খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে কোটি কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে বলে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নিজেদের বাঁচার স্বার্থে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্টার ফাইল ছবি

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে কোটি কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে বলে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নিজেদের বাঁচার স্বার্থে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

আজ রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে যে মামলায় আপনারা সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন সেই মামলাটা একটা সাজানো মামলা। সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে তাকে সাজা দিয়েছেন। যেখানে লোয়ার কোর্ট থেকে দিয়েছিল ৫ বছর সেখানে হাইয়ার কোর্টে গিয়ে ১০ বছর দিয়েছেন। এখানেই বোঝা যায়, আপনারা কীভাবে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করছেন। কীভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে আপনারা হরণ করছেন। প্রজাতন্ত্রের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ব্যবহার করছেন। কীভাবে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করছেন, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। সমগ্র রাষ্ট্রকে আপনারা একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন কোনো চিকিৎসা না করে।

তিনি (খালেদা জিয়া) প্রায় ২ বছর কারাদণ্ডে ছিলেন। একটি পরিত্যক্ত বাসায়। যখন কেন্দ্রীয় কারাগারকে শিফট করে কেরানীগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুরান ঢাকায় এই কারাগার তখন পরিত্যক্ত। পুরনো স্যাঁতস্যেঁতে ঘরের মধ্যে খালেদা জিয়াকে তাকে আটক রাখা হয়। সেখান থেকে যে অসুখ সৃষ্টি হয়েছে, তা এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে এভারকেয়ার হাসপাতালে আমাদের যারা চিকিৎসক এবং অন্যান্য চিকিৎসক যারা আছেন, তারা বলছেন অতি দ্রুত খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য উন্নত দেশ আমেরিকা, যুক্তরাজ্য বা জার্মানিতে তার জীবন রক্ষা করা মুশকিল হয়ে যাবে, জানান ফখরুল।

তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া শুধু বিএনপি নেতা বলে আমরা কথা বলি না। শুধু যে আমাদের নেত্রী সে জন্য আমরা বলছি না। খালেদা জিয়া এই দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, তাদের ভাত-কাপড়ের স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তার যে আপসহীন ভূমিকা সে জন্য আজ সারা দেশের মানুষ তার মুক্তি চায়, সুচিকিৎসা চায় এবং চায় তিনি যেন আরও অনেক দিন বেঁচে থাকেন। খালেদা জিয়া আর বাংলাদেশের গণতন্ত্র একাকার। আজ তাকে বন্দি করে দেশে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে বন্দি করা হচ্ছে, গণতন্ত্রকে বন্দি করা হয়েছে। আজ তাকে হত্যার যে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, সেই ষড়যন্ত্র দিয়ে বাংলাদেশের অস্তিত্বকে বিলীন করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের শ্রমিকরা দুবেলা দুমুঠো ভাত খেতে পারে না। চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রত্যেকটা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়েছে। কারোনাকালে আমাদের অসংখ্য শ্রমিক ভাইদের চাকরিচ্যুতি হয়েছে। তাদের জন্য সরকার কোনো প্রণোদনার ব্যবস্থা করেনি। দুর্ভাগ্য আমাদের! যারা সরকারে আছেন তারা বড়লোক মানুষের কথা চিন্তা করেন। যাদের মিল আছে, ফ্যাক্টরি আছে তাদের প্রণোদনা দেন ভালো কথা। যারা এই মিল-ফ্যাক্টরিগুলো চালু রেখেছে, গাড়ির চাকা চালু রেখেছে তাদের কোনো প্রণোদনা দেননি। কারোনাকালে পরিবহন শ্রমিকদের প্রণোদনা দেননি বলে তারা রাস্তায় নেমে এসেছিল। দাবি করা হয়, আড়াই হাজার কোটি টাকা নাকি দিয়েছেন, কাকে দিয়েছেন? আপনার দলের নেতারা ভুয়া নাম লিখে সেই টাকা তুলে ফেলেছে।

আজ উন্নয়ন উন্নয়ন বলছেন, সাধারণ মানুষের কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। উড়াল সেতু, মেট্রোরেল হচ্ছে দরিদ্র মানুষ দরিদ্রই থেকে যাচ্ছে। সে জন্য আমরা পরিবর্তন চাই, দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতেই হবে সে জন্য বলছি না। এই সরকারকে সরাতে হবে। আমরা যুদ্ধ করেছিলাম আমার ভোট আমি দিতে পারবো না এই জন্য? আমি কথা বলতে পারবো না সেই জন্য? আমরা যুদ্ধ করেছিলাম মুক্ত বাংলাদেশ পাব, স্বাধীন বাংলাদেশ পাব। আজ ৫০ বছর পরে আমাদের সেই অধিকারগুলো নেই, বলেন ফখরুল।

সরকারের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, আপনাদের মন্ত্রীরা যে ভাষায় কথা বলছেন, কোনো সভ্য-সুস্থ মানুষ এই ভাষায় কথা বলতে পারে না। ওবায়দুল কাদের সাহেব, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাকে আমরা সম্মান করি, তাকে আমরা অবশ্যই শ্রদ্ধা করি। তিনি কখনোই বিএনপির ভূত ছাড়া কিছু দেখেন না। দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকেন সারাক্ষণ বিএনপির। আপনারা বলেন, বিএনপি নাকি নেই। বিএনপি যদি না-ই থাকে বিএনপির স্বপ্ন দেখেন কেন এত? ছেলেরা রাস্তায় নেমেছে, আজ পত্রিকায় দেখলাম সরকারকে লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছে। কেন রাস্তায় নেমেছে, কারণ আপনারা কোনো কথা রাখেন না। এর আগে যখন ছাত্রদের আন্দোলন হয়েছিল, তখন আপনারা বলেছিলেন সড়ককে সঠিকভাবে চালাবেন। সড়ক সঠিকভাবে চালাতে পারছেন না। বলেন, অ্যাক্সিডেন্ট হলো হঠাৎ করে এত লোক কোত্থেকে আসলো। আসলো তো আপনাদের ব্যর্থতার কারণে। মানুষের ক্ষোভ এমন জায়গায় পৌঁছে গেছে আপনারা কোনো কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। এখন তো মানুষ বেরিয়ে আসবেই। এভাবেই যদি চলতে থাকেন, দেশনেত্রীকে মুক্ত না করেন তাহলে কোটি কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। আপনাদের বাঁচার স্বার্থে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা করতে পাঠান। তা না হলে আপনারা পালানোর পথটাও খুঁজে পাবেন না।

Comments

The Daily Star  | English
Preparing for Ramadan's Price Shocks

Power price to go up 4 times a year

The government has drawn up a plan to increase the price of electricity four times a year for the next three years to withdraw all subsidies in the power sector, which the IMF recommends.

1h ago