২৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট

তিনটি উৎসবকে ঘিরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালীর ফুলের বাজারে। ছবি: সংগৃহীত

বসন্ত বরণসহ ৩টি উৎসবকে ঘিরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালীর ফুলের বাজারে। সব ধরনের ফুলের দাম বেড়েছে এবার। ফলে, করোনার ২ বছর পর হাসি ফুটেছে ফুল চাষিদের মুখে। ধারণা করা হচ্ছে, এবার অন্তত ২৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে।

আজ শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, কাক ডাকা ভোর থেকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে সরব হয়ে ওঠে গদখালীর ফুল বাজার। গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা ফুলের পসরা সাজিয়ে বেচাকেনা করছেন শত শত ফুল চাষি। কেউ ভ্যান, কেউ সাইকেল বা ঝুড়ির মধ্যে ফুল রেখে ঢাকা ও স্থায়ীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দর কষাকষি করছেন। গত দুদিন ধরে ফুলের চাহিদা বাড়তি থাকায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি ফুল কিনছেন। চড়া দাম পাওয়ায় ফুল চাষিরাও বাজারে এনেছেন দ্বিগুণ ফুল। উৎসবের এই মাসে ফুল-বেচাকেনায় ব্যবসায়ীদের মনে বইছে উৎসবের আমেজ।

ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলার বিভিন্ন মাঠে অন্তত ১১ ধরনের ফুলের চাষ হয়। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি সূত্র জানায়, যশোরে ৬ হাজার ফুল চাষি আছেন। ১৫০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষ করেন তারা। ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলার বিভিন্ন মাঠে অন্তত ১১ ধরনের ফুলের চাষ হয়। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, কলনডালা, চন্দ্র মল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল শোভা পাচ্ছে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে শীত প্রধান দেশের ফুল টিউলিপ চাষের মাধ্যমে গদখালীতে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা।

ফুল চাষি আনোয়ার হোসেন জানান, মানভেদে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা, যা মাসখানেক আগেও ছিল মাত্র ১ থেকে ৩ টাকা। জারবেরা বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৮ থেকে ১২ টাকায়। গাঁদা ফুল প্রতি হাজার ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত। যা আগে ছিল ২০০-৩০০ টাকা।

তিনি আরও জানান, গত ২ বছর ধরে করোনার কারণে যে লোকসান হয়েছে এ বছর ফুল বিক্রি করে তা কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে হয়তো।

ফুল চাষি রেজাউল ইসলাম জানান, তিনি ৪ বিঘা জমিতে গোলাপের চাষ করেছেন। এখন গোলাপের দাম দ্বিগুণ। ১ দিন পরে আরও বাড়বে। ফুলের মান ধরে রাখতে গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরিয়ে রাখা হয়েছে। যদিও এতে বাড়তি খরচ হচ্ছে ৩ থেকে ৪ টাকা। ভালবাসা দিবসকে টার্গেট করে সেই ফুল বিক্রি হলে খরচ উঠে বাড়তি লাভ হবে।

গদখালীর ফুল চাষে প্রথমবারের মতো টিউলিপ চাষ করে সাড়া জাগিয়েছেন পানিসারার ফুল চাষি ইসমাইল হোসেন। তার ৫ শতক জমিতে ফুটেছে বিভিন্ন রঙের ৭ প্রকারের টিউলিপ ফুল। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে তার জমিতে টিউলিপ ফোটা শুরু হয়। ভালোবাসা দিবসে বিক্রি করা হবে এসব টিউলিপ ফুল।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'করোনায় সরকারের বিধিনিষেধে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। সব কিছু উপেক্ষা করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ফুলের বাজার। মানুষ ফুল কিনছে। ফেব্রুয়ারিতে এবার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে, ধারণা করা হচ্ছে ৩ দিবসে অন্তত ২৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে।'

ঝিকরগাছার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ফুল চাষিদের জন্য সরকার প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছে। ফুল চাষকে আরও আধুনিক করতে সরকার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার প্রতি নজর দিচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার ফুল চাষিরা লাভের মুখ দেখতে পারবেন।

Comments

The Daily Star  | English

JnU second campus: Project stalled amid bureaucratic hurdles

The construction of Jagannath University’s long-awaited second campus in Keraniganj has stalled due to bureaucratic delays.

3h ago