‘মোর কপালোত কোনো ঈদ নাই’
কাল ঈদ। মানুষজন যখন ঈদের আনন্দ উদযাপনে প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন ৬৮ বছর বয়সী হামিদা বেওয়া কাঁদছেন তার ঘরের জন্য। থাকার জন্য একমাত্র টিনশেড ঘরটি কালবৈশাখী ও শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গেল চারদিন ধরে রাতে থাকছেন প্রতিবেশীর ঘরে। সামর্থ্য না থাকায় ঘরটি মেরামত করতে পারছেন না তিনি।
হামিদা বেওয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, গেল বৃহস্পতিবার রাতে কালবৈশাখীতে ঘরের বেড়া উড়ে গেছে আর শিলাবৃষ্টিতে ঘরের টিনগুলো ফুটো হয়ে গেছে।
'মোর কপালোত কোনো ঈদ নাই। ঈদের জন্য সেমাই চিনি কিনবার পাং নাই। নয়া কাপড়তো মোর ভাগ্যোত জোটে না,' বলেন হামিদা বেওয়া।
'মোর ঘরটা ভাঙি পড়ি আছে। মুই এ্যালা কি দিয়া ঘরটা ঠিক করিম। মোর হাতোত টাকা পইসা নাই,'
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধান গ্রামে হামিদা বেওয়া দেড় যুগ আগে তার স্বামী বদিউজ্জামান মিয়াকে হারিয়েছেন। এক ছেলে হাফিজুর রহমান ও এক মেয়ে নারজিনা বেগমের বিয়ে হয়েছে। ছেলে হাফিজুর দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সরকারের দেওয়া বয়স্কভাতা আর গ্রামে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন হামিদা। তার স্বামীর ১৮ বিঘার সবগুলো এখন তিস্তা নদীর পেটে। নদীরপাড়ে দুই শতাংশ জমির উপর টিনশেড ঘর করে বসবাস করছেন তিনি।
হামিদা বেওয়ার প্রতিবেশি আলতাফ হোসেন (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, খুব কষ্টে দিন চলে হামিদা বেওয়ার। একসময় তাদের অনেক সম্পদ ছিল। হামিদার একমাত্র ঘরটি কালবৈশাখী ঝড়ে ভেঙে পড়েছে। রাতের বেলা প্রতিবেশীর ঘরে ঘুমাচ্ছেন। গ্রামের অন্য সকলের আর্থিক অবস্থাও সচ্ছল না হওয়ায় তারা হামিদাকে সহযোগিতা করতে পারছেন না।
হামিদা বেওয়ার ছেলে হাফিজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, তিনি দিনমজুরি করে সংসার চালান। বসবাস করছেন অন্যের জমিতে। তিনি আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় তার মাকে সহযোগিতা করতে পারছেন না।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ মতিয়ার রহমান মতি ডেইলি স্টারকে বলেন, হামিদা বেওয়ার ঘরটি তিনি পরিদর্শন করেছেন। ঈদের পর তার ক্ষতিগ্রস্ত ঘরটি মেরামত করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। গোবর্ধান এলাকায় হামদিা বেওয়ার মতো আরও অর্ধ শতাধিক বাড়ি-ঘর কালবৈশাখীতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
Comments