কলকাতা-খুলনা রুটের যাত্রীবাহী রেল নিয়ে অনিশ্চয়তা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের পর থেকেই কলকাতা-খুলনার মধ্যে নিয়মিত যাত্রীবাহী রেলের চাকা ঘোরার অপেক্ষায় দুপাড়ের মানুষ। আগামী ৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার কলকাতা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পেট্রাপোল-বেনাপোল দিয়ে যাত্রীবাহী রেল যাত্রার তারিখও ঠিক হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় রেল বোর্ড এখনও এই রুটের রেল চলাচলে সবুজ সংকেত দেয়নি।
তাই দুই দফায় তারিখ চূড়ান্ত হওয়ার পরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল কলকাতা-খুলনা রুটের যাত্রীবাহী মৈত্রী এক্সপ্রেস-২। যদিও এই রুটের আন্তর্জাতিক রেলের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সোনার তরী এক্সপ্রেস’।
ভারতীয় রেল সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে শনিবার কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা দাবি করেছে নিরাপত্তা ও পরিকাঠামোগত ত্রুটির বিষয়টি নজরে আসায় ভারতীয় রেল বোর্ড এই রুটের রেল চলাচলের সবুজ সংকেত দেয়নি।
তবে ভারতীয় পূর্ব রেলের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা রবি মহাপাত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, ভারতীয় রেল বোর্ডের সবুজ সংকেত নয় আসলে বাংলাদেশ থেকে সবুজ সংকেত না পাওয়ার জন্যই ৩ আগস্টের নির্ধারিত দিনে কলকাতা-খুলনা রুটে আনুষ্ঠানিক রেলযাত্রা আরম্ভ করা যাচ্ছে না।
ভারতীয় রেল এবং বাংলাদেশের রেল এই রুটের যাত্রীবাহী ট্রেন চালাতে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। কিন্তু সীমান্তের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এই দুটি শাখার প্রস্তুতি হয়নি বাংলাদেশের দিকে। তাই বিষয়টি এখন দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে রয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত এলেই আমরা চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা করবো- রবি মহাপাত্র দ্য ডেইলি স্টারকে এই কথাও যোগ করেন।
এর আগে রবি মহাপাত্র ৩ জুলাই কলকাতা-খুলনার মধ্যে যাত্রীবাহী রেল চলাচলের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন। যদিও পরবর্তীতে তিনি ওই সূচি পিছিয়ে ৩ আগস্ট করার কথা জানিয়েছিলেন দ্য ডেইলি স্টারসহ কলকাতার স্থানীয় গণমাধ্যমকে।
এদিন আনন্দবাজার পত্রিকার তাদের খবরে বলেছে, ভারতের রেল বোর্ড শুধু যাত্রীবাহী ট্রেন নয় কলকাতা-খুলনার মধ্যে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রেও সবুজ সংকেত দেয়নি। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে তারা আরো জানায়, কলকাতা-খুলনার যাত্রীবাহী রেলের পরীক্ষামূলক যাত্রার সময় অতিরিক্ত যাত্রী হওয়ার পর সেটা সামলাতে ব্যর্থ হয় রেল। নিরাপত্তার ঘাটতির বিষয়টি যেমন রেল বোর্ডের নজরে পড়েছে তেমনি অবকাঠামোগত ত্রুটিও পেয়েছে তারা। তাই ত্রুটি মুক্ত করেই কলকাতা-খুলনা রুটের যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাতে চাইছে ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ।
পত্রিকাটি আরো জানায়, ভারতের রেল বোর্ডের কাছে পূর্ব রেলের তরফ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু রেল বোর্ড সেই চিঠির কোনও জবাব দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে পূর্ব রেলের কর্মকর্তারা বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। কেননা তারা ৩ আগস্ট ‘সোনার তরী এক্সপ্রেস’ চালু করার মোটামুটি চূড়ান্ত তারিখ ধরে সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু আর মাত্র চার দিন বাকি, এর মধ্যেও রেল বোর্ডের সবুজ সংকেত না পৌঁছানোয় ৩ আগস্ট কলকাতা-খুলনা রুটের সোনার তরীর চাকা ঘুরছে না বলেই মনে করছে পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ।
গত ৮ এপ্রিল দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথভাবে বোতাম চেপে কলকাতা-খুলনা রুটের পরীক্ষামূলক যাত্রীবাহী রেল যাত্রার সূচনা করেছিলেন। সেদিনই সূচনা হয়েছিল একই রুটের পরীক্ষামূলক যাত্রীবাহী বাস পরিষেবার। জুন মাস থেকেই বাণিজ্যিকভাবে কলকাতা-খুলনা-কলকাতা রুটের বাস পরিষেবা চালু হয়ে গিয়েছে।
Comments