ইটভাটায় মাটি বিক্রি ও খাল ভরাট

ধামরাইয়ে ৭০০ একর আবাদি জমিতে জলাবদ্ধতা

জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ৭০০ একর জমি বছরের পর বছর ফেলে রাখতে হচ্ছে। ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/স্টার

এক সময় যে জমিতে সারা বছরই বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ হতো। এখন সেখানে জলাবদ্ধতার কারণে কোনো ফসলই চাষাবাদ করতে পারছেন না ধামরাইয়ের শ্রীরামপুর এলাকার ৬৫ বছর বয়সী কৃষক নরুল হক। বছরজুড়ে অনাবাদি থাকে তার পুরো জমি। শুধু নুরুল হক না, তার মতো কয়েক শ কৃষক জলাবদ্ধতার কারণে জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না।

ধামরাইয়ের সুতিপাড়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর এলাকার কুল্লীবিলে অন্তত ১০টি এলাকার কৃষকদের প্রায় ৭০০ একর জমি জলাবদ্ধতার কারণে বছরের পর বছর ফেলে রাখতে হচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে ‍কুল্লীবিল এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, জলাবদ্ধ একখণ্ড জমি থেকে নিজের গরুর জন্য কচুরিপানা সংগ্রহ করছিলেন কৃষক নরুল হক।

ভরাট হয়ে গেছে খাল। ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/স্টার

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে নুরুল হক বলেন, 'কুল্লিবিলে আমাদের প্রায় ৬ বিঘা জমি রয়েছে। এক সময় এসব জমিতে মটর, খেসারি, গম, যব, ধান ও পাটসহ বিভিন্ন প্রকার ফসল চাষাবাদ করতাম। বছরে তিন বার বিভিন্ন ফসলের চাষ হতো। কিন্তু এখন একবারও চাষ করতে পারি না। জলাবদ্ধতার কারণে বছরের পর বছর জমিগুলো ফেলে রাখতে হচ্ছে।'

নুরুল হক বলেন, 'দুটি কারণে এক সময়ের শস্যতে ভরে থাকা জমিগুলো পতিত পড়ে রয়েছে। প্রথমত কয়েকজন কৃষক লোভে পড়ে ইটভাটায় মাটি বিক্রি করে জমিকে নিচু করে ফেলেছে, দ্বিতীয়ত বিল থেকে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খালটি পলি পড়ে ভরাট হওয়ায় বর্ষা মৌশুমে বিল থেকে পানি বরে হতে না পেরে সারাবছর সেখানে জলাবদ্ধতা থাকে।'

গত ২০ বছর ধরে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে নুরুল হক বলেন, 'খালটি খনন করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলে কিছু জমি চাষাবাদ করার উপযোগী হবে। এ ছাড়া ইটভাটায় মাটি বিক্রি বন্ধ করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।'

এ বিষয়ে সুতিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরেই কুল্লিবিলের জমি চাষাবাদ করতে পারছেন না। ২০১৯ সালে বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য পলি পড়ে ভড়াট হওয়া খালের পাশদিয়ে একটি নালা কাটা হয়েছিল কিন্তু বছর না ঘুরতেই নালাটি ভরাট হয়ে যায়। খালটি পূনঃখনন করলে কৃষকদের জমি আবাদ উপযোগী করা সম্ভব। আমি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। উনারা সাম্প্রতিক বিল এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং কৃষকদের ‍আশ্বাস দিয়েছেন সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।'

ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/স্টার

ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরিফুল হাসান বলেন, 'কুল্লিবিলের জলাবদ্ধতা প্রতিবছরই হয়। দুই বছর পূর্বে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় চেয়ারম্যান উদ্যোগ নিয়ে খালের একপাশ দিয়ে নালা (ড্রেন) কেটে দিয়ে জলাবদ্ধতা কিছুটা নিরশন করেছিলেন। কিন্তু খালের ওপর একটি ব্রিজ ভেঙে পড়ায় এ বছর পুরো বিলের পানি জমিতেই জমে রয়েছে।'

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা সম্প্রতিকালে সেই স্থানটি দেখে এসেছি। মূলত ৭ শ একর আয়োতনের পুরো বিলের পানি নিষ্কাশন হতো একটি খালের মাধ্যমে। খালটি ব্যক্তি মালিকানাধীন যায়গায়। খালটির ওপর একিট ব্রিজ ছিল। ব্রিজের কারণে পলি পড়ে খালটি ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে এই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।'

খালটি একটি প্রকল্পের আওতায় এনে পুনঃখনন করে কৃষকদের সমস্যা সমাধন করা সম্ভব উল্লেখ করে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।
 

Comments

The Daily Star  | English
tax collection target for IMF loan

Talks with IMF: Consensus likely on exchange rate, revenue issues

The fourth tranche of the instalment was deferred due to disagreements and now talks are going on to release two tranches at once.

11h ago