মাছের পর এবার হাকালুকি হাওরে মরছে হাঁস

আকস্মিক বন্যায় হাকালুকি হাওরের ধান নষ্ট হওয়ার পর মাছ মরে যাওয়ার ঘটনা ছিল সেখানকার মানুষদের জন্য মরার উপর খাড়ার ঘা। কিন্তু স্থানীয় মানুষদের দুর্দশা এখানেই শেষ হয়নি। এবার হাওরে মরছে হাঁস।
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে হাকালুকি হাওরের পাশের অনেক মানুষের জীবিকা হাওরে হাঁস পালনের ওপর নির্ভরশীল। হাওরে বিচরণ করা এমন শত শত হাঁস মরা গেছে।
মাইজবাগ এলাকার কামালউদ্দিন গত ১০ বছর ধরে হাঁস পালন করেন। তিনি জানান, এমনটা আগে কখনই ঘটতে দেখেননি তিনি। পানিতে সবখানে মরা হাঁস ভাসছে। তার ১৫০টি হাঁসের সবগুলোই মরে গেছে।
পাশের ঘিলাছাড়া গ্রামের আরেকজন খামারি আব্দুল কাইয়ুমের ২৫০টি হাঁস ছিল। কামালউদ্দিনের মত তারও সব হাঁস মরে গেছে। তিনি বলেন, প্লেগের মত হাঁসগুলো মরে গেল। ডিম বিক্রি করে সংসার চলত।” হাঁস হারিয়ে এখন আয়ের আর কোন উপায় নেই তার।
ফেরিঘাটের আনোয়ার মিয়ারও একই অবস্থা। হাঁস পালন করে গত দুই বছরে সচ্ছলতার মুখ দেখেছিলেন। ৩০০ হাঁস মরে তার অবস্থা এখন দুই বছর আগে যেমন ছিল তেমনই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধপাকা ধান ও মাছ পচে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাদের আশঙ্কা, হাওরের মরা মাছ বা হাঁস খেলে মানুষেরও স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
সিলেটের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর ড মামুনুর রশিদ বলেন, বন্যার পানিতে আধপাকা ধান পচে পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। হাঁসের মৃত্যুর কারণ এটাই।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগের প্রধান ড নাসরিন সুলতানাও হাঁস ও মাছের মৃত্যুর জন্য বিষক্রিয়াকেই দায়ী করেছেন। তার মতে ধান পচে এটা হয়েছে।
তিনি বলেন, “মরা মাছ বা হাঁস খেলে মানুষের বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষতি হতে পারে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের সভাপতি ড মো শাহাবউদ্দিন বলেন, পচা মাছ থেকে বের হওয়া অ্যামোনিয়ায় হাওরের পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে। মরা মাছ বা পাখি কেউ যেন কোন অবস্থাতেই খেতে পারে তার জন্য নজর রাখা দরকার।
চুন ছিটিয়ে পানি শোধন
হাওরের দূষিত পানি শোধনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, মানুষকে মাছ ধরা থেকে বিরত রাখতে মাইকে প্রচার চালানো হচ্ছে। পানি শোধনে চুন মেশানোর কাজ চলছে।
কুলাউড়া উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পানির বিষক্রিয়া কমাতে তাঁরা এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৩০০ কেজি চুন ব্যবহার করেছেন।
Comments