স্কুল সংস্কারের নামে কাটা হলো ৭টি গাছ

চলতি বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই সাতটি গাছ কাটা হয়। ছবি: সুজিত কুমার দাস/স্টার

বন বিভাগকে না জানিয়ে ফরিদপুরে জেলা প্রশাসন পরিচালিত তারার মেলা ঈশান মেমোরিয়াল স্কুলের ক্যাম্পাস থেকে ৭টি গাছ কাটা হয়েছে। গাছগুলোর বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছর। স্কুলটির প্রধান ফটকের সংস্কার কাজের জন্য এগুলো কাটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির একজন শিক্ষক।

জানা গেছে, চলতি বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই সাতটি গাছ কাটা হয়। এর মধ্যে চারটি রেইনট্রি, দুটি মেহগনি ও একটি নিম গাছ আছে। কিন্তু, গাছ কাটার বিষয়ে বন বিভাগ কিছুই জানে না। এমনকি গাছ কাটার আগে সরকারি নিয়ম মেনে বন বিভাগকে দিয়ে মূল্য নির্ধারণও করা হয়নি।

স্কুলটির প্রধান ফটকের সংস্কার কাজের জন্য গাছগুলো কাটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির একজন শিক্ষক। ছবি: সুজিত কুমার দাস/স্টার

এ বিষয়ে ফরিদপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কবির হোসেন পাটোয়ারী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তারার মেলা স্কুল প্রাঙ্গণের গাছ কোন আইন মেনে কাটা হচ্ছে তা আমার জানা নেই। গাছ কাটার আগে ফরিদপুর বন বিভাগের কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি কিংবা বন বিভাগকে দিয়ে কেটে ফেলা গাছের মূল্য নির্ধারণ করানো হয়নি।'

বন বিভাগের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা এবং কোনো প্রক্রিয়ায় গাছগুলো কাটা হলো জানতে চাইলে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. দিদারুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। আমি এখানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছি গত ১২ সেপ্টেম্বর। আমি আসার আগেই এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তাই এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।'

স্কুলটির সহকারী শিক্ষক ডলি ইয়াসমিন বলেন, 'গত জুনে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সংস্কার কাজ শুরু হয়। ওই সময় একটি রেইনট্রি গাছের জন্য কাজে সমস্যা হচ্ছিল। এছাড়া, গাছটির ভিতরে গর্ত হয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। তাই, ওই গাছটিসহ অন্যান্য গাছ কেটে ফেলা হয়।'

গাছ কাটার আগে ফরিদপুর বন বিভাগের কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। ছবি: সুজিত কুমার দাস/স্টার

স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাইফুল কবির বলেন, 'তারার মেলা স্কুল সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান। তাই এ প্রতিষ্ঠান ইচ্ছে করলেই রেজুলেশন করে গাছ কাটতে পারে। এতে বন বিভাগের অনুমতির কোনো প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়া, গাছগুলো বিদ্যালয়ের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।'

তবে, ফরিদপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কবির হোসেন পাটোয়ারী বলেন, 'যে কোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাছ কাটার ক্ষেত্রে বন বিভাগের অনুমতি নেওয়ার বিধান আছে।'

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুল আলম বলেন, 'আমি সম্প্রতি ফরিদপুরে সদরে ইউএনও হিসেবে যোগ দিয়েছি। তারার মেলার গাছ কাটার কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা তা আমি বলতে পারছি না।'

গাছ কাটার আগে ফরিদপুর বন বিভাগের কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। ছবি: সুজিত কুমার দাস/স্টার

সরেজমিনে দেখা যায়, কেটে ফেলা বড় আকারের দুটি রেইনট্রি গাছের গুঁড়িটি ছোট ছোট টুকরো করা হচ্ছে।

বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে কেটে ফেলা ওই সাতটি গাছের মধ্যে ওই দুটি রেইনট্রি গাছ কিনেছেন ফরিদপুর সদরের কাঠ ব্যবসায়ী আব্দুল করিম (৬৫)।

কাঠ ব্যবসায়ী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আনুমানিক ৩০ বছরের এবং ৩৫ বছর বয়সী দুটি রেইনট্রি গাছ কিনেছি আমি। দাম দিয়েছি ৫৫ হাজার টাকায়। গাছগুলো নিলামের মাধ্যমে নয় স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে দরদাম করে কিনেছি।'

১৯৭৬ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মূয়ীদ চৌধুরীর উদ্যোগে ফরিদপুর শেখ জামাল স্টেডিয়ামের পূর্বদিকে এবং জেলা জজের বাসভবনের দক্ষিণ পাশে শহরের কমলাপুর এলাকায় ৯৭ শতাংশ জমির ওপর তারার মেলা বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এ বিদ্যালয়ে পাঠ দান করা হয়। তবে, সম্প্রতি বিদ্যালয়টি মাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আছে ২৮০ জন এবং  শিক্ষক আছেন ১৭ জন।

Comments

The Daily Star  | English
China urges US for fair trade talks

China warns countries against striking trade deals with US at its expense

Beijing "will take countermeasures in a resolute and reciprocal manner" if any country sought such deals, a ministry spokesperson said

1h ago