বালুচরে কুমড়ার হাসি

ধরলার বালুচরে কুমড়া চারার পরিচর্যা করছেন এক চাষি। ছবি: এস দিলীপ রায়

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও গঙ্গাধরসহ ২৬ নদ-নদীর বুকে জুড়ে এখন বিস্তীর্ণ বালুচর। যেদিকে দৃষ্টি যায় শুধু বালি আর বালি। এসব বালি মাটিতে তেমন ফসল ফলানো যায় না। কিন্তু, চরের কৃষকরা অব্যবহৃত বালুচরকে ব্যবহার উপযোগী করে ফসল ফলাচ্ছেন। কয়েক বছর ধরে তারা বালি মাটিতে কুমড়া চাষ করছেন এবং কুমড়া চরের চাষির মুখে হাসি ফুটিয়েছে।

অধিকাংশ কৃষক নিজ উদ্যোগে বালি মাটিতে কুমড়া চাষ করছেন। অবশ্য কিছু কিছু কৃষককে বীজ ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা।

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে কুমড়া চাষ হয়েছিল। আগের বছর ২০২০ সালে হয়েছিল ৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে কুমড়া চাষ করা হয়েছে। কুমড়া চাষের এসব জমির বেশিরভাগই বালুচর।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার ধরলা নদীর বুকে চর ফলিমারী এলাকার আবুল হোসেন (৫৬) জানান, তিনি এবছর বালু চরে ৪৫০টি কুমড়ার চারা লাগিয়েছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৬ হাজার টাকা। আশা করছেন ৩০-৩৫ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি করতে পারবেন। গত বছর ৪ হাজার ৫০০ টাকা খরচ করে বালুচরে ৩০০টি কুমড়া চারা লাগিয়ে কুমড়া বিক্রি করে ২৩ হাজার টাকা আয় করেছিলেন।

ধরলার বালুচরে আরেকটি কুমড়া খেত। ছবি: এস দিলীপ রায়

তিনি বলেন, 'জৈব সার ব্যবহার করে বালুচরে কুমড়া চাষ করতে হয়। শুধু সেচের পানি যোগাতে ঝামেলা পোহাতে হয়। আমার পুঁজি থাকলে বড় পরিসরে কুমড়া চাষ করতাম।'

একই চরের সাফিয়া বেগম (৪৮) জানান, তিনি কয়েক বছর ধরে নিজ উদ্যোগে বালুচরে কুমড়া চাষ করছেন। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে তিনি প্রতিবছর কুমড়া বিক্রি করে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় করেন।

তিনি বলেন, 'আমি নিজে পরিশ্রম করে বালুচরে কুমড়া চাষ করছি। সঠিকভাবে যত্ন নিলে বালু মাটিতে খুবই ভালো কুমড়া ফলানো যায়।'

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে পার্বতীর চরের নাদেরুল ইসলাম (৬০) জানান, তারা চরের ১৫ জন ভূমিহীন কৃষক এক হয়ে ৭ হেক্টর জমিতে কুমড়া চাষ করেছেন। আশা করছেন প্রত্যেক কৃষক এবছর কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা করে লাভের অংশ পাবেন।

তিনি বলেন, 'আমরা একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে বীজ সহযোগিতা পেয়েছি। কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত টেকনিক্যাল সাপোর্ট পাচ্ছি।'

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চরের কৃষকরা ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে কুমড়ার চারা লাগান। মার্চে তারা ফলন পেতে শুরু করেন। চরে উৎপাদিত কুমড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এসে কিনে নিয়ে যান। চরের বালু মাটিতে কুমড়া চাষে ভূমিহীন কৃষকদের কৃষি বিভাগ থেকে বীজ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

This time our fight is against corruption

From its mammoth rally in Dhaka yesterday, the Jamaat-e-Islami vowed to wage war on corruption if it gets the people’s mandate in the next general election.

46m ago