কৃষি

২০৫০ সালের মধ্যে দেশে ধান উৎপাদন ২৫ শতাংশ বাড়বে

কৃষক, ধান বিজ্ঞানী ও কৃষি কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টার সমন্বয়ে দেশে অতিরিক্ত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য ২০৫০ সালের মধ্যে ধানের উৎপাদন ২৫ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
স্টার ফাইল ছবি

কৃষক, ধান বিজ্ঞানী ও কৃষি কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টার সমন্বয়ে দেশে অতিরিক্ত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য ২০৫০ সালের মধ্যে ধানের উৎপাদন ২৫ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।

একদল গবেষক ২০৫০ সালের মধ্যে আনুমানিক জনসংখ্যা হিসাব করে, চাষযোগ্য জমির পরিমাণ, বার্ষিক ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি ও জলবায়ুর অবস্থা মূল্যায়ন করে 'বাংলাদেশের জন্য ধান ভিশন: ২০৫০' প্রস্তুত করেছেন ।

গবেষকরা বলেছেন, জেনেটিক গেইন বৃদ্ধি, অনাবাদী জমি চাষ, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করে প্রধান এই খাদ্য দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে।

গতকাল বুধবার রাজধানীতে এক সেমিনারে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই) কীভাবে ধানের উৎপাদন বাড়ানো যায় তার একটি কৌশলগত গবেষণা পত্র উপস্থাপন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি 'ডাবলিং রাইস প্রোডাক্টিভিটি (ডিআরপি) ইন বাংলাদেশ' নামে একটি বইয়ের প্রচ্ছদ উন্মোচন করেছে। দুই বছর কাজ করে ৪০ জন গবেষক বইটি লিখেছেন।

সেমিনারে গবেষণা উপস্থাপন করে বিআরআরআই মহাপরিচালক শাজাহান কবির বলেন, 'এই ক্ষেত্রে কৃষকের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের বীজ সরবরাহের মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে (ডিএই) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।'

'মুজিববর্ষ' উপলক্ষে বিআরআরআই এই সেমিনারের আয়োজন করে।

শাজাহান কবির বলেন, 'আগামী ৩০ বছরের জন্য টেকসই ধান উৎপাদনের জন্য ডিআরপি একটি মডেল ধারণা। এটি ধানের উৎপাদন দ্বিগুণ করার জন্য একটি মডেল না হলেও শ্রমের উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করতে এবং জমিতে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করবে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ধানের উৎপাদন ৪০ দশমিক সাত মিলিয়ন টন, ২০৪০ সালের মধ্যে ৪৩ দশমিক নয় মিলিয়ন টন ও ২০৫০ সালের মধ্যে ৪৬ দশমিক সাত মিলিয়ন টনে উন্নীত করা সম্ভব।

বিআরআরআই এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশে ৩৭ দশমিক চার মিলিয়ন টন ধান উৎপাদন হয়েছে।

গবেষকরা দেশের বিভিন্ন পরিবেশে উৎপাদনের জন্য ১৭টি প্রজাতির ধান শনাক্ত করেছেন।

২০৫০ সালে বাংলাদেশকে আনুমানিক ২১ কোটি ৫৪ লাখ মানুষের খাবারের যোগান দিতে হবে। বর্তমান চালের বার্ষিক ব্যবহার জন প্রতি ১৪৮ কেজি, যা প্রতি বছর শূন্য দশমিক সাত শতাংশ করে কমছে। আশা করা হচ্ছে, ২০৪০ সালের মধ্যে জন প্রতি বছরে ১৩৩ কেজি চাল প্রয়োজন হবে।

বর্তমানে, প্রতি বছর ধানের উৎপাদন শূন্য দশমিক ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই হারে বাড়তে থাকলে ২০৫০ সালে দেশে ধানের উৎপাদন ৪৭ দশমিক দুই মিলিয়ন টনে পৌঁছতে পারে।

গবেষকদের ব্যবহৃত মডেল অনুসারে, ২০৫০ সালে দেশে ৪৪ দশমিক ছয় মিলিয়ন টন ধানের প্রয়োজন হবে।

সব পরিবেশগত প্রতিকূলতা বিবেচনা করে গবেষকরা ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি হেক্টর জমিতে নয় দশমিক ছয় টন বোরো, খরাপ্রবণ এলাকায় প্রতি হেক্টরে ৬ দশমিক দুই, বন্যাপ্রবণ এলাকায় সাত দশমিক তিন ও লবণাক্ততায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আট দশমিক এক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, 'বিআরআরআই কর্তৃক প্রকাশিত বইটি বাংলাদেশে ধান উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করবে।'

বর্তমানে বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইআরআরআই) প্রতিনিধি হুমান্থ ভান্ডারি, ডিএই -এর মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার সেমিনারে বক্তব্য রাখেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেসবাহুল ইসলাম সেখানে সভাপতিত্ব করেন।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সুমন আলী

Comments

The Daily Star  | English

Beyond Dollar: Bangladesh to seek over 36b yuan in Chinese loans

Bangladesh is going to seek more than 36 billion yuan, equivalent to $5 billion, as soft loans from China to reduce pressure on its dollar reserves.

9h ago