দৃষ্টি নেই স্বপ্ন আছে মিলনের

২০১৪ সালে বাদ্যযন্ত্র তবলায় জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মিলন ইসলাম (২৫) দিন কাটাচ্ছেন কষ্টে। অর্থাভাবে তার পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। স্বপ্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়া। কিন্তু, দরিদ্র বাবা-মা তার পড়াশুনার খরচ যোগাতে পারছেন না।
মিলন ইসলাম। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

২০১৪ সালে বাদ্যযন্ত্র তবলায় জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মিলন ইসলাম (২৫) দিন কাটাচ্ছেন কষ্টে। অর্থাভাবে তার পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। স্বপ্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়া। কিন্তু, দরিদ্র বাবা-মা তার পড়াশুনার খরচ যোগাতে পারছেন না।

বাবা সফিয়ার রহমান ও মা মঞ্জু আরা বেগমের সঙ্গে মিলন ইসলাম। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

মিলন ইসলাম ২০১১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কয়েকবার সেরা তবলাবাদক হিসেবে পুরস্কৃত হন। শুধু বাদ্যযন্ত্রে তিনি পারদর্শী নন, সংগীতেও রয়েছে দক্ষতা। চলতি নভেম্বরে তার বিএ পরীক্ষা শেষ হয়েছে।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা জোংড়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী খারিজা জোংড়া গ্রামের কৃষক সুফিয়ার রহমান ও মঞ্জু আরা বেগমের ছেলে মিলন ৫ ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় ও জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী। তারপরও তিনি বাড়িতে গরু পালন ও শাকসবজি চাষ করছেন।

মিলন ২০০৩ সালের ১ জানুয়ারি লালমনিরহাট শহরের হাড়িভাঙ্গা এলাকায় বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ'র পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকার সুযোগ পান। সেখান থেকে ২০১৩ সালে এসএসসি ও ২০১৫ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর কেন্দ্রে থাকার সুযোগ না থাকায় তিনি বাড়িতে চলে আসেন।

মিলন ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রে আমি বাদ্যযন্ত্র ও সংগীতে প্রশিক্ষণ নিই। এ ছাড়া, আমি যুব উন্নয়ন থেকে পশুপালনে প্রশিক্ষণ নিয়েছি।'

'আমার স্বপ্ন বিসিএস পরীক্ষা দেব,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'আমাকে ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়ালেখা করতে হয়। এই পদ্ধতির বই সংগ্রহ করা কষ্টের। অনেক টাকা প্রয়োজন। দরিদ্র বাবা আমার পড়ালেখার খরচ যোগাতে অপারগ।'

যুব উন্নয়নের প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে মিলন বাড়িতে গরু পালন করছেন। বাড়ির পাশে এক খণ্ড জমিতে শাকসবজি চাষ করছেন। বাবা-মা তাকে সবসময় সহযোগিতা করেন।

'দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ায় সব কাজ ভালোভাবে করতে পারি না। কম্পিউটারে প্রশিক্ষণ নিতে প্রস্তুতি নিয়েছি। ঢাকায় যেতে হবে। কিন্তু আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় তা হয়ে উঠছে না,' যোগ করেন তিনি।

মিলন ইসলামের বাবা সফিয়ার রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পড়ালেখা করতে ছেলের প্রবল আগ্রহ কিন্তু পরিবারের সামর্থ্য নেই। সে গরু পালন ও কৃষিকাজ করতে পারে। বসতভিটা ও সামান্য আবাদি জমি আছে। সংসার চলে চাষাবাদ করে।'

মিলনের মা মঞ্জু আরা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার অথবা বিত্তবান কেউ এগিয়ে আসলে আমার ছেলের স্বপ্ন পূরণ হতে পারে। তাকে বই কিনে দিতে পারি না। তার চলাফেরার খরচ যোগাতে পারি না। খুব কষ্ট করে মিলন পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে।'

মিলন ইসলাম বাদ্যযন্ত্র ও সংগীত চর্চা ধরে রেখেছেন। নিজের বাদ্যযন্ত্র নেই। তবে গ্রামের এক স্কুলশিক্ষকের বাড়িতে গিয়ে তিনি চর্চা করেন।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জ্ঞানচর্চাকে বিকশিত করতে ব্রেইল পদ্ধতির বই সহজে পাওয়ার ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন মিলন ইসলাম।

Comments

The Daily Star  | English

History of student protests in the USA

American campuses -- home to some of the best and most prestigious universities in the world where numerous world leaders in politics and academia have spent their early years -- have a potent history of student movements that lead to drastic change

3h ago