লেখার চেয়ে আনন্দ পৃথিবীতে অন্য কিছুতে নেই

চলছে অমর একুশে বইমেলা। প্রতিদিন মেলায় আসছে নতুন বই। এর মধ্যে অনন্যা থেকে প্রকাশ হয়েছে কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের  'অচিন ফুলের গন্ধ'। তার বহুল পঠিত উপন্যাস 'নূরজাহান'। নতুন বই ও নিজের লেখালেখি  নিয়ে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

চলছে অমর একুশে বইমেলা। প্রতিদিন মেলায় আসছে নতুন বই। এর মধ্যে অনন্যা থেকে প্রকাশ হয়েছে কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের  'অচিন ফুলের গন্ধ'। তার বহুল পঠিত উপন্যাস 'নূরজাহান'। নতুন বই ও নিজের লেখালেখি  নিয়ে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

নতুন বই 'অচিন ফুলের গন্ধ' কী নিয়ে? একটি পূর্ণাঙ্গ বইতে আপনি কত সময় নেন?

ইমদাদুল হক মিলন :  গত দুই আড়াই বছরে লেখা ১০টি গল্প সংকলিত হয়েছে 'অচিন ফুলের গন্ধ' বইতে। জীবনের নানা দিক, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ, মুক্তিযুদ্ধ, বীরাঙ্গনা এরকম বিভিন্ন বিষয় স্থান পেয়েছে গল্পগুলোতে। 

একেকটা বই লিখতে একেক রকম সময় লাগে। আগে হুটহাট করে  লিখে ফেলতাম। ৭-১০দিনেও চার পাঁচ ফর্মার উপন্যাস লিখেছি। এখন আর সেভাবে লেখা হয় না। অনেক সময় লাগে। কোনও কোনও গল্প লিখতেও ১৫-২০ বা ১মাস সময়ও লেগে যায়।

কথাশিল্পী হিসেবে চরিত্র কিভাবে নির্মাণ করেন, চারপাশ থেকে নেন না কল্পনার আশ্রয়?

ইমদাদুল হক মিলন : কল্পনা ও বাস্তবের মিশ্রণে সাহিত্য সৃষ্টি হয়। দেখা বা পরিচিত চরিত্রের সঙ্গে লেখকের ভাবনা ও জীবনদর্শন মিলিয়ে চরিত্র তৈরি হয়। ধরুন, আমার 'পরাধীনতা' উপন্যাসটির কথা। প্রবাসী বাঙালি শ্রমিকদের নিয়ে সম্ভবত বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম উপন্যাস 'পরাধীনতা'। 

উপন্যাসটি আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লেখা। চরিত্রগুলো চেনা। প্রধান চরিত্রের অনেকখানির সঙ্গে আমার মিল। অনেকখানি মানে সবখানি নয়। ওই যে বললাম, বাস্তবের সঙ্গে কল্পনার মিশেল। আমার বহু লেখা আছে, যে লেখার চরিত্রগুলো আমার চেনা। আবার কোনও কোনও লেখা আছে, যে সব লেখার চরিত্রগুলো কাল্পনিক। কাল্পনিক হলেও তাদেরকে বাস্তব ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোই লেখকের কাজ। আর অবাস্তব চরিত্র পাঠক সাধারণত গ্রহণ করেন না।

আপনরা আলোচিত উপন্যাস 'নূরজাহান' লিখতে প্রস্ততি কেমন ছিল, ঢাকার বাইরে কলকাতায় বইটির মূল্যায়ন কতটা?

ইমদাদুল হক মিলন : 'নূরজাহান' তিন পর্বের উপন্যাস। সব মিলিয়ে প্রায় ১২০০ পৃষ্ঠা। ভেঙে ভেঙে লিখেছি। ১৮ বছর লেগেছে শেষ করতে। বইটির প্রথম পর্ব ঢাকার আগে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৯৫ সালের আগস্ট মাসে প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয় 'আনন্দ পাবলিশার্স' থেকে। কয়েক মাসের মধ্যে দ্বিতীয় সংস্করণ হয়। ৮ হাজার কপি বিক্রি হয়ে যায় কয়েক মাসের মধ্যে। যখন তৃতীয় মুদ্রণ বের হয়, তার আগেই ঢাকা থেকেও প্রকাশিত হয়। বইটি পাঠক সাদরে গ্রহণ করেছে। যারা 'নূরজাহান' বইটির খবর রাখেন, তারা জানেন উপন্যাসটি বাস্তব ঘটনা নিয়ে লেখা। 

কথিত ফতোয়া বিরোধী উপন্যাস। প্রথম পর্ব ১৫-১৬টি মুদ্রণ হয়েছে। এখনকার মতো ৩০০/৫০০ কপির সংস্করণ নয়। ৪০০০/৫০০০হাজার কপির সংস্করণ। দ্বিতীয়, তৃতীয় পর্বও এমন। ঢাকা থেকে 'প্রথম অখণ্ড সংস্করণ' প্রকাশিত হলো ২০১২ সালে। সেই সংস্করণেরও বেশ কয়েকটি মুদ্রণ হয়েছে। কলকাতার 'আনন্দ পাবলিশার্স' 'নূরজাহান অখণ্ড সংস্করণ' প্রকাশ করলো ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে। ২০১৭ সালের অক্টোবরের মধ্যে ৩টি মুদ্রণ হলো। এখন চতুর্থ মুদ্রণের ছাপার কাজ চলছে।
 
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই উপন্যাসটির ব্যাপারে আগ্রহী পাঠকদের অনেক ফোন পাই। ইউরোপ আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া কানাডা জাপান মধ্যপ্রাচ্য অর্থাৎ যে সব দেশে প্রচুর বাঙালি বসবাস করেন, তারাও অনেকে ফোন করেন। 'নূরজাহান' নিয়ে কথা বলেন। লেখক হিসেবে এ আমার বড় প্রাপ্তি।

লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতায়ও করেছেন। স্বস্তিবোধ করেন কোন মাধ্যমে?

ইমদাদুল হক মিলন : আমি 'কালের কণ্ঠ'র সম্পাদক ছিলাম টানা সাড়ে দশ বছর। কাজটা আনন্দ নিয়ে করেছি। ঠিক সেই অর্থে সাংবাদিকতার ব্যাকগ্রাউন্ড আমার ছিল না। ভেঙে ভেঙে ২-৩টি পত্রিকায় কাজ করেছি। সেই সব অভিজ্ঞতা সম্পাদক জীবনে কাজে লেগেছে। তাতে খ্যাতি কতটা অর্জন করেছি জানি না। তবে কাজটি সততার সঙ্গে করবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাকে যদি এমন প্রশ্ন করা হয় যে, 'সম্পাদক' না 'কথাসাহিত্যিক', কোন জীবনটা আপনার অধিক স্বস্তিকর বা আনন্দদায়ক। আমি বলবো, 'কথাসাহিত্য'ই আমার মূল জায়গা। লেখার টেবিলে বসে গল্প বা উপন্যাস লেখার চেয়ে আনন্দ এই পৃথিবীতে আমার অন্য কিছুতে নেই।

আপনার পড়া কোন বইয়ের চরিত্র এখনো ভাবায়?

ইমদাদুল হক মিলন : ভাবাবার মতো চরিত্র অনেক। বাংলা উপন্যাসের কয়েকটি চরিত্রের মধ্যে প্রথমেই বলবো মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'পুতুল নাচের ইতিকথা'র 'কুসুম' ও 'শশী' চরিত্রের কথা। 'পদ্মানদীর মাঝি' উপন্যাসের 'কুবের', 'কপিলা' ও 'হোসেন মিয়ার' চরিত্র। 'প্রাগৈতিহাসিক গল্পে'র 'ভিখু' চরিত্র। 'কবি' উপন্যাসের 'নিতাইচরণ'। 'ঢোঁড়াই' চরিত মানস' উপন্যাসের 'ঢোঁড়াই'। 'হাঁসুলি বাঁকের উপকথা'র 'কড়ালি' এই সব চরিত্র মাঝে মাঝেই ভাবায়।  

Comments