ঋণ শোধের চিন্তায় হাওরপারের প্রান্তিক কৃষক

paddy.jpg

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার হাওরপারের বর্গাচাষি সাদেক মিয়া। দিনমজুরি থেকে যে আয় হয় তাতে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে সংসার চলে না। তাই বাধ্য হয়ে মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে বোরো চাষ করেছেন।

'বোরো খেত আমাদের প্রাণ। যদি চিটায় না ধরে, বন্যায় না ডোবে তাহলে বছরের ধানটা আমাদের হয়ে যায়, খাওয়ার চিন্তা করতে হয় না।'

কিন্তু এবার 'চিটায় না ধরে' কথাটা আর শঙ্কার মধ্যে থাকেনি। হাওরের দুই বিঘা নিচু জমিতে যে ধান লাগিয়েছিলেন তাতে চিটা ধরার পর হাতে পেয়েছেন মাত্র ৮ মণ ধান।

paddy1.jpg
ছবি: স্টার

সাদেক মিয়া বলেন, 'জমি আবাদ করার জন্য মহাজনের কাছ থেকে পৌষ মাসে দাদনে ১০ হাজার টাকা এনেছিলাম। শর্ত ছিল বৈশাখ মাসে ১০ মণ ধান আর জ্যৈষ্ঠ মাসে পুরো টাকা ফেরত দিতে হবে। কিন্তু এবার ধানই পেয়েছি ৮ মণ আবার এর থেকে জমির মালিককে দিতে হবে ৪ মণ ধান। তাহলে নিজেরা খাবো কী আর মহাজনের দেনা ফেরত দেবো কী করে?'

একই দুশ্চিন্তা হাকালুকি হাওরের কৃষক আব্দুল হান্নানেরও। তিনিও হাওরে ২ বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ ধান চাষ করেছিলেন। পুরো জমির ফসলেই চিটা ধরেছে। তার অভিযোগ, কৃষি বিভাগ থেকে কোনো সহাযোগিতাই পাননি তিনি।

'কৃষি বিভাগ কাগজে-কলমে ফলন দেখায়, কিন্তু কৃষকের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে না,' আক্ষেপ ঝরে পড়ে আরেক প্রান্তিক কৃষক কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের রিয়াজুর রহমানের কণ্ঠেও।

কৃষক ও মহাজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাঘ মাসে স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা ঋণ নিলে ঘরে ধান তোলার পর ওই ১ হাজার টাকায় সুদ হিসেবে দিতে হয় দেড় মণ ধান। কিন্তু এবারের ধানে চিটায় কীভাবে এই ঋণ শোধ হবে তাই ভেবে পাচ্ছেন না তারা।

কৃষক সাদ্দাম হোসেন বলেন, 'গত বছর হাওরের যে এলাকায় (মৌজায়) ব্রি-২৮ জাতীয় ধান প্রতি বিঘাতে ১৫ থেকে ২০ মণ পেয়েছি। সেখানে এবার ৪ থেকে ৫ মণ ধান পেয়েছি। কী করে ঋণ পরিশোধ করবো।'

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাওরের নিচু জমিতে বর্গাচাষিরা ধানের আবাদ করেন। বন্যার পানি ঢুকলে শুরুতেই এইসব নিচু জমি ডুবে যায় বলে একটু অবস্থা সম্পন্ন চাষিরা এই জমিগুলো বর্গাচাষিদের দেন চাষ করতে দেন। হাওরের প্রায় অর্ধেক এলাকায় তারা আগাম জাতের ধান ব্রি-২৮ চাষ করেন। তবে এতে ঝুঁকি থাকে চিটা হওয়ার। ঝুঁকির পরও তারা বন্ধক নিয়ে, ঋণ করে এই ধানের আবাদ করেন।

হাওর পাড়ের প্রান্তিক কৃষক ও বর্গা চাষিরা জানান, তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহের একমাত্র সম্বল হাওরে উৎপাদিত এক ফসলি বোরো ধান। এই ফসলের আয় দিয়েই তাদের পুরো বছরের সংসারের খরচ ও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়াসহ সব ব্যয় চলে।

কিন্তু এ বছর বোরো মৌসুমে দীর্ঘ মেয়াদি খরা ও পানি সেচের সুবিধা না থাকায় জেলার হাওরগুলোতে কৃষকের রোপণ করা ব্রি-২৮ জাতের ধানে চিটা ধরায় লোকসানে পড়েছেন কৃষকেরা। তার ওপর মহাজনের দাদন, এনজিওর কিস্তি আর ক্ষুদ্র ব্যাংক ঋণ এখন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।

ধানের চিটা নিয়ে কথা হয় মৌলভীবাজার কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, খরার কারণে কিছু কিছু এলাকায় জমিতে ধানে চিটা ধরেছে, এটা আমাদের চোখে পড়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সেটি জানিয়েছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৫৭০ হেক্টর। চাষাবাদ হয়েছে ৫৭ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ব্রি-২৮ জাতীয় আগাম ধান চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৯২৫ হেক্টর জমিতে।

লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও এবার বেশি ধান উৎপাদন হবে বলছে কৃষি বিভাগ। কিন্তু প্রান্তিক কৃষকের ব্রি-২৮ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে কি না তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সংশ্লিষ্ট কেউ।

Comments

The Daily Star  | English

46th BCS written exam postponed amid protests

Md Zahirul Islam Bhuiyan, a PSC member, announced in front of the protesters that the scheduled date for the 46th Bangladesh Civil Service written exam (May 8) would be postponed

2h ago