রংপুর বিভাগে ৯৯ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে জিংকসমৃদ্ধ ধান

চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় জিংকসমৃদ্ধ ধান চাষ দিনদিন বাড়ছে রংপুর বিভাগের ৫ জেলায়। প্রথম দিকে অল্প সংখ্যক কৃষক এই ধান চাষ করলেও বর্তমানে কয়েক হাজার কৃষক এই ধান চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় জিংকসমৃদ্ধ ধান চাষ দিনদিন বাড়ছে রংপুর বিভাগের ৫ জেলায়। প্রথম দিকে অল্প সংখ্যক কৃষক এই ধান চাষ করলেও বর্তমানে কয়েক হাজার কৃষক এই ধান চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।

কৃষকদের জিংকসমৃদ্ধ ধান চাষে আরও বেশি আগ্রহী করতে সরকারিভাবে এই ধান সংগ্রহের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

গত ৮ বছর ধরে জিংকসমৃদ্ধ ধান চাষ করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে বেসরকারি সংস্থা 'নতুন জীবন রচি' (নজীর)।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর রংপুর বিভাগের ৫ জেলায় ৯৯ হাজার হেক্টর জমিতে জিংকসমৃদ্ধ ধান চাষ হয়েছে। গত বছর চাষ হয়েছিল ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে।

ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

প্রায় ৮ বছর আগে যখন এই ধান চাষ শুরু হয়েছিল তখন জমির পরিমাণ ছিল ৯০০ হেক্টর। এই ধানের ফলন অন্য জাতের ধানের চেয়ে বেশি। আলু ও তামাক ঘরে তোলার পর কৃষকরা জিংকসমৃদ্ধ ধান চাষ করছেন এবং আশানুরূপ ফলন পাচ্ছেন।

বাজারে জিংকসমৃদ্ধ চাষের ভোক্তা বেড়ে যাওয়ায় এই ধানের চাহিদা বেড়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে জিংকসমৃদ্ধ ধানের ফলন ৭ মেট্রিক টন।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার শফিরহাট এলাকার কৃষক ও জিংক ধানের বীজ বিক্রেতা হেমন্ত চন্দ্র সেন (৫৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ৪ বছর ধরে ৩ বিঘা জমিতে জিংকসমৃদ্ধ ধান চাষ করছি। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে এ ধান বিক্রিও করছি।'

'ডাক্তার বলেছেন জিংকসমৃদ্ধ চাল শরীর গঠনে অনেক উপকারী। মানুষকে বেটে হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়া, এ চালের ভাত শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়,' যোগ করেন তিনি।

তিনি জানান, প্রথমদিকে কৃষকরা জিংকসমৃদ্ধ ধানের বীজ নিতে আগ্রহী ছিলেন না। গত বছর থেকে তারা এ ধানের বীজ নিতে অগ্রিম টাকা দিচ্ছেন। এই ধান চাষে কৃষকের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।'

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার দলগ্রাম এলাকার কৃষক জ্ঞানদা রানী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেসরকারি সংস্থা নজীর জিংক ধানের বীজ দিয়ে সহায়তা করেছে। ৩ বিঘা জমিতে জিংকসমৃদ্ধ ধান চাষ করে ৬২ মণ ধান পেয়েছি।'

'জিংক সমৃদ্ধ ধানে পোকামাকড় তেমন আক্রমণ করে না' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'অন্যান্য জাতের ধানের চেয়ে এ ধানে রোগ বালাই অনেক কম। আগামী বছর আরও বেশি জমিতে জিংকসমৃদ্ধ ধান চাষ করবো।'

একই গ্রামের কৃষক লুতফর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় ৬ বছর আগে শুধু পরিবারে খাবারের জন্য এক বিঘা জমিতে জিংকসমৃদ্ধ ধান চাষ করেছিলাম। এই ধানের উপকারিতা পেয়েছি। গত ৩ বছর ধরে ৮ বিঘা জমিতে এই ধান চাষ করছি। আমাকে দেখে গ্রামের অনেকে জিংকসমৃদ্ধ ধান চাষ করছেন।'

লালমনিরহাট শহরের চাল ব্যবসায়ী সুলতান হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি জিংকসমৃদ্ধ ধান কিনি। গত ৬ বছর ধরে ধান থেকে চাল করে ভোক্তাদের চাহিদা মেটাচ্ছি। অর্ডার পেলে জিংকসমৃদ্ধ চাল বাড়িতে পৌঁছে দিই।'

তিনি আরও বলেন, 'অন্যান্য চালের মতোই দাম নেওয়া হয়। মাঝে-মধ্যে দাম কমও নেওয়া হয়। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অনেকে জিংকসমৃদ্ধ চালের জন্য আমার কাছে আসেন।'

তিনি প্রতিদিন গড়ে ৫ মেট্রিক টন জিংকসমৃদ্ধ চাল বিক্রি করেন বলেও জানান।

বেসরকারি সংস্থা নজীর'র প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোশারফ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রথম দিকে, জিংকসমৃদ্ধ ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কিছু সংখ্যক কৃষককে বিনামূল্যে বীজ দেওয়া হয়েছিল। এখন অধিকাংশ কৃষক এই বীজ কিনে নেন। এ ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে সভা-সমাবেশ করার পাশাপাশি মিল মালিক ও ধান-চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কৃষকদের সমন্বয় করে দেওয়া হয়।'

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সম্প্রতি অনেক কৃষক জিংকসমৃদ্ধ ধান চাষ করে লাভবান হওয়ায় অন্যান্য কৃষকরা জিংকসমৃদ্ধ ধান চাষে আগ্রহী হয়েছেন। কৃষি বিভাগ থেকে এ ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহী ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।'

সরকারিভাবে জিংকসমৃদ্ধ ধান সংগ্রহ করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে জানান লালমনিরহাট জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক রফিকুল ইসলাম। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেহেতু সরকারি গুদাম থেকে ত্রাণ সহায়তার চাল সরবরাহ করা হয় তাই সরকারিভাবে জিংকসমৃদ্ধ ধান-চাল সংগ্রহ করা হলে তা প্রান্তিক মানুষের কাছে যাবে এবং তারা উপকৃত হবেন।'

Comments