শোকের কান্না যখন আনন্দ অশ্রু

ছেলে আদনানকে ফিরে পেয়ে মায়ের আকুল করা কান্না। ছবি: স্টার

রোববার দুপুর ২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদরের সৈয়দপুর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চডুবির কিছুক্ষণ পরের দৃশ্য। মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে আব্দুস সাত্তার ও তার স্ত্রী শাহিনা বেগম এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছেন। স্বামীর ২ হাত শক্ত করে ধরে আছেন শাহিনা। ছেলের খোঁজে তাদের ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া প্রস্তুতি নিচ্ছে একটি ট্রলার।

ওই ট্রলারে চড়ে অল্প সময়ের মধ্যেই তারা দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছালেন। উদ্ধার কাজ চলছে তখন। সে সময় ট্রলারের পাটাতনে বসে থাকা শাহিনা ছেলেকে হারানোর শঙ্কায় কখনো চিৎকার করে কাঁদছিলেন, কখনো এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিলেন উদভ্রান্তের মতো।

এর মধ্যেই নদীর পাড়ে আরেকটি ট্রলারে থাকা ছেলে আদনানকে (১৮) চোখে পড়ে তার। তিনি ছেলের নাম ধরে চিৎকার করে ওঠেন। এবার তার দুচোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে আনন্দ অশ্রু।

শাহিনা ধরেই নিয়েছিলেন যে, তার ছেলেকে তিনি আর ফিরে পাবেন না। কারণ আদনান সাঁতার জানতেন না।

গতকাল দুপুরে শীতলক্ষ্যা নদীতে সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন মালবাহী জাহাজ রূপসী-৯ পেছন থেকে চাপা দিলে ডুবে যায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এম এল আশরাফ উদ্দিন-২। ওই লঞ্চের যাত্রী ছিলেন আদনান।

লঞ্চডুবির এই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি নৌ পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ'র কর্মীরা উদ্ধার কাজে অংশ নেন। এতে আজ দুপুর পর্যন্ত নদীতে তল্লাশি চালিয়ে ২ শিশুসহ ৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

কথা বলে জানা যায়, এই দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া আদনানের পুরো নাম আদনান দেওয়ান আদর। তিনি প্রেসিডেন্ট ড. ইয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

আদনান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '৭ দিন আগে ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় গিয়ে গতকাল মুন্সিগঞ্জ ফিরছিলাম। লঞ্চ ছাড়ার ঠিক ১০ মিনিট আগেও মায়ের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়েছিল। মাকে জানিয়েছিলাম যে, নারায়ণগঞ্জ লঞ্চঘাটে আছি। কিছুক্ষণ পরেই লঞ্চ ছাড়বে।'

আদনান বলতে থাকেন, 'স্বাভাবিক গতিতেই চলছিল লঞ্চটি। যাত্রীও খুব বেশি ছিল না। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পরই কাত হয়ে যায় লঞ্চটি। মনে হচ্ছিল, পেছন থেকে কিছু একটা ঠেলে নিয়ে যাচ্ছিল লঞ্চটিকে। তখন সাঁতার না জানার কারণে লাফ দিতে পারেনি। পরে আমার পা ডুবন্ত লঞ্চটির কোথাও আটকে যায়। সেখান থেকে দ্রুত জোর করে পা ছাড়িয়ে লঞ্চ থেকে বের হয়ে বড় জাহাজটি ধরে থাকি। এরপর ফ্রিজের একটি ফোম পেয়ে সেটা ধরে ভাসতে থাকি। এ অবস্থায় স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে।'

উদ্ধার হওয়ার পর আদদান প্রথমে তার বন্ধুদের খবর দেন। শুরুতে তারাই একটি ট্রলার নিয়ে আসেন। পরে আসেন আদনানের বাবা-মা।

আদনান জানান, তিনি নিয়মিত এই পথে যাতায়াত করেন। তবে এবারই প্রথমবার এই ধরনের দুর্ঘটনার মুখোমুখি হলেন।

Comments

The Daily Star  | English

JnU protests called off

Students and teachers of Jagannath University called off their protest last night after receiving assurances from the government that their demands would be met.

6h ago