কলকাতার ‘ভাগের মা’তে দেশভাগের যন্ত্রণা

কলকাতায় বড়িশা ক্লাবের 'ভাগের মা' পূজার প্যান্ডেল। ছবি: এএফপি

ভারতবর্ষের ইতিহাসের অন্যতম ট্র্যাজেডি ১৯৪৭ এর দেশভাগ। দেশভাগ হয়েছিল তিন পক্ষের আলোচনার মধ্য দিয়ে যেখানে ছিল না মেহনতি মানুষের প্রতিনিধিত্ব। দেশভাগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সাধারণ মানুষের। লাখ লাখ মানুষ শরণার্থী হয়েছে। সব ফেলে শুধু সন্তানদের নিয়ে মানুষ দেশত্যাগ করেছিল। তাদের চোখে-মুখে ছিল হতাশা, উদ্বাস্তু হওয়ার বেদনা এবং মূল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার যন্ত্রণা।

এর ৭৪ বছর পরে দেশভাগের সেই স্মৃতি ফিরে এসেছে কলকাতার বেহালা বড়িশা ক্লাবের পূজার থিমে। প্রতি বছরই নতুন নতুন থিম থাকে এই ক্লাবের পূজায়। এবার তাদের থিম 'ভাগের মা'।

৪৭ এ অগণিত মানুষ ভিটেমাটি হারিয়ে ছিন্নমূল উদ্বাস্তু হয়ে আশ্রয় নেন পশ্চিমবঙ্গে। এমনকি ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের দুর্গা প্রতিমাকেও তার ৮০০ বছরের আবাসভূমি ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল কলকাতার কুমোরটুলি অঞ্চলে। সেই ছবিই তুলে ধরা হয়েছে ক্লাবের এ বছরের পূজায়।

গত বছরও বড়িশা ক্লাবের প্রতিমা সবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। গত বছর ক্লাবটি পরিযায়ী শ্রমিক মায়ের আদলে দেবী দুর্গাকে সাজিয়েছিল। সেখানে দেখানো হয়েছিল কাজ হারানো এক মা তার সন্তানদের নিয়ে চলেছেন উদ্দেশ্যহীন পথে।

দেশভাগের পর দাঙ্গা চলাকালে সম্ভাব্য হামলা ও লুটপাটের হাত থেকে দেবীকে রক্ষা করতে ঢাকেশ্বরীর মূল বিগ্রহটিকে ১৯৪৮ এ কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেই বিগ্রহ এখন রয়েছেন কুমোরটুলি অঞ্চলের দুর্গাচরণ স্ট্রিটে এবং সেখানে নিয়মিত পূজা হয়।

বড়িশা ক্লাবের এবারের প্রতিমায় উদ্বাস্তু হওয়া সেই মা তার সন্তানদের নিয়ে বসে আছেন, তাদের সবার চোখে-মুখে হতাশার চিহ্ন। কপালে চিন্তার ভাঁজ, কারণ প্রতি মুহূর্তে তাকে লড়তে হচ্ছে প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে। আর, মায়ের কোলে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সেই আদি বিগ্রহ।

শিল্পী রিন্টু দাসের সেই থিমে প্যান্ডেলটি দুই ভাগে বিভক্ত। বামে বাংলাদেশ সীমানা ও ডানে ভারতের সীমানা। মাঝখানে ট্রাকের মধ্যে খাঁচাবন্দি এবং সঙ্গে ঘর-গেরস্থালি সামগ্রী। চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বোঝানো হয়েছে মা চাইলেও ফিরতে পারবেন না তার নিজ ভূমিতে।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy in early 2025

According to the latest data from the United Nations High Commissioner for Refugees (UNHCR), 2,589 Bangladeshis landed in Italian shores in January and February this year while 1,206 went to the European country in the two months last year

1h ago