সোলার ল্যাম্পের আলোয় আলোকিত জীবন

নিজেদের সোলার ল্যাম্প হাতে বীণাপাণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছবি: দীপঙ্কর রায়

সুন্দরবনের পাশের গ্রামগুলোর শিশুদের জীবনে বাঘ আর রাতের অন্ধকার বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তাদের কল্পনার রাজ্যে শুধু বাঘের গল্পই নয় বনের অন্ধকারও অপার রহস্যময়। কারণ সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে যত উপকথা প্রচলিত রয়েছে সেগুলোর প্রায় প্রত্যেকটাই শুরু হয় দিনের আলো নিভে এলে। কিন্তু একই অন্ধকার বাচ্চাদের স্কুলের হোম ওয়ার্কের জন্য আপদে পরিণত হয়।

মংলার পশুর নদীর পাশের গ্রাম পশ্চিম খাজুরিয়া। এখানকার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিতালি বর্মণকে সন্ধ্যায় পড়ালেখা করতে হলে প্রায়ই পাশের বাড়িগুলোতে সোলার ল্যাম্পের খোঁজে যেতে হত। তার দিনমজুর বাবা মনোরঞ্জন কেরোসিনের বাতি বা বইপত্রের খরচ কোনটাই বহন করতে পারেন না।

গ্রামের বীণাপাণি সরকারি প্রাথমিক স্কুলটিকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের গরীব পরিবারের ছেলে-মেয়েরা এই স্কুলটিতে পড়ালেখা করে।

স্কুলের শিক্ষকরা জানান, স্কুলের ছাত্রদের তীব্র অর্থকষ্টে থাকতে হয়। এদের অনেকেরই পরিবারের আয়ের উৎস দিনমজুরি ও মাছ ধরা। কেরোসিনের বাতির ব্যবস্থা করতে না পারায় অনেক পরিবারেই দেখা যায় সন্ধ্যা হতে না হতেই রাতের খাবার খেয়ে ফেলে। গ্রামের বেশিরভাগ শিশু নিয়মিত স্কুলে আসলেও মিতালির মতই আলোর অভাবে রাতের বেলা অনেক কষ্টে পড়ালেখা করতে তাদের।

স্কুলের ছাদে স্থাপন করা সোলার প্যানেল। ছবি: দীপঙ্কর রায়

কিন্তু আশার কথা হলো, পরিস্থিতি দিন দিন পাল্টাচ্ছে। কোরিয়ার গ্রিন ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটিসহ পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন বেশ কয়েকটি সংস্থা শিক্ষার্থীদের মাঝে সোলার ল্যাম্প বিতরণ করেছে। সৌরশক্তিতে চলা এই ল্যাম্পগুলো রিচার্জ করার জন্য স্কুলের ছাদে বসানো হয়েছে সোলার প্যানেল। পশ্চিম খাজুরিয়া গ্রামের শিক্ষার্থীরা এখন প্রতিদিন নিজেদের ল্যাম্প সাথে নিয়ে স্কুলে যায় ও রিচার্জ করে স্কুল থেকে ফেরার সময় আবার সাথে করে নিয়ে আসে। আর এই কাজটি বেশ গর্বের সাথেই করে তারা।

মিতালির বলে, “একটি সোলার ল্যাম্প আমার জীবনে কতটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছে ও আমাদের পরিবারের দৈনন্দিন বোঝা কতটা সহজ করে দিয়েছে তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।”

মিতালির ক্লাসের বন্ধু সুচিত্রা শীল, আকাশ বর্মণ ও দীপক মণ্ডলেরও সোলার ল্যাম্প নিয়ে একই রকম অভিজ্ঞতা। সন্ধ্যা বেলা বাধাহীনভাবে পড়তে পারা বা পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার যে আনন্দ ও আত্মবিশ্বাস তা দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলার সময় তাদের চেহারায় ফুটে ওঠে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক ঝর্ণা মণ্ডল বলেন, “স্কুল শেষ করার পর আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা হোমওয়ার্ক করার জন্য তেমন একটা সময় পেতো না। কিন্তু এখন তারা সেটা করতে পারছে। ক্লাসে উপস্থিতির ব্যাপারে তাদের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে। সেই সঙ্গে পরীক্ষাতেও ভালো করছে তারা।”

পশ্চিম খাজুরিয়া যে ইউনিয়নের মধ্যে অবস্থিত সেখানে প্রায় দেড় হাজার সোলার ল্যাম্প বিতরণ করা হয়েছে। বানিসান্তা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুদেব কুমার রায় বলেন, সোলার ল্যাম্প শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ালেখার আগ্রহ বাড়িয়ে তুলেছে। এতে তাদের বাবা-মায়েরাও খুশি। মিতালির বাবাও এই একই অভিজ্ঞতা।

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago