চাঁপাইনবাবগঞ্জে নতুন জাতের আম ‘ইলামতি’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার কদমতলা গ্রামে নতুন জাতের ‘ইলামতি’ আম। ছবি: রবিউল হাসান/স্টার

আমের 'রাজধানী' হিসেবে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাওয়া গেছে 'নাবি' (দেরিতে পাকে) জাতের একটি নতুন আম। এর নাম 'ইলামতি' রাখা হয়েছে তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্রের নামানুসারে।

এই আমটি সুমিষ্ট হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা আছে। অসময়ের (আগস্ট-সেপ্টেম্বর) আম বলে এটি বিক্রি হয় উচ্চমূল্যে।

গত দুই বছর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের বিজ্ঞানীরা গোমস্তাপুর উপজেলার রামচন্দ্রপুর মৌজায় এই আমের সন্ধান পান। সেই থেকে তারা আমটি নিয়ে পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা করছেন। তাদের নিজেদের বাগানে দুটি মাতৃগাছও লাগিয়েছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ হাবিবুল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাঝারি আকৃতির এই আম লম্বায় সাড়ে ৫ ইঞ্চি আর চওড়ায় সাড়ে ৩ ইঞ্চি। গড় ওজন ৪২৭ গ্রাম। খাওয়ার যোগ্য অংশ ৩৪৯ গ্রাম। আঁটি পাতলা। টিএসএস (মিষ্টতার পরিমাণ) ২২ ভাগ যা অন্যান্য আমের চেয়ে বেশি। কাঁচা আম সবুজ আর পাকা অবস্থায় হাল্কা হলুদ। পাকা আমে সুঘ্রাণ রয়েছে।'

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক মোজদার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত দুই বছর আগে গোমস্তাপুর উপজেলার রামচন্দ্রপুর মৌজায় "নাবি" জাতের আমের সন্ধান পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে আমটি "গুটি" হিসেবে পরিচিত। এই আমের মুকুল আসে অন্যান্য আমের মতোই।'

'এটি পাকে আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে মধ্য সেপ্টেম্বরের মধ্যে। সেসময় আশ্বিনা ছাড়া ভালো কোনো আম বাজারে পাওয়া যায় না। তাই সুমিষ্ট এই আমের ব্যাপক চাহিদা আছে। অসময়ের আম বলে বিক্রি হয় চড়া দামে।'

'গত দুই বছর থেকে আমটিকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'অন্যান্য আমের চেয়ে এর রোগ-বালাই কম। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন গোমস্তাপুর ও নাচোল উপজেলায় এই জাতের আমের বাগান গড়ে তুলেছেন।'

'যেহেতু আমটি বরেন্দ্র অঞ্চলে পাওয়া গেছে তাই তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্রের প্রতি সম্মান দেখানোর অংশ হিসেবে তার নামের প্রথম অংশ "ইলা"র সঙ্গে "মতি" (মূল্যবান পাথর) যোগ করে আমটির নাম "ইলামতি" রাখা হয়েছে।'

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার কদমতলা গ্রামের আশরাফুল আলম ও তার ভাইসহ পরিবারের পৈত্রিকসূত্রে বাগান আছে একই উপজেলার রামচন্দ্রপুর মৌজায়। সেখানে তাদের এই জাতের ১৬টি গাছ আছে। তারা প্রায় ২০ বছর আগে গুটির ভালো জাত বলে গাছগুলো লাগিয়ে ছিলেন।

আশরাফুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার দাদা সাফাতুল্লাহ'র বাগান ছিল একই উপজেলার কুমারগাড়া-কাঁঠাল এলাকায়। সেই বাগানে একটি এই জাতের গাছ ছিল। দাদা আমটি সংরক্ষণের কথা বললে আমরা সেখান থেকে চারা তৈরি করে ১৬টি গাছ লাগাই।'

তিনি জানান, আমটি দেরিতে পাকে। আগে ফজলি আমের সময় এটি বিক্রি করে দেওয়া হতো। গত পাঁচ বছর থেকে আমটির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন দেরিতে বিক্রি করা হচ্ছে।

গত বছর সাত হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১০ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে এই আম তিনি বিক্রি করেছিলেন। এ বছর এখনো আম বিক্রি করেননি। তারা কানসাট বাজারে আম বিক্রি করেন পাইকারদের কাছে। পরে পাইকাররা সেই আম ঢাকায় পাঠান।

আশরাফুল আলম বলেন, 'বাজারে এই আমের ভালো দাম পাওয়ায় আমাদের কাছ থেকে কয়েকজন চারা নিয়ে বাগান করেছেন।'

তাদের কাছ থেকে গোমস্তাপুরের জালালউদ্দীন ৩০টা ডাল নিয়ে নাচোলের ম্যালাডাঙ্গা-শিবপুরা এলাকায় অন্য গাছে কলম করেছেন।

জালালউদ্দীন পাঁচ বছর আগে এই চারা লাগানোর পর পর্যায়ক্রমে তার সাড়ে ১১ বিঘা জমিতে ১৮০টি এই জাতের গাছ রয়েছে।

ওই বাগান লিজ নেওয়া মোহাম্মদ বাদশা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই জাতের আম দেরিতে পাকায় এর ব্যাপক চাহিদা আছে। এ বছর কিছু আম আট হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি।'

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৪ হাজার ৭৩৮ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। জেলায় আম উৎপাদন হয় দুই দশমিক পাঁচ লাখ টন।

Comments

The Daily Star  | English

Brihatta’s quiet revolution in Hazaribagh

Essentially a research-based, artist-run, non-profit organisation, Brihatta Art Foundation has worked in Dhaka for quite some time. With an objective to integrate locals in community development, they have given the people of Hazaribagh greater accessibility to art and culture.

8h ago