৫৭ ধারায় প্রথম আলোর প্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলা

​দৈনিক প্রথম আলোর হাজীগঞ্জ প্রতিনিধি মোহাম্মদ শাহজাহানের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) ধারাসহ ৫০১/৩৪ ধারায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি গত রবিবার চাঁদপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এবং গত ২২ মে হাজীগঞ্জ থানায় অপর মামলাটি দায়ের হয়। একই অভিযোগে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হায়দার চৌধুরীকেও মামলাগুলোতে বিবাদী করা হয়েছে।

দৈনিক প্রথম আলোর হাজীগঞ্জ প্রতিনিধি মোহাম্মদ শাহজাহানের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) ধারাসহ ৫০১/৩৪ ধারায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি গত রবিবার চাঁদপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এবং গত ২২ মে হাজীগঞ্জ থানায় অপর মামলাটি দায়ের হয়। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হায়দার চৌধুরীকেও মামলাগুলোতে বিবাদী করা হয়েছে।

মামলার বাদী আনোয়ার হোসেন ও মো. ফরহাদ হোসেন অভিযোগে উল্লেখ করেন, গত ১৬ মে প্রথম আলো পত্রিকায় ‘হাজীগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম স্থগিত’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে বলা হয়, স্থানীয় একজন মুক্তিযোদ্ধার রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট হাজীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। রিটকারীর বক্তব্য, এ পর্যন্ত দুবার হাজীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের কমিটি গঠন করা হলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম মজুমদারের অবহেলায় যাচাই-বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন হয়নি।

এই খবরকে মিথ্যা দাবি করে আনোয়ার হোসেন ও মো. ফরহাদ হোসেন নামের দুজন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলাগুলো করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, এই খবরের কারণে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, সচেতন নাগরিক ও জনগণ মর্মাহত ও বিক্ষুব্ধ হয়েছেন।

এক মামলার বাদী ফরহাদ হোসেন বলেন, সংসদ সদস্যের পক্ষে তিনি মামলাটি করেছেন। মামলার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই সংবাদে সাংসদকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। তবে অন্য মামলাটির বাদী আনোয়ার হোসেন টেলিফোনে মামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

প্রথম আলোর হাজীগঞ্জ প্রতিনিধি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, সংবাদটিতে আমার কোনো ব্যক্তিগত মতামত ছিল না। কাউকে হেও করারও উদ্দেশ্য ছিল না। সাংসদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বিষয়ে পত্রিকায় কোনো প্রতিবাদও জানাননি। আমি মনে করি আমাকে অযথা হয়রানি করার জন্য এই মামলাগুলো করা হয়েছে।

জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি আমলে নিয়ে শাহরাস্তি থানা পুলিশকে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। শাহরাস্তি থানার ওসি তদন্ত নুর হোসেন মামুন জানান, এ বিষয়ে এখনো আদালত থেকে আমরা কিছু পাইনি। আর হাজীগঞ্জ থানার ওসি জাবেদুল ইসলাম বলেন, আমি মামলাটি নিয়েছি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের চাপে পড়ে। অন্য কোনো কারণে নয়।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে ওসির সাথে কথা বলবো যেন অযথা সাংবাদিককে হয়রানি না করা হয়।

বিবাদী পক্ষের আইনজীবী চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ বলেন, একই ধারায় একই অভিযোগে একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পরপর দুটি মামলা হওয়া সাংঘর্ষিক। চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. সেলিম আকবর বলেন, ৫৭ ধারা নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ক্ষেত্রে এই আইনে মামলা নেয়ার আগে পুলিশের বিষয়টি যাচাই বাছাই করা প্রয়োজন ছিল।

এদিকে হাজীগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত মামলায় সাংবাদিক মোহাম্মদ শাহজাহান ও মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হায়দার চৌধুরী হাইকোর্ট থেকে গত ২৮ মে স্থায়ীভাবে জামিন লাভ করেন।

অন্যদিকে দৈনিক সকালের খবরের সিনিয়র রিপোর্টার আজমল হক হেলালের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় হওয়া মামলায় হাইকোর্ট আজ ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন মঞ্জুর করেছেন।

আগাম জামিন চেয়ে হেলাল আদালতে উপস্থিত হয়ে আবেদন জানালে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তাকে জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনের শুনানির সময় এডভোকেট এসএম রেজাউল করিম আদালতকে বলেন, সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজীর লোক এমপির ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য মামলাটি করেছেন। তিনি আরও বলেন, আইসিটি আইনের এই ধারায় অভিযুক্ত কোন ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জামিন দিতে পারেন না। এখন হাইকোর্ট থেকে তাকে জামিন দেওয়া না হলে হেলালকে গ্রেফতার ও তার বাক স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হতে পারে।

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজিকে নিয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদ হেলাল তার ফেসবুক একাউন্ট থেকে শেয়ার করায় স্থানীয় রুস্তম আলী ফরাজি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ফারুক হোসেন গত ৭ জুলাই মঠবাড়িয়া থানায় এই মামলাটি করেন।

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago