`নিজেও ছবি আঁকি’

বাংলাদেশে পোরট্রেট ফটোগ্রাফির কথা বললে যে ফটোগ্রাফারের নাম প্রথমেই মনে করতে হয় তিনি ‘ক্যামেরার কবি’-খ্যাত নাসির আলী মামুন। পোরট্রেট ছবি তোলা ছাড়াও তিনি বিখ্যাত-অখ্যাত যে কোন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিতে পছন্দ করেন।
Nasir-Ali-Mamun
নাসির আলী মামুন (মাঝে), কবি শামসুর রাহমান (ডানে) এবং ওস্তাদ বাহাদুর হোসেন খান, ছবি: ফটোজিয়াম

বাংলাদেশে পোরট্রেট ফটোগ্রাফির কথা বললে যে ফটোগ্রাফারের নাম প্রথমেই মনে করতে হয় তিনি ‘ক্যামেরার কবি’-খ্যাত নাসির আলী মামুন। পোরট্রেট ছবি তোলা ছাড়াও তিনি বিখ্যাত-অখ্যাত যে কোন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিতে পছন্দ করেন।

এছাড়াও, “বিখ্যাত লোকদের হাত দিয়ে ছবি আঁকিয়ে নেই। নিজেও ছবি আঁকি।”

পোরট্রেট ছাড়া আর কিছুই তুলেননি যে কবি তাঁর তোলা পোরট্রেট নিয়ে একটি প্রদর্শনী চলছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ৪ নং গ্যালারিতে, ছবিমেলার অংশ হিসেবে।

“প্রায় ২০ বছর পর অনেকের পোরট্রেট দিয়ে একটা প্রদর্শনী হচ্ছে। ১৯৯৭ সালে এরকম একটা প্রদর্শনী হয়েছিল বাংলা একাডেমিতে। এর আগে ১৯৭৭ সালে ওরাই ওখানেই আমার প্রথম প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল।”

১৯৭২ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত – এ ১০ বছরের কাজ থেকে বাছাই করা কিছু পোরট্রেট নিয়ে এই প্রদর্শনীর আয়োজন। এখানে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাদার তেরেসা, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানী, কবি জসীমউদ্দিন, শিল্পী এসএম সুলতান, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, লোকসংগীতশিল্পী খালেক দেওয়ান, শিল্পী ভূপেন হাজারিকা, কবি শামসুর রাহমান, কবি আল মাহমুদ ও অভিনেতা গোলাম মোস্তফাসহ আরো অনেকের পোরট্রেট। প্রদর্শনীটিতে ৭০টি ছবি রয়েছে।

“বঙ্গবন্ধুর এই ছবিটা ১৯৭৩ সালে তোলা। তিনি তখন ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে, কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলনে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। এমএজি ওসমানীর ছবিটা ১৯৭৪ সালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে তুলেছিলাম। মাদার তেরেসার ছবিটা তুলেছিলাম ঢাকায়, তেজগাওঁয়ের গির্জায় ১৯৮১ সালে।”

“দুই হাত প্রসারিত করে তেরেসার পথ আগলে রেখেছিলাম। পাঁচ মিনিট সময় চেয়েছিলাম। উনি বিরক্ত হয়েছিলেন তবে সময়ও দিয়েছিলেন।”

নাসির আলী মামুন প্রথম ছবি তোলেন ১৯৬৬ সালে। “একটা স্টুডিও থেকে ক্যামেরা ধার করে নিয়ে বড় ভাই সাইফ আলী খান জুন মাসের এক সকালে ধানমন্ডি লেকের পাশে আমার ছবি তুলেছিলেন। এরপর আমি বড় ভাইয়ের ছবি তুলি। তখন আমি ধানমন্ডি সরকারি বালক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়তাম।”

“১৯৭৪ সালে প্রথম ক্যামেরা কিনি, নিউ মার্কেট থেকে। পেট্রি ক্যামেরা, ৪৫০ টাকা দাম ছিল। পরে ৬৫০ টাকা দিয়ে কোয়া ক্যামেরা কিনি।”

“পরিবার থেকে কোন সাপোর্ট ছিল না। তাঁরা উৎসাহ দিতেন না আবার বাধাও দিতেন না। মা-বাবা, ভাই-বোনদের ছবি তুলতাম। আমার স্ত্রী নাজমা সমর্থন দিয়েছেন। নাজমার অনেক ছবি তুলেছি। ছেলে অন্যতমের ছবিও তুলেছি।”

এখন পর্যন্ত মোট ৫৭টা প্রদর্শনী হয়েছে নাসির আলী মামুনের। যুক্তরাষ্ট্রে ও যুক্তরাজ্যে একটা করে প্রদর্শনী হয়েছিল। ভারতে আয়োজন করা হয়েছিল দুটি প্রদর্শনীর।

“আমাদের সেই সময়ে দেশে প্রধান আলোকচিত্রী ছিলেন আমানুল হক, নায়েবউদ্দিন আহমেদ, ড. নওজেশ আহমেদ, এমএ বেগ, আনোয়ার হোসেন, রশীদ তালুকদার, হারিস উদ্দিন, গোলাম মাওলা, শামসুল ইসলাম আল মাজিদ প্রমুখ। তবে তাঁদের কারো কাজ আমাকে প্রভাবিত করেনি।”

“আমি কাজ করেছি পোরট্রেট নিয়ে। যে ছবিতে প্রাণ আছে সেটাই পোরট্রেট। দেশে আমি তা শুরু করি। যে ইমেজ পাঠ করা যায়, যে ছবিতে সৃষ্টিশীল রচনা আছে তাই পোরট্রেট। পোরট্রেট করা খুব কঠিন কাজ। ছবিগুলো একটু অন্যরমক হতে হয়।”

নাসির আলী মামুনের ছবিগুলো একটু অন্যরকমই বটে। তিনি তাঁর পোরট্রেটগুলোতে খেলা করেন আলো-অন্ধকার ও সাদা-কালো নিয়ে। “আমার অতৃপ্তি বা বেদনাগুলো এবং যাঁদের পোরট্রেট তুলি তাঁদের জীবন – এ দুই মিলে আমার তোলা ছবিগুলো এতো অন্ধকার থাকে।”

নিজের তোলা ছবি এবং সংগৃহীত স্মারকগুলো নিয়ে একটা জাদুঘর করার প্রচেষ্টা মামুনের। “একটি ফটোগ্রাফি ভিত্তিক মিউজিয়াম – ফটোজিয়াম করবো। ফটোজিয়ামের বীজ বপণ করেছি। এখনো পরিণত হয়নি। ছোট্ট চারা মাত্র। ফুল, ফল না হওয়া পর্যন্ত সফল বলা যাবে না।”

“অনেক টাকা প্রয়োজন। যদি কোন সুহৃদ সহযোগিতা করেন তাহলে হয়তো একটু সহজ কবে।”

শিল্পকলা একাডেমিতে নাসির আলী মামুনের প্রদর্শনীটি চলবে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

5h ago