দেশে প্রথম ফ্লেমিংগো

Flamingo
ভারতের গুজরাতের নাল সারোবর অভয়ারণ্যে একটি ফ্লেমিংগো। ছবি: ইনাম আল হক

শিকারিদের একটি দল গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে যমুনার এক বাঁকে পাঁচটি বড় আকারের ফ্লেমিংগোর ঝাঁক দেখতে পান। শিকারিদের কাছে পরিযায়ী পাখি হত্যা করা একটি আনন্দের বিষয় বটে।

এমন অদ্ভুত লম্বা ঠোঁটের পাখি তাঁরা আগে কখনো দেখেননি। তাই একে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাঁরা মৃত পাখিটিকে নিয়ে এর সঙ্গে ছবিও তোলেন। একটি ছবিতে দেখা যায়, শিকারিদের একজন মৃত পাখিটির ঠোঁট তাঁর মাথার ওপরে তুলে ধরে আছেন আর এর পা রয়ে গেছে মাটিতে। বিষয়টিকে তাঁরা দেখেছেন তাঁদের শিকারের সাফল্যের মুকুটে একটি নতুন পালক হিসেবে।

যেহেতু, নতুন শিকার এই পাখিটিকে তাঁরা নিজেরা সনাক্ত করতে পারেননি। তাই নীরবে সেই ছবিটি পাঠিয়ে দেন তাঁদের পরিচিত এমন একজনকে যিনি এটিকে সনাক্ত করতে পারেন। এভাবেই, দেশের পাখিবিশারদরা জানতে পারেন বাংলাদেশে ফ্লেমিংগোর উপস্থিতি। এর আগে বাংলাদেশে কখনোই এই প্রজাতির পাখি দৃষ্টি গোচর হয়নি।

এমন দারুণ খবরে পাখিপ্রেমীদের উল্লাস করার কথা ছিলো, কিন্তু, মৃত ফ্লেমিংগোকে হাতে ঝুলতে দেখে সবাই একটু দমে যান। আমাদের জলাভূমিতে আর কতগুলো ফ্লেমিংগো মানুষের গুলির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে এখন সেটাই জানার বিষয়।

এরপর গেল বসন্তে, পাখিপ্রেমীরা কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপে একটি ফ্লেমিংগোর ছবি তুলেন। এতে দেখা যায়, মাতারবাড়ি এলাকায় কুহেলিয়া প্রণালীর ভেজা মেঠো তীরে খাবার সংগ্রহ করছে পাখিটি। একসময় এই জায়গাটিতে হরেকরকম পাখির বসবাস ছিলো।

এই নিঃসঙ্গ পাখিটি হয়তো যমুনায় দেখতে পাওয়া সেই ঝাঁকেরই একটি। অথবা, এই তরুণ পাখিটি এবারই প্রথম বাংলাদেশ ভ্রমণে এসেছে। ভারতের উড়িষ্যার চিলিকা হ্রদ হচ্ছে গ্রেটার ফ্লেমিংগোর প্রজনন ক্ষেত্র। হয়তো, এদেশে নতুন প্রজনন ভূমি খুঁজতে এসেছে তারা। আমরা জানি যে, বিভিন্ন প্রজাতির তরুণ পাখিরা খাবার জোগাড় করতে নতুন নতুন জায়গা খুঁজে বেড়ায়।

যদিও গ্রেটার ফ্লেমিংগো ভারতের গুজরাত, রাজস্থান এবং উড়িষ্যা প্রদেশে বসবাস করে কিন্তু, বাংলাদেশে এদের উপস্থিতি আগে কখনো দেখা যায়নি। ১৯৬৭ সালে অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (আজকের বাংলাদেশ) গ্রেটার ফ্লেমিংগো দেখতে পেয়েছিলেন এবং সেই হিসেবে ১৯৮২ সালের রিপ্লে গাইডে বাংলাদেশে ফ্লেমিংগোর উপস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়। একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মাধ্যমে হলোও অবশেষে সে কথার প্রমাণ পাওয়া গেলো।

বিভিন্ন কারণে ফ্লেমিংগোকে একটি অদ্ভুত প্রকৃতির পাখি বলা যেতে পারে। পা পাঁচ ফুট লম্বা হলেও এদের গড় ওজন মাত্র তিন কিলোগ্রাম। কবুতরদের মতো এরা বাচ্চাদের কচি শস্যের দানা খাওয়ায়। সঠিক শেওলা ও প্ল্যাঙ্কটন খেতে পেলে বাচ্চাগুলোর সাদা পালকের রং পাল্টে গোলাপি থেকে ক্রমে বদলে গাঢ় লাল হয়ে যায়। এ প্রজাতির পাখিগুলো ৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। ঝাঁক বেঁধে চলতে ভালোবাসে এরা। সারা পৃথিবীতে ছয় প্রজাতির ফ্লেমিংগোর দেখা পাওয়া যায়। এশিয়া এবং ইউরোপে রয়েছে গ্রেটার ফ্লেমিংগো। এছাড়াও, আফ্রিকায় একপ্রকার ও আমেরিকায় চার প্রকারের ফ্লেমিংগো দেখা যায়। কিন্তু, অস্ট্রেলিয়ায় কোনো ফ্লেমিংগো পাওয়া যায় না।

শিকারিরা জানতেন না যে তাঁরা যে পাখিটিকে হত্যা করেছেন তা এদেশে দুর্লভ। তাঁদের প্রতি আমাদের পরামর্শ যদি কোন পাখিকে চিনতে না পারেন, তাহলে আর যাই হোক একে হত্যা করবেন না। সেগুলোর ছবি তুলে রাখুন। এটি আপনাকে একদিন বিখ্যাত করে তুলতে পারে। মনে রাখবেন, বাংলাদেশে পাখি শিকার নিষিদ্ধ। এর জন্যে জেল-জরিমানা হতে পারে।

 

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English
Nat’l election likely between January 6, 9

EC suspends registration of AL

The decision was taken at a meeting held at the EC secretariat

6h ago