জঙ্গি দমনে সাফল্য, তদন্তে ধীরগতি
গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গিদের দমন অভিযানে সাফল্য পেলেও এ সময়ের মধ্যে কোন ঘটনারই তদন্ত শেষ করা সম্ভব হয়নি।
গত বছর ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার পর সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কটির বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু হয়। তখন থেকে অন্তত ২০টি জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ৬৭ জন সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত হয়েছে। তারা হয় পুলিশের গুলিতে নয়ত আত্মঘাতী বিস্ফোরণে মারা গেছে। এই পাশাপাশি ১২৮ জন সন্দেহভাজন জঙ্গি পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, নিহত অনেকের পরিচয় এখনো না জানায় তদন্ত শেষ করা যাচ্ছে না।
নিহত যেসব সন্দেহভাজন জঙ্গির পরিচয় এখনো জানা যায়নি তার মধ্যে কল্যাণপুর নিহত একজন ও গাজীপুরের পাতারটেকের চারজন রয়েছে। গত বছর ২৬ জুলাই কল্যাণপুরে অভিযানে নয় জন ও ৮ অক্টোবর গাজীপুরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সাত জন নিহত হয়।
এদের ছাড়াও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে নিহত চারজনের মধ্যে দুজন, মৌলভীবাজারের বড়হাটে তিন জনের মধ্যে দুজন ও সিলেটের শিববাড়িতে গত মার্চে নিহত চারজনের কারও পরিচয় এখন পর্যন্ত বের করা সম্ভব হয়নি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত তিনজনের পরিচয় জানার চেষ্টা করছে তদন্তকারীরা। গত ২৬ এপ্রিল সেখানে মোট চারজন নিহত হয়।
গুলশান হামলার তদন্ত শেষ করতেও আরও সময় লাগবে। হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় যাদের আসামী করে মামলা করা হয়েছিল তাদের কয়েকজন জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত ও গ্রেফতার হয়েছে। এছাড়াও মামলায় অভিযুক্ত বেশ কয়েকজন এখনো পলাতক।
জঙ্গি সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলোর তদন্ত তদারকি করছেন ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (CTTC) প্রধান মনিরুল ইসলাম। কয়েকটি মামলার তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে দাবি করে সম্প্রতি তিনি বলেন, ‘জঙ্গিদের’ পরিচয় নিশ্চিত হতে ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেতে দেরি হওয়ায় কিছু তদন্তে সময় লাগছে।
গুলশান হামলার তদন্তের এক বছর
গত বছর ১ জুলাই রাতে সশস্ত্র পাঁচ জঙ্গি গুলশানের কূটনীতিক পাড়ায় অভিজাত হলি আর্টিজান বেকারিতে ২০ জনকে জিম্মি করে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে তিন জন বাংলাদেশি, সাত জন জাপানি ও নয় জন ইতালীয় ও এক জন ভারতীয় নাগরিক।
হামলার শুরুর দিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রেস্তোরাঁটির দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে জঙ্গিদের গ্রেনেড ও গুলিতে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত ও আরও ২৯ জন আহত হন।
সকালে কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গি ও ক্যাফের এক কর্মী নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে এই জিম্মি সংকটের অবসান হয়। পরবর্তীতে সেখানকার আরেক কর্মী পুলিশ হেফাজতে মারা যান। ঘটনার পর ওই পাঁচ হামলাকারী ও শেফ সাইফুল চৌকিদারকে (৩৪) আসামী করে সন্ত্রাসদমন আইনে মামলা করে গুলশান পুলিশ।
নিহত জঙ্গিরা হল, নিবরাস ইসলাম (২০), রোহান ইমতিয়াজ (২০), মীর সাবেহ মুবাসের (১৯), খায়রুল ইসলাম পায়েল (২২), শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল (২৬)।
হামলায় সাইফুলের ভূমিকা নিয়ে এখনো পুলিশ তদন্ত করছে। তার পরিবারের দাবি, সাইফুল নির্দোষ।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) শাখা “নব্য জেএমবি” এই হামলার পেছনে ছিল। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আদর্শে উদ্বুদ্ধ এই গ্রুপটি ২০১৫ সাল থেকে হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছিল।
গুলশান হামলার নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এমন পাঁচ জনকে কাউন্টার টেরোরিজম কর্মকর্তারা খুঁজছে। এদের মধ্যে রয়েছে সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান ও হাসিদুর রহমান সাগর ওরফে জয়পুরহাট সাগর। এরা জন্য গ্রেনেড ও আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করেছিল।
আর অন্য দুজন হলেন, “নব্য জেএমবি”-এর অর্থ সংগ্রহকারী বাশারুজ্জামান চকলেট ও সংগঠক রাশেদ।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন ফলের ঝুড়িতে করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও যশোর সীমান্ত দিয়ে হামলার অস্ত্র বাংলাদেশে আনা হয়েছিল।
মনিরুল বলেছেন, তদন্ত সম্পন্ন করার জন্য ভিকটিম ও হামলাকারীদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া দরকার। এখন পর্যন্ত তারা ২০ ভিকটিমের ব্যাপারে প্রতিবেদন পেয়েছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বুধবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ১ জুলাইয়ের মধ্যে তারা হামলাকারীদের ময়না তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারবেন।
Comments