দার্জিলিংয়ে অশান্তির ৬১ দিন, শান্তির কোনও আভাস নেই
দার্জিলিংয়ের চলমান আন্দোলনের ফলে ডাক বিভাগের রেকর্ড সংখ্যক চিঠি আটকে গিয়েছে। গত ১২ জুন থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ভেঙে গোর্খাল্যান্ড নামে পৃথক রাজ্যের দাবিতে সেখানে লাগাতার অবরোধ-হরতালের কর্মসূচি পালন করছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।
আন্দোলনের ৬১ দিনে শুধুমাত্র ডাক বিভাগের কাছেই আটকে রয়েছে ১৭ হাজারের বেশি চিঠি ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র।
বেসরকারি কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের কাছে আটকে থাকা চিঠি-ডকুম্যান্টের সংখ্যা প্রায় দশ গুণ বেশি বলেই জানা গেছে।
এছাড়াও, প্রতিবছর পশ্চিমবঙ্গে রক্তের যোগান আসতো এই পার্বত্য অঞ্চল থেকে। চলমান আন্দোলনের ফলে সেই যোগানও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। প্রতিবছর এই সময় গড়ে ২০ হাজার ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ হতো। ৬১ দিনের আন্দোলনে সংগ্রহ করা রক্তের ব্যাগের সংখ্যা ১০ শতাংশে নেমে এসেছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনেও প্রতিদিন আড়াই লাখ টাকার মাশুল গুনছে রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতর। এছাড়াও, পাহাড়ে ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার আবাসিক হোটেল, এক হাজার রেস্তোরাঁ, এক হাজারের মতো বিপণী বিতান ও প্রায় সাড়ে তিন হাজার পর্যটকবাহী গাড়ি প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা লোকসান করছে।
এসব সমস্যা ছাড়াও প্রতিদিনই সহিংসতার ঘটনায় পুড়ছে সরকারি সম্পদ, বেসরকারি গাড়ি, বাড়ি কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সরকারি-বেসরকারি দাবি অনুযায়ী ৬১ দিনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয়জনে। পাহাড়ে শান্তির লক্ষ্যে টহল দিচ্ছে সেনা, আধা-সেনা এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের বিশেষ বাহিনী।
পশ্চিমবঙ্গের পোস্টমাস্টার জেনারেল অরুন্ধতী ঘোষ জানিয়েছেন, প্রতিনিয়ত চিঠি এসে জমা হচ্ছে। কলকাতা হয়ে আমরা দাজিংলিয়ের সমতল অর্থাৎ শিলিগুড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছি। কিন্তু, পাহাড়ে নিয়ে যেতে পারছি না। শিলিগুড়ির ডাক বিভাগের গোডাউনে স্তূপ হয়ে রয়েছে।
কলকাতার একটি বেসরকারি কুরিয়ারের এরিয়া ম্যানেজার সুপ্রকাশ রাহা জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ বলে পরিচিত যে ছয়টি জেলা রয়েছে এর মধ্যে দার্জিলিং জেলায় প্রতিদিন দুই থেকে পাঁচ হাজার চিঠি আসে। শুধু চিঠিই নয়, প্রয়োজনীয় অনেক জিনিসপত্র এমনকি পণ্যও আসে। গত দুই মাসে আমরা একটি চিঠিও দিতে পারিনি পার্বত্য অঞ্চলে।
রাজ্য সরকারের ব্লাড ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এক কথায় রক্তের আকাল পড়েছে পার্বত্য অঞ্চলে। জরুরি প্রয়োজনে সমতল থেকে রক্ত যোগান দিতে হচ্ছে।
পৃথক রাজ্যের দাবিতে চলমান এই আন্দোলন কবে মিটবে তা এখনও অনিশ্চিত বলে মনে করছেন পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দারাও। পৃথক রাজ্যের দাবি ছাড়া আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। অন্যদিকে, গোর্খাল্যান্ডই তাদের একদফা দাবি বলে অনড় অবস্থান নিয়েছেন গোর্খা নেতা বিমল গুরুং। এদিকে, কেন্দ্রীয় সরকার দুই পক্ষের কাছ থেকে সমান দূরত্ব বজায় রেখে চলছে বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।
পর্যটন শূন্য হয়ে পশ্চিমবঙ্গের সুইজারল্যান্ড বলে পরিচিত দার্জিলিংয়ের অর্থনীতি ক্রমেই ভেঙে পড়ছে। একই সঙ্গে কালিংপঙ, কার্শিয়াংয়ের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও চলছে অকাল ছুটি। দেশ-বিদেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা কেন্দ্রগুলো এখনও শুনশান।
Comments