মুখ দিয়ে লিখে মাস্টার্সে লালমনিরহাটের ফিরোজ

ফেরদৌস আলম ফিরোজ। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

মনের প্রবল ইচ্ছা আর জীবন সংগ্রামকে মানিয়ে নিতে পারলে কোনো বাধাই আর বাধা হয়ে থাকে না। তেমনি এক দৃষ্টান্ত ফেরদৌস আলম ফিরোজ।

ফেরদৌস আলম ফিরোজ। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তবর্তী ধরলা নদীর পাড়ে কাউয়ামারী গ্রামের এক কৃষক পরিবারের সন্তান তিনি। জন্ম থেকেই তার হাত দুটি অচল। তাই মুখ দিয়ে লিখে চালিয়ে যাচ্ছেন পড়াশুনা।

মুখ দিয়ে লিখে ফেরদৌস আলম ফিরোজ ২০১৩ সালে এসএসসি পাস করেন। ২০১৫ সালে এইচএসসি ও ২০১৯ সালে অনার্স পাস করেন। এখন পড়ছেন মাস্টার্সে। হাসি-খুশি থেকে পড়াশুনা করছেন তিনি। স্বপ্ন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা।

ফেরদৌস আলম ফিরোজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মুখ দিয়ে লিখতে আমার খুব কষ্ট হয়। তারপরও কষ্টকে মানিয়ে নিয়েছি। কষ্ট করে যদি কোনোদিন সুখ পাই— এই স্বপ্ন দেখছি।'

মায়ের সঙ্গে ফেরদৌস আলম ফিরোজ। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

তিনি আরও বলেন, 'জন্মের পর থেকেই মা আমার জন্য প্রতি মুহূর্ত কষ্ট করে যাচ্ছেন। মায়ের সাহায্য ছাড়া আমার বেঁচে থাকা দুরূহ।'

ফিরোজ জানান, তিনি স্কুল ও কলেজে সহপাঠী, শিক্ষকদের সহযোগিতা পেয়ে আসছেন। তবে দারিদ্রের কারণে মাঝেমধ্যে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

ফিরোজের সহপাঠী মশিউর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফিরোজ মুখ দিয়ে লিখলেও তার লেখা অনেক সুন্দর। মুখ দিয়ে লিখে অনার্স পাস করে সে শিক্ষার্থীদের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়েছে। তার কাছে অনেক কিছু শেখার আছে। তার সংগ্রাম আমাদের সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে প্রেরণা যোগায়।'

পাটগ্রাম আদর্শ কলেজের প্রভাষক ফজলুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফিরোজ মেধাবী শিক্ষার্থী। সে নম্র-ভদ্র। তাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরে আমরা অন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিই।

৪ ভাইয়ের মধ্যে বড় ফিরোজ। বাকি ৩ ভাইও পড়ালেখা করেন। বাবা শাহাব উদ্দিন একজন কৃষক ও মা ফিরোজা বেগম গৃহিণী। প্রায় ৫ বিঘা আবাদি জমির ওপর নির্ভর করছে তাদের সংসার।

ফিরোজের ছোটভাই অনার্স-শিক্ষার্থী খুরশিদ ওয়াহিদ পরশ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভাইয়া সবসময় আমাদের প্রতি খেয়াল রাখেন। আমাদের পড়াশুনার খোঁজখবর নেন। আমিও তার কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।'

ফিরোজের বাবা শাহাব উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কৃষিকাজ করে সন্তানদের পড়াশুনা করানো অনেক কষ্টসাধ্য। বিশেষ করে ফিরোজকে পড়াশুনা করাতে বাড়তি খরচ করতে হয়। না পাওয়ার বেদনা থাকার পরও কোনোদিন কোনোকিছুর জন্য সে আবদার করেনি।'

তিনি আরও বলেন, 'তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ফিরোজ পা দিয়ে লিখেছে। এরপর মুখ দিয়ে লেখার চর্চা শুরু করে। মুখে কলম আটকিয়ে অচল হাত দিয়ে কোনো রকমে ব্যালেন্স করে লিখতে হয় তাকে। এতে তার খুব কষ্ট হয়। তারপরও পিছিয়ে নেই সে।'

ফিরোজের মা ফিরোজা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফিরোজ নিজে গোসল করতে পারে না, খেতে পারে না এমনকি, কাপড়ও পরতে পারে না। সংসারের কাজের ফাঁকে ফিরোজকে সময় দিতে হয়।'

ফিরোজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মুখ দিয়ে লিখি বলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই সরকারি চাকরির প্রত্যাশা করছি।'

Comments

The Daily Star  | English
International Crimes Tribunal 2 formed

Govt issues gazette notification allowing ICT to try political parties

The new provisions, published in the Bangladesh Gazette, introduce key definitions and enforcement measures that could reshape judicial proceedings under the tribunals

2h ago