১৭০ ইটভাটায় পুড়ছে কৃষি জমির প্রাণ ‘টপ সয়েল’

লালমনিরহাট সদর উপজেলার বনসুয়া দোলা এলাকায় কৃষি জমি থেকে টপ সয়েল সংগ্রহ করা হচ্ছে। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের ১৪ উপজেলায় বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষি জমির উর্বর অংশ 'টপ সয়েল' ১৭০টি ইটভাটায় ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা কৃষি ও পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।

একটি ইট তৈরিতে প্রায় ৪ কেজি মাটির প্রয়োজন। প্রতিটি ইট ভাটায় প্রতি বছর ১০-৩০ লাখ ইট উৎপাদিত হয়। প্রতিবছর ২ জেলায় কৃষি জমিগুলো বিপুল পরিমাণ মাটির উপরিভাগ হারাচ্ছে।

এসব ইটভাটায় ব্যবহারের জন্য শত শত ট্রাক ও ট্রলি দিয়ে কৃষি জমির 'টপ সয়েল' প্রকাশ্যে সংগ্রহ করতে দেখা গেলেও এর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার বনসুয়া দোলা এলাকার ইটভাটার শ্রমিক মজিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জমির ওপরের মাটি ছাড়া ইট তৈরি করা সম্ভব নয়। ভাটার মালিকরা কৃষকদের কাছ থেকে মাটির ওপরের অংশ কিনছেন এবং তা দিয়ে ইট তৈরি হচ্ছে।'

ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাটির উপরিভাগ থেকে ৫-১০ ইঞ্চি স্তর পর্যন্ত হলো মাটির প্রাণ, একে টপ সয়েল বলা হয়। এতে জৈব পদার্থ ও অণুজীবের সর্বাধিক ঘনত্ব থাকে এবং মাটির এই অংশে ফসল উৎপাদিত হয়।'

'যদি কৃষিজমি তার ওপরের মাটি হারিয়ে ফেলে, তবে এটি স্বাভাবিক হতে প্রায় ১০-১২ বছর লাগে। মাটির উপরি অংশ হারিয়ে গেলে কৃষকরা কৃষিজমি থেকে ফসলের উৎপাদন কম পান।'

'মাটির উপরি অংশে বেশিরভাগ জৈব পদার্থ ও হিউমাস থাকে। বেশিরভাগ পরজীবীও এই স্তরে বাস করে, যা উদ্ভিদকে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণেও সাহায্য করে,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'ফলে মাটির এই স্তর বিচ্ছিন্ন হলে মাটি প্রাণহীন হয়ে যায়।'

মাটির টপ সয়েল উত্তোলন বন্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাটির উপরি অংশ উত্তোলনের কারণে আবাদি জমির প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে। মাটির প্রথম স্তরে কেঁচোসহ উপকারী অণুজীব বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।'

তার আশঙ্কা, 'মাটির উপরের স্তর এভাবে ধ্বংসের কারণে কোনো এক সময়ে জাতীয় পর্যায়ে ফসল উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।'

লালমনিরহাট সদর উপজেলার বনসুয়া দোলা এলাকার কৃষক ইসমাইল হোসেন (৬২) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইটভাটা মালিকদের কাছে মাটির উপরি অংশ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। এক বিঘা জমির ওপরের মাটি বিক্রি করে ১৫-২০ হাজার টাকা পাই। ভাটার মালিক কৃষিজমির ২-৩ ফুট গভীরের মাটি সংগ্রহ করেন।'

ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার মাল্লিরপাড় গ্রামের কৃষক আশরাফ আলী (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় ৪ বছর আগে ৩ বিঘা জমির ওপরের মাটি স্থানীয় ইট ভাটায় বিক্রি করি। পরে, বিপুল পরিমাণ সার দিয়েও সে জমি থেকে আশানুরূপ ফসল পাইনি।'

'জমির উপরি অংশ বিক্রি করতে আগ্রহী ছিলাম না। কিন্তু, পাশের জমির মালিক তা করায় আমি বাধ্য হয়েছি,' যোগ করেন তিনি।

রংপুরের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মেজ-বাবুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জনবল সংকট থাকায় সবসময় অভিযান পরিচালনা করতে পারি না। পরিবেশ অধিদপ্তর শিগগির স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় কৃষি জমির টপ সয়েল সংগ্রহের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy

The number of Bangladeshis crossing the perilous Mediterranean Sea to reach Italy has doubled in the first two months this year in comparison with the same period last year.

5h ago