‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’

বিজয় দিবসে জাতিকে শপথ বাক্য পাঠ করালেন প্রধানমন্ত্রী
ছবি: সংগৃহীত

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর বিজয় দিবসে দেশবাসীকে শপথ বাক্য পাঠ করালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে মহান বিজয় দিবসের ৫০ বছর পূর্তিতে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হয়ে এই শপথবাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

শপথবাক্য পাঠ করানোর সময় তার পাশে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা।

শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি এখন শপথ বাক্য পাঠ করব। আপনাদের কাছে অনুরোধ, আপনারাও আমার সঙ্গে দাঁড়িয়ে আমার কণ্ঠে কণ্ঠ মেলাবেন ও শপথ বাক্য পাঠ করবেন।'

তিনি শপথ বাক্যে বলেন, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি শাসকদের শাসন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে এক রক্ষক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতি প্রতিষ্ঠা করেছে তার স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বা। আজ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং মুজিব বর্ষের বিজয় দিবসে দীপ্ত কণ্ঠে শপথ করছি যে, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। দেশকে ভালোবাসব, দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তুলব। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন।'  

শপথ বাক্য পাঠ করানোর আগে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, '''১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্থানে আক্রমণ করে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে রাতেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি সেই ঘোষণায় বলেন, আমি কোট করছি, ''ইহায় হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছো, যাহার যাহা কিছু আছে তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও। সর্ব শক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ শত্রুটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জ না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।'

তিনি আরও বলেন, '২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে তার স্বাধীনতার এই ঘোষণা ঢাকার পিলখানার তৎকালীন ইপিআর হেডকোয়ার্টার্স থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে প্রেরণ করা হয়। পূর্বে থেকেই ইপিআরের সুবেদার মেজর শওকত আলী ৩ জন সহযোগীসহ সেখানে অপেক্ষরত ছিলেন। এই বার্তা বাংলাদেশের সকল পুলিশ স্টেশন, থানায় পৌঁছে যায়। থানায় কর্মরত অফিসাররা এই বার্তা ভোররাতের মধ্যেই সংগ্রাম পরিষদের কর্মীদের হাতে পৌঁছে দেন। একইসঙ্গে টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টারেও এই বার্তা সমগ্র দেশে পৌঁছে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীদের নেতাকর্মীরা পায়ে হেঁটে, মুখে চোঙ্গা ফুঁ দিয়ে, রিকশা করে অথবা মাইক দিয়ে সমগ্র বাংলাদেশে এই বার্তা প্রচার করতে শুরু করেন। জেলা থেকে থানা পর্যন্ত এই বার্তা প্রচারের সাথে সাথে প্রচারপত্র তৈরি করেও তারা বিলি করেন।'

তিনি আরও বলেন, '২৬ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রাম বেতারকেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জনাব আব্দুল হান্নান স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম পাঠ করেন। এরপর থেকে অন্যান্য নেতারাও বারবার এই ঘোষণা পাঠ করতে থাকেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রেডিও-টেলিভিশন ও পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়। বাঙালিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশ মোতাবেক যার যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে শুরু করে এবং শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের পাশে দাঁড়ায় প্রতিবেশি দেশ ভারত, রাশিয়া ও অন্যান্য বন্ধুপ্রতীম দেশ এবং সেসব দেশের জনগণ। মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে বাঙালিরা পরাজিত করে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের বিজয়, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর।' 

 

Comments

The Daily Star  | English

Doubts growing about interim govt’s capability to govern: Tarique

"If we observe recent developments, doubts are gradually growing among various sections of people and professionals for various reasons about the interim government's ability to carry out its duties."

1h ago