ছেলের খুনিদের বিচার চাইতে ভারতে বাংলাদেশি দম্পতি
ছেলের খুনিদের বিচার চাইতে ভারতে এসেছেন ছেলে হারানো অসহায় বাংলাদেশি দম্পতি জগদীশ সিংহ এবং কল্পনা সিংহ।
পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া বাংলাদেশের যশোর জেলার কেশবপুর থানা এলাকার মঙ্গলকোর্ট বাজারে পাঁচপোতা-সিংহপাড়ার বাসিন্দা জগদীশ এবং কল্পনা। দুই মেয়ে এক ছেলের পরিবার তাঁদের। কৈশোরে ছেলে অনুপম সিংহকে ভারতের এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন জগদীশ সিংহ। সেখান থেকেই পড়াশোনা করে স্নাতক পাশ করে মুদ্রা বিনিময়ের প্রতিষ্ঠানে চাকরিও শুরু করেছিলেন অনুপম।
সদা-হাস্যজ্বল এবং পরোপকারী হিসাবে পরিচিত অনুপম সিংহ ২০১৬ সালের ২২ জানুয়ারি বারাসাতের নবপলির মনুয়া মজুমদারের সঙ্গে পরিণয়ে বাঁধা পড়েন। এর আগে ২০১০ সাল থেকে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ছিল মনুয়ার সঙ্গে।
কিন্তু, সবকিছু শেষ হয়ে যায় গত ২ মে রাতে। তাঁদের একমাত্র পুত্র অনুপম সিংহকে সেদিনই নৃশংসভাবে খুন করা হয়। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে ওই খবর শুনে।
খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন অনুপমেরই স্ত্রী মনুয়া মজুমদার এবং অজিত রায় নামে মনুয়ারই আরও এক প্রাক্তন প্রেমিক।
মঙ্গলবার ছিল অনুপমের স্মরণসভা। ছেলের স্মরণসভায় যোগ দিতে যশোর থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসেন তাঁর বাবা-মা। ছেলের শোকে বাকরুদ্ধ তাঁরা দুজন।
তবুও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন জগদীশ সিংহ। তিনি বলেন, “ঠাণ্ডা মাথায় তাঁর নিরীহ ছেলেকে খুন করা হয়েছে। খুনের পেছনে শুধু পুত্রবধূ এবং পরকীয়া প্রেমিকই জড়িত নন বরং মনুয়া মজুমদারের বাবা-মা এবং একজন মামাও জড়িত রয়েছেন। তাঁরা সবাই মিলে অনুপমের বারাসাতের ব্যবসা এবং অর্থসম্পদ দখল করার জন্যই এভাবে খুনের পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন।”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছেও এবিষয়ে হস্তক্ষেপের আবেদন জানাবেন বলেও তিনি জানান এদিন।
উত্তর চব্বিশ পরগনার জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “দফায় দফায় রিমান্ড নিয়ে মনুয়া এবং অজিতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে গত কয়েকদিন কলকাতার গণমাধ্যমগুলোর খবর বলছে, মনুয়া মজুমদারের পরামর্শে অজিত রায় একাই পিটিয়ে খুন করে অনুপম সিংহকে। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা থেকে আনুমানিক ৪০ কিলোমিটার দূরে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হৃদপুরে অনুপমের নিজের ফ্ল্যাটে খুন করা হয় তাঁকে।
আরও বলা হচ্ছে, স্ত্রী মনুয়া মজুমদার আগে থেকেই তাঁর দ্বিতীয় প্রেমিককে অনুপমের ফ্ল্যাটে ঢুকিয়ে নিজে বাবার বাড়ি চলে গিয়েছিলেন।
এমন কি খুন করার আগে নিজের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মৃত্যুর আগে অনুপমের শেষ চিৎকার পর্যন্ত মনুয়াকে শুনিয়েছেন অজিত। মনুয়া মজুমদারের কথা মতোই এই কাজ তিনি করেছেন বলে পুলিশি জেরায় স্বীকার করেন অজিত রায়।
গত একমাস ধরে কলকাতার গণমাধ্যম জুড়ে চাঞ্চল্যকর এই খুনের খবর গুরুত্ব দিয়েই প্রকাশিত হচ্ছে। এরই মধ্যে খুনিদের বিচারের দাবিতে উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসাতে নিহত অনুপমের পক্ষে জনমত গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাঁরা প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে দ্বারস্থ হচ্ছেন যেন অনুপনের খুনিরা আইনের ফাঁক গলে না বেড়িয়ে পড়েন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনুপমের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “এই ধরনের একটি অপরাধ যেন সমাজে আর দ্বিতীয়টি না হয় তার জন্য আমরা প্রয়োজনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আবেদন জানাবো। প্রয়োজন হলে বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে কথা বলার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও চিঠি পাঠানো হবে।”
Comments