দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে ঢাকার ওয়াটারবাস সার্ভিস
হাতে একটি বড় ব্যাগ নিয়ে মেহেদি হাসান হাঁটছিলেন সদরঘাট যাওয়ার ওয়াটারবাস সার্ভিসের গাবতলীর ঘাটের দিকে। সময়টা তখন দুপুর। তাঁকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখাচ্ছিল, কেননা কোন নৌযানের দেখা মিলছিল না। ওয়াটারবাসের সময়সূচি জানার জন্য কাউকে খুঁজছিলেন। কিন্তু বিধি বাম, কাউকেই পেলেন না সেখানে।
একজন হকার এই যাত্রীকে বলেন, “কিছুক্ষণ পরে হয়তো একটি ওয়াটারবাস আসবে, তবে কখন আসবে তা ঠিক জানি না।”
এতে গাজীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের এই কর্মচারী মেহেদি আরও বেশি হতাশ হয়ে পড়েন। একা দাঁড়িয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে থাকেন কোন ওয়াটারবাসের দেখা মেলে কিনা।
গত ১৫ নভেম্বর এই প্রতিবেদককে মেহেদি বলেন, “সড়ক পথে যাওয়ার চেয়ে নদীপথে যাওয়াটাকেই আমি বেশি পছন্দ করি। কিন্তু এখন কী করবো বুঝতে পারছি না। আরেকটু অপেক্ষা করবো কী না, জানি না।”
দুপুর আড়াইটার দিকে ছয়জন যাত্রী নিয়ে একটি ওয়াটারবাস ঘাটে এসে ভিড়ে। কিন্তু মেহেদির এই আড়াই ঘণ্টার অপেক্ষা যেন শেষই হচ্ছে না। যাত্রী স্বল্পতার কারণে নৌযানটি সদরঘাটের উদ্দেশ্যে যেতে পারছে না।
অবশেষে, বিকেল চারটার দিকে ৪০জন যাত্রী নিয়ে নৌযানটি যাত্রা শুরু করে এবং বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে সদরঘাটের কাছে বাদামতলী টার্মিনালে এসে থামে।
এই ট্রিপটির মাধ্যমেই ওয়াটারবাস সার্ভিসের বর্তমান অবস্থা বোঝা যায়। এখন সেই সার্ভিস বন্ধের পথে।
দুটি দেশীয়-তৈরি নৌযান নিয়ে ২০১০ সালের আগস্ট মাসে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লুটিসি) এই সার্ভিসটি চালু করে, যেন যাত্রীরা ঢাকা শহরের যানজট এড়িয়ে নৌপথে সহজে চলাচল করতে পারেন। ৩৫ জন যাত্রী পরিবহনের ক্ষমতা সম্পন্ন একেকটি নৌযানের পেছনে সরকার এক কোটি ১০ লাখ টাকা খরচ করেছিল।
মূলত অনিয়মিত যাতায়াতের কারণে কয়েক মাসের মধ্যেই সার্ভিসটি যাত্রীদের কাছে জনপ্রিয়তা হারালে সরকার ২০১৩ সালের জুলাই মাসে তিন কোটি টাকা ব্যয় করে আরও চারটি নৌযান এই সার্ভিসে যোগ করে। ৮২ জন যাত্রী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিটি নৌযানের সংযোজন কোন কাজেই আসেনি।
২০১৪ সালের নভেম্বরে সরকার পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় করে আরও ছয়টি নতুন ওয়াটারবাস যোগ করে। প্রতিটি নৌযানের ধারণক্ষমতা ছিল ৪৬ জন। এ নিয়ে মোট ১২টি নৌযান রয়েছে এই সার্ভিসে।
সার্ভিসটি জনপ্রিয় করতে ব্যর্থ হয়ে বিআইডব্লুটিসি গত বছর জুনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইমরান ট্রেডার্সকে নৌযানগুলো ইজারা দিয়ে দেয়।
গাবতলীতে স্থানীয় অধিবাসী ও যাত্রীরা জানান, এত কিছুর পরও, সার্ভিসটি দিনে দিনে আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
প্রতিদিন যাওয়া-আসা করেন এমন একজন যাত্রী বাবুল আখতার বলেন, “প্রায়ই ইজারাদাররা দিনে মাত্র একটি ট্রিপ দেয়। কোন কোন দিন ট্রিপই দেয় না।”
ইমরান ট্রেডার্সের মালিক আলী আশরাফ বলেন, যাত্রী না পেলে তারা ট্রিপের সংখ্যা কমিয়ে দেন।
দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি জানান, “একটি নৌযানের যাওয়া-আসায় আমাদের তিন হাজার টাকা খরচ হয়, আর আয় হয় ৫০০ টাকার মতো।”
বিআইডব্লুটিসি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন যে সার্ভিসটির উন্নয়নের জন্যে তারা ইজারাদারের সঙ্গে বেশ কয়েকবার সভা করেছেন। তিনি আশা করেন যে দ্রুতই সার্ভিসটির উন্নয়ন হবে।
উল্লেখ্য, একজন যাত্রীকে গাবতলী থেকে বাদামতলী যেতে ৪০ টাকা ভাড়া দিতে হয়।
বিআইডব্লুটিসি কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ১২টি নৌযানের মধ্যে সাতটি গাবতলী-বাদামতলী রুটে যাতায়াত করছে। বাকিগুলো নারায়ণগঞ্জ ও রাঙ্গামাটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
Comments