‘করোনা প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে হয়তো স্কুল চালু রাখা সম্ভব হবে না’

শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

শীতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে স্কুলগুলো হয়তো চালু রাখা সম্ভব হবে না।

নতুন করে প্রাণঘাতী ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচতে দেশের প্রতিটি নাগরিককে কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করার পাশাপাশি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে টিকাদান অভিযান সহজলভ্য করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে কেউ আবার সংক্রামিত না হয় (করোনাভাইরাস দ্বারা) এবং কেউই যেন টিকা দান কভারেজের বাইরে না থাকে।'

তিনি বলেন, 'সবাইকে কোভিড-১৯ টিকা নিতে হবে।'

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার সকালে ২০২১ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ ও এ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রতিবেদন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন।

তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।

তার সরকারের টিকাদান কার্যক্রমের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষকদের প্রথমে দিয়েছি, এখন শিক্ষার্থীদের দিচ্ছি এবং ১২ বছর বয়স পর্যন্ত সবাইকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকের অনীহার উল্লেখ করে তিনি বলেন, গতকালই তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কথা বলে ব্যবস্থা নিয়েছেন সারা দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর মাধ্যমে যেন এই টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকে। একদম তৃণমূল পর্যায়ের মানুষও যেন দ্রুত টিকা নিতে পারে। কারণ, নতুনভাবে যাতে আবার সংক্রমিত না হয় সে ব্যবস্থা এখন থেকেই নিতে হবে।

তিনি বলেন, 'আজকে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি আহ্বান জানাবো আমরা এই টিকাদান কার্যক্রমটা একদম তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যেতে চাচ্ছি। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমেই দেওয়া হবে বা অন্যান্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে দেওয়া হবে। কিন্তু যারা টিকা নেননি এখনো তাদেরকে টিকা নিতে হবে।'

পরিবারের শুধু অভিভাবক নয়, শিক্ষার্থীরাও যাতে টিকা নেয় সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী একই অনুষ্ঠানে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে ২০২২ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।

এবার করোনার কারণে ১ জানুয়ারি সারাদেশে পাঠ্যপুস্তক উৎসব না হলেও সেদিন থেকেই দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই বিতরণ শুরু হবে এবং ভিড় এড়াতে একেক দিন একেক শ্রেণীর বই প্রদান করা হবে। এবারে ৪ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৮৫৬ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০ কপি বই বিনামূল্যে প্রদান করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ২০২১ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেন।

এর আগে মাদ্রাসা ও কারিগরিসহ ১১টি বোর্ডের চেয়ারম্যানগণের কাছ থেকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রধানমন্ত্রী পক্ষে থেকে ফলাফল গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পুষ্টি বিষয়ক সচেতনতার ওপরও প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, ১ লাখ শিক্ষক এবং কর্মকর্তাকে পুষ্টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং ২ লাখ শিক্ষককে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

তিনি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টি আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে অনেক শিক্ষার্থীর এই সমস্যা থাকায় লেখাপড়ায় সমস্যায় পড়তে হয়, যা অনেক সময় সকলের অগোচরেই থেকে যায় বলেও উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রমটা চালু রাখতেই হবে। কারণ, করোনা কখনো বাড়ছে, কখনো কমছে। আমরা সবসময় লক্ষ্য করেছি শীতে এর প্রাদুর্ভাবটা বেড়ে যায়। কাজেই এখন থেকেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সেই প্রস্তুতিটা নিতে হবে। আর প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে স্কুলগুলো হয়তো চালু রাখা সম্ভব হবে না। সে কারণে, অনলাইন শিক্ষাটা যাতে প্রত্যেক ঘরে পৌঁছায় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। যেহেতু, দেশে এখন আর বিদ্যুতের সমস্যা নেই এবং এই অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখায় তার সরকার সবধরনের ব্যবস্থা নেবে। যাতে ঘরে বসেও মোবাইল, ল্যাপটপ, টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। সংসদ টিভি এ কাজে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সবসময় ব্যবহার করতে পারবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি এই করোনার মধ্যেও ফলাফল ঘোষণার সাফল্যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক শিক্ষা বোর্ড এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনের জন্য সোনার মানুষ হবে আজকের শিক্ষার্থীরা। এজন্য তাদের সেভাবে গড়ে তুলতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যোগ্য নাগরিক আমাদের গড়ে তুলতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকের দিনটা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলাফল ঘোষণা পাশাপাশি নতুন বছরের নতুন বই দেওয়া হচ্ছে। বই হাতে পাওয়ার আনন্দই আলাদা, নতুন বই মলাট লাগানো ও তাতে নাম লেখা, এটা অন্য রকম অনুভূতি।

তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা যাতে পিছিয়ে না থাকে, তাদের উপযোগী করেও বই প্রস্তুত করে দিচ্ছি।

'ক্ষুদ্র ণৃ-গোষ্ঠীদের নিজেদের ভাষায় বই তৈরি করে দিচ্ছি। এ পর্যন্ত আমরা তাদের ৫টি ভাষা পেয়েছি। সে ভাষায় বই করে দিয়েছি' বলেন প্রধানমন্ত্রী।

Comments

The Daily Star  | English
tax collection target for IMF loan

Talks with IMF: Consensus likely on exchange rate, revenue issues

The fourth tranche of the instalment was deferred due to disagreements and now talks are going on to release two tranches at once.

11h ago