আগামী দশকের মধ্যে শক্তিশালী ডি-৮ অর্থনৈতিক অঞ্চল করা সম্ভব: প্রধানমন্ত্রী

আগামী দশকের মধ্যে শক্তিশালী ডি-৮ অর্থনৈতিক অঞ্চল করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
pm_27jul22.jpg
ছবি: সংগৃহীত

আগামী দশকের মধ্যে শক্তিশালী ডি-৮ অর্থনৈতিক অঞ্চল করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ বুধবার সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে আয়োজিত অর্থনৈতিক সহযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক জোট ডি-৮ মন্ত্রী পর্যায়ের ২০তম অধিবেশনের অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯, যুদ্ধ, খাদ্য ও জ্বালানি সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশ্ব এক কঠিন সময় পার করছে। এই অবস্থায় আমাদের বহুপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার এবং অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বৈশ্বিক একাত্মতায় বেশি মনোযোগী হওয়ার দাবি রাখে। অর্থনীতির ওপর করোনা মহামারির প্রভাব প্রশমিত করতে এবং কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখতে বাংলাদেশে আমরা ব্যাপক ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমরা ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি, যা আমাদের জিডিপির ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এতে মোট ৬৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন মানুষ এবং ১১৮ হাজার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে।

যে ক'টি দেশ সফলভাবে তাদের জনগোষ্ঠীকে করোনার টিকা দিয়েছে বাংলাদেশ তাদের মধ্যে রয়েছে। কোভিড-১৯ পুনরুদ্ধার সূচকে ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে। যখন আমরা সবাই কোভিড-১৯ মহামারিতে বিপর্যস্ত তখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বকে নতুন বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে। যুদ্ধ, পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় খাদ্য, সার, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশের মতো দেশগুলো সবচেয়ে বেশি বহন করছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অধিকাংশ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। আমাদের সবার উচিত সাহসের সঙ্গে এই মানবিক সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসা, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, এক বিলিয়নের বেশি জনসংখ্যার ডি-৮ দেশগুলোর অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের আমাদের উদার ও বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ নীতি বিদেশি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করছে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী ৫ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, পিটিএ (অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি) বাস্তবায়ন একটি সফল ডি-৮ এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বড় দেশীয় বাজার রয়েছে কিন্তু আমাদের সম্মিলিত বাজারও যথেষ্ট। ডি-৮ এর আন্তঃ বাণিজ্য আমাদের ব্যবসার সম্ভাবনা এবং সুযোগ ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে। আগামী দশকে ১২৯ বিলিয়ন ডলার থেকে ডি-৮ এর আন্তঃ বাণিজ্য দ্বিগুণ করা আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এসইজেড) জায়গা দিতে প্রস্তুত। আমরা যদি এখনই প্রক্রিয়া শুরু করি, আগামী দশকের মধ্যে আমাদের একটি শক্তিশালী ডি-৮ অর্থনৈতিক অঞ্চল থাকবে।

আইসিটি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ডি-৮ দেশভুক্ত যুবকদের শক্তিশালী কর্মশক্তিতে পরিণত করা যেতে পারে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ ৪০ বছরের কম বয়সী এবং আমাদের ৬ লাখ ৫০ হাজার নিবন্ধিত আইটি ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। এই বিশাল জনশক্তিকে আমরা তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক শিল্প তৈরি করতে এবং তরুণদের বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে ব্যবহার করতে পারি, প্রস্তাব রাখেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীল খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমাদের বৈচিত্র্যময় কৃষি উৎপাদনে মনোযোগ দেওয়া উচিত। বাংলাদেশ অন্যান্য ডি-৮ সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে চর্চা ও অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে প্রস্তুত। আগামী এক দশকের মধ্যে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য আমাদের কৃষি উৎপাদনে মনোযোগ দিতে হবে।

ডি-৮ সব সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে জ্বালানি ব্যবহার এবং বিকল্প শক্তির উত্সগুলোর প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত। ডি-৮ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যাদের বিকল্প জ্বালানির বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে, তাদের সম্পৃক্ত করে আমাদের সক্ষমতা বাড়ানো উচিত, বলেন তিনি।

Comments