি চারদিকের রাজনৈতিক হানাহানি বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক নানা মতের বাড় বাড়ন্তের বিরুদ্ধে এখনই শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসে গিয়েছে? কবিতার মধ্যদিয়েই কি সেই ডাক দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন পশ্চিমবঙ্গের কবি-সাহিত্যিকরা? - এই প্রশ্ন নিয়ে প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী শুভা প্রসন্ন বললেন, "কবিতা চিরদিন থাকবে। কবিতার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে ঝুঁকি নেই"। একই কথা জানালেন, আবৃতিকার নিবেদিতা নাগ তহবিলদার, জগন্নাথ বসুও।
Comments