দেশে ফিরলো ওরা দশজন…
ওদের কেউ ভারত ঘুরে দেখার জন্য ঢুকে পড়েছিল সীমান্তের কাঁটাতার টপকে, পড়েছিল সীমান্ত প্রহরীর হাতে ধরাও।
আবার কেউ শাহরুখ-সালমান-দীপিকাকে দেখার সুযোগ পেতে কিংবা কাজের লোভে দালালের সঙ্গী হয়ে ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে হয়েছিল আটকও। আবার কেউ আজমীর শরীফে খাজা মঈনুদ্দিন চিশতীর দরগা দেখার জন্যে এসে ধরা পড়ে গিয়েছিল স্থানীয় পুলিশের হাতে - বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার এমনই দশজন কিশোর আজ নিজের দেশে, বাবা-মায়ের বুকে ফেরার সুযোগ পেয়েছে।
আমাদের পশ্চিমবঙ্গ প্রতিনিধি জানান, আজ সকাল দশটায় পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট মহকুমার হিলি সীমান্ত দিয়ে আটক কিশোরদের বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির হাতে হস্তান্তর করা হয়।
ভারতের চাইল্ড লাইনের সম্পাদক সুরজ দাস এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, “এই দশ বাংলাদেশি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটের শুভায়ন হোমে আশ্রিত ছিল। দুই দেশের সরকার, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যস্থতায় আটক হওয়ার দেড় বছর পর তাদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে।
কিশোরদের হস্তান্তরের সময় ভারতের হিলি ইমিগ্রেশনের ওসি নাজির হোসেন, শুভায়ন হোমের পক্ষে পরেশ হাজরা, জেলা শিশু সুরক্ষা ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবোধ দাস, বাংলাদেশের হিলি সীমান্তের ওসি আফতাব হোসেন এবং বিএসএফ-বিজিবির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন বলে এই প্রতিবেদকে নিশ্চিত করেন সুরজ দাস।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পুলিশ জানিয়েছে, ফেরত পাঠানো দশ কিশোর হচ্ছে, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নীলগঞ্জের বাসিন্দা হানিফ হোসেনের ছেলে রাওয়াল হোসেন, পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জের প্রামাণিক পাড়ার হোসেন আলির ছেলে সুযোগ ইসলাম, দিনাজপুরের হাকিমপুরের ডঙাপাড়া-খাসুড়ির রুস্তম আলির ছেলে রহমান কবির, একই জেলার কালীগঞ্জ গ্রামের মুহম্মদ হাকিমের ছেলে মুহম্মদ সুজন, ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জের কাস্তর গ্রামের মনছুর আলির ছেলে মুকিদুল ইসলাম, জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার কালাইকাজীপাড়ার বাসিন্দা লতিফুর রহমানের ছেলে জুয়েল কাজী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার চর খালিপুরের আব্দুল রহিমের ছেলে সোহেল রানা, একই জেলার আব্দুল রহিমের ছেলে মঞ্জুরুল ইসলাম ও আব্দুল খালেকের ছেলে অসীম আকরাম এবং পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার কদমতলি গ্রামের বাসিন্দা শহিদ খানের ছেলে এনামুল হক।
দক্ষিণ দিনাজপুর চাইল্ড লাইনের সম্পাদক সুরজ দাস আরও বলেন, বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়া কিশোরদের মধ্যে সবচেয়ে কম আট বছর বয়সে ভারত দেখতে এসে ধরা পড়েছিল এনামুল হক। চার বছর হোমে পড়াশোনাও করেছে সে।
মুহম্মদ সুজন দিল্লি ও মুম্বাইয়ের কাজের সুযোগে বলিউডের নায়ক-নায়িকাদের দেখবে- এমনটি ভেবে দালালের সঙ্গে কাজের সন্ধানে সীমান্ত টপকে ছিল। আবার কিশোর অসীম আকরাম বাড়ি থেকে না বলে আজমীর শরীফে খাজা মইনুদ্দিন চিশতীর দরগা জিয়ারত করতে এসে ধরা পড়েছিল।
এদিকে, আমাদের দিনাজপুর সংবাদদাতা জানান, ফেরত আসা ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী কিশোররা বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিল।
বাংলাদেশের হিলি সীমান্তের ওসি আফতাব হোসেন বলেন, “ফেরত আসা ১০ জন কিশোরের মধ্যে সাতজনকে ইতোমধ্যেই তাদের মা-বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
Comments