বেনাপোল-পেট্রাপোল দিয়ে ২৪ ঘণ্টার সীমান্ত বাণিজ্য
বাংলাদেশ ও ভারতের বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ১ আগস্ট থেকে দিনরাত ২৪ ঘণ্টার পণ্য আমদানি-রফতানি পরিষেবা চালু হচ্ছে। এতো দিন সপ্তাহে শুক্রবার ছাড়া বাকি ছয়দিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাক দুই দেশে আসা-যাওয়া করতো।
নতুন নিয়মে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সীমান্ত-বাণিজ্য চালু থাকবে। ফলে সীমান্তে পণ্য জট কমবে। কমবে আমদানি-রফতানি হওয়া পণ্যের দামও।
ভারতীয় শুল্ক দফতরের ডেপুটি কমিশনার (পেট্রাপোল) রাহুল মাহাতো এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
একে দুই দেশের সরকারের যৌথ উদ্যোগের একটি বড় সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতের মতো বাংলাদেশও ১ আগস্ট থেকে ২৪ ঘণ্টার বাণিজ্য চালু করতে প্রস্তুতি শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বেনাপোলে নিযুক্ত বাংলাদেশের শুল্ক দফতরের ডেপুটি কমিশনার শাকিলা পারভিন গত ২৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শেষ করার কথা জানিয়েছিলেন ভারতের শুল্ক দফতরের ডেপুটি কমিশনার রাহুল মাহাতোকে।
এর আগে বেশ কিছু দিন আগে দুই দেশের সরকার সীমান্তের ২৪ ঘণ্টার বাণিজ্য চালুর বিষয়টি চূড়ান্ত করে। তবে ২৪ ঘণ্টার বাণিজ্য চালু করতে উভয় দেশের সীমান্তের অবকাঠামোগত বিষয়গুলোই বড় সমস্যা। তাই সেগুলোকে আগে দ্রুততার সঙ্গে উন্নয়ন করার জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নিয়মিত চাপ দেওয়া শুরু হয় জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে। তারই ফলাফল, যুদ্ধকালীনভাবে মাত্র এক মাসে মধ্যে ২৪ ঘণ্টার সীমান্ত বাণিজ্য শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তের কর্মরত উভয় দেশের শুল্ক দফতর।
নতুন এই পদ্ধতিতে খুশি আমদানি-রফতানিকারক থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষই। বিশেষ করে সময়ের কারণে দুই দেশের সীমান্তের দুই অংশে হাজার হাজার ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকায় তা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। তাই ২৪ ঘণ্টার সীমান্ত বাণিজ্য চালু হলে আপাতত সেই সমস্যা মিটে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পেট্রাপোলের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়াডিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠনের নেতা কার্তিক চক্রবর্তী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, “দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটি একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছি আমরা। সময়ের জন্য প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছিল। গড়ে ৩৫০টি ট্রাক ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে, বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে আসে ১৫০ থেকে ২০০টি ট্রাক। কিন্তু, এর বাইরে দুই থেকে আড়াই হাজার ট্রাক পণ্য নিয়ে সীমান্তের উভয় পাশেই দাঁড়িয়ে থাকে, সিরিয়াল না পেয়ে। ২৪ ঘণ্টার সীমান্ত বাণিজ্য শুরু হলে এই সমস্যা খুব দ্রুত মিটে যাবে।”
কলকাতার শীর্ষস্থানীয় একজন আমদানি-রফতানিকারক অতুল চন্দ্র দাস মনে করেন, “দেরিতে হলেও দুই সরকার দুই দেশের বাণিজ্যের স্বার্থে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে আর যাই হোক, সীমান্তের পণ্য জট কমবে। এই মুহূর্তে পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি-রফতানি করতে চাইতেন না। কারণ পচনশীল পণ্য ছাড়া বাকি পণ্যগুলোকে এপার-ওপার করতে এক সপ্তাহ থেকে পনেরো দিন পর্যন্ত পার্কিং নিয়ে অপেক্ষা করতে হতো। প্রতিদিন ট্রাক পিছু পার্কিং দিয়ে খরচ করতে হয় গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার রুপি। এই বাড়তি মূল্য কার্যত দুই দেশের ক্রেতাদের ওপরই চাপতো। সীমান্তের চলমান সমস্যা মিটে গেলে আমদানি-রফতানি হওয়া পণ্যের দাম কমবে।”
কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসের প্রথম সচিব (বাণিজ্য) সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাঁকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।
তবে উপদূতাবাস সূত্র জানাচ্ছে, বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে কথা শেষ হয়। বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও নিবিড় করতেই দুই দেশের সরকার যৌথভাবে পেট্রাপোল-বেনাপোল স্থলসীমান্তে ২৪ ঘণ্টার সীমান্ত বাণিজ্য চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
Comments