সেতুসহ রাস্তা পেল সাবেক ছিটমহল বাঁশপচাই

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের সাবেক ছিটমহল বাঁশপচাই ধরলা নদীর বুকে একটি চর। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় হলে এর নাম হয় দ্বীপচর। এখানে ৩ শতাধিক পরিবারের বসবাস। এক সময় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও, সম্প্রতি একটি সেতু ও রাস্তা হওয়ায় বর্তমানে অবরুদ্ধ জীবনের মুক্তি এসেছে দ্বীপচরবাসীর।
দ্বীপচরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ধরলা নদীর শাখা নদী জারিধরলা নদীর উপর ৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৩৫ মিটার সেতু ও ৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩২০০ মিটার পাকা সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হয় এক সপ্তাহ আগে। এছাড়া, ১১০০ মিটার গাইডওয়াল নির্মাণের কাজও করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে।
এতে শুধু দ্বীপচর বা সাবেক ছিটমহল বাঁশপচাইয়ের বাসিন্দারা নয়, ধরলা নদী বেষ্টিত গুয়াবাড়ী, মাঝের চর এলাকায় বসবাসকারী ২০ হাজারেরও বেশি মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। অবসান হয়েছে চরে তাদের অবরুদ্ধ জীবনের।
দ্বীপচরের বাসিন্দা আব্দুল খালেক (৬৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের জীবনে এখন শান্তি ও নিরাপত্তা এসেছে। কয়েক বছর আগেও আমাদের জীবনযাপন ছিল অবরুদ্ধ ও কষ্টের। এখন বিদ্যুৎ. স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি।'
নদীর উপর সেতু ও পাকা রাস্তা তাদের জীবনকে বদলে দিয়েছে বলে তিনি জানান।
দ্বীপচরের আরেক বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন (৬৮) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা এখন উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারে নিয়ে ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারছেন। আগে যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য তাদের কম দামে বিক্রি করতে হতো।
'হামার জীবন এ্যালা শান্তিতে আছে। হামাকগুলাক আর নৌকাত পার হওয়া নাগে না,' বলেন তিনি।
স্থানীয় ওবায়দুল হক (৪৮) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সেতু ও রাস্তা নির্মাণে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত হওয়ায় এখানে বাজার গড়ে উঠেছে। সব ধরনের পণ্য এখানে বেচাকেনা হচ্ছে। আগে এখানে প্রতি শতক জমি ২-৩ হাজার টাকা বিক্রি হতো। কিন্তু, এখন তা ৩০-৩৫ হাজার টাকা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আগে যানবাহন না থাকায় কেউ অসুস্থ হলে সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া যেত না। কিন্তু, এখন সবসময় যানবাহন পাওয়া যাচ্ছে।
চর গুয়াবাড়ী এলাকার বাসিন্দা সাগির আলম (৩৫) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সেতু ও রাস্তার সুবিধা শুধু দ্বীপচরবাসী নয়, অন্যান্য চরের বাসিন্দারাও পাচ্ছেন। সেতু ও রাস্তা হওয়ার পর থেকেই চরে গড়ে উঠছে অনেক স্থাপনা ও দোকানপাট। ব্যবসা বাণিজ্যের যথেষ্ট প্রসার হচ্ছে।
জানতে চাইলে সেতু ও রাস্তার ঠিকাদার বদরুজ্জামান প্লাবন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেতু ও রাস্তা তৈরি করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনে। নৌকা দিয়ে নির্মাণ সামগ্রী আনতে হয়েছে।'
তিনি জানান, এখানে জমি কিনে স্থাপনা তৈরি ও ব্যবসা বাণিজ্য করার পরিকল্পনা করছেন তিনি।
লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এক সময়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দ্বীপচর সাবেক ছিটমহল বাঁশপচাই এখন স্বপ্ন জাগিয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। ২০১৭ সালে এখানে একটি সেতু ও পাকা সড়ক নির্মাণ প্রকল্প শুরু করা হয়। এক সপ্তাহ আগে প্রকল্প দুটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এখানে নির্মিত স্থাপনাগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে এলজিইডি নজরদারি করবে বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন জানান, দ্বীপচরে রাস্তা ও সেতু হওয়ায় এলাকাবাসীর জীবনমানে যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের পাশাপাশি এলাকায় জমির দাম বেড়ে গেছে।
তিনি জানান, চরটিতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। সেটিকে সরকারিকরণ করার প্রক্রিয়া চলছে।
এছাড়া, চরবাসীর জন্য আরও যেসব স্থাপনা প্রয়োজন সেসব নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
Comments