স্বামী-স্ত্রীর টাকার কারখানা!

রাজধানীর গুলশানের বাড্ডা থানার নুরের চালা সাঈদ নগরের একটি সাততলা বাড়ির ছয়তলায় অভিযান চালিয়ে জাল টাকা তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
জাল টাকা তৈরি ও বিক্রিতে জড়িত এক নারীসহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশানের বাড্ডা থানার নুরের চালা সাঈদ নগরের একটি সাততলা বাড়ির ছয়তলায় অভিযান চালিয়ে জাল টাকা তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

এসময় জাল টাকা তৈরি ও বিক্রিতে জড়িত এক নারীসহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আজ সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমানের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একাধিক টিম এ অভিযান চালায়।

অভিযান চলাকালে কারখানাটি থেকে ১০০০ ও ৫০০ টাকা মূল্যের প্রায় ৪৩ লাখ তৈরিকৃত জাল টাকা ও প্রচুর পরিমাণে জাল টাকা তৈরির উপকরণ জব্দ করা হয়। এগুলো মধ্যে আছে একটি ল্যাপটপ, দুটি কালার প্রিন্টার, বিপুল পরিমাণে আঠা ও আইকা, বিভিন্ন ধরনের রং, জাল টাকা তৈরির কাগজ, নিরাপত্তা সুতার বান্ডিল, লেমিনেটিং মেশিন, কাটার, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের লগো সম্পন্ন বিশেষ কাগজ।

ডিবি ডিসি মশিউর রহমান বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করে বলেন, ‘এসব সামগ্রী দিয়ে আরও কোটি টাকা পরিমাণ জাল টাকা তৈরি করা যেত।’

কারখানাটি থেকে ১০০০ ও ৫০০ টাকা মূল্যের প্রায় ৪৩ লাখ তৈরিকৃত জাল টাকা ও প্রচুর পরিমাণে জাল টাকা তৈরির উপকরণ জব্দ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, পিরোজপুরের আব্দুর রহিম শেখ, তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম, বন্ধু ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হেলাল খান, চাঁদপুরের আনোয়ার হোসেন এবং জামালপুরের ইসরাফিল আমিন।

ডিবি জানায়, গ্রেপ্তারকৃত ফাতেমা বেগম ২০১৯ সালে হাতিরঝিল এলাকার একটি বাসায় জাল টাকা তৈরির সময় অপর সহযোগীসহ হাতে-নাতে ধরা পড়লেও তার স্বামী রহিম পালিয়ে যান।

গ্রেফতারকৃত সবাই এর আগে জাল টাকা অথবা মাদক কেনা-বেচায় জড়িত থাকায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বলেও জানায় ডিবি।

ডিবি বলছে, গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে জাল টাকা খুচরা এবং পাইকারি বিক্রি করার পাশাপাশি গত তিন বছর ধরে ঈদসহ অন্যান্য উৎসবের আগে আগে জাল টাকা তৈরির কাজে নিয়োজিত থেকে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি জাল টাকা বাজারে ছেড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। এ কাজে রহিম শেখকে অর্থ দিয়ে পৃষ্ঠপোষকতা করছে বাল্যবন্ধু হেলাল খান। গ্রেপ্তারকৃত হেলাল খান একসময় গার্মেন্টসের ব্যবসা করলেও ইয়াবার নেশা এবং ইয়াবার ব্যবসা করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে লোকসানের শিকার হয়ে বর্তমানে কক্সবাজার-টেকনাফ থেকে ইয়াবা ব্যবসার পাশাপাশি রহিম এবং ফাতেমাকে দিয়ে জাল টাকা তৈরির ব্যবসাও করাচ্ছেন বলে জানায় ডিবি।

আব্দুর রহিম শেখ ও তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম। ছবি: সংগৃহীত

ডিবি জানায়, ১০০টি কাগজের নোটের এক বান্ডিল জাল টাকা তৈরি করতে সাত থেকে আট হাজার টাকা খরচ হয়ে যায় বলে তৈরিকারকরা প্রতি বান্ডিল পাইকারি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। পাইকাররা আবার এগুলোকে প্রান্তিক পর্যায়ের বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতাদের কাছে প্রতি বান্ডিল ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন, যা রুট পর্যায়ের জাল টাকার কারবারিরা কখনো কখনো গহনা, কখনো কাপড়চোপড়, ভোগ্যপণ্য এমনকি পশুর হাটে বিক্রি করে ছড়িয়ে দিয়ে থাকেন।

গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

Comments