বাংলাদেশ

হাসপাতালে আ. লীগ নেতা-কর্মীদের হামলা, নার্স কর্মচারীদের কর্মবিরতি

নোয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ৯ কোটি টাকার টেন্ডার (এম আর এস) সিডিউল কেনায় গড়িমসিকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনকে (৪৮) শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও হাসপাতালে ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।
ছবি: আনোয়ারুল হায়দার/ স্টার

নোয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ৯ কোটি টাকার টেন্ডার (এমএসআর) সিডিউল কেনায় গড়িমসিকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনকে (৪৮) শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও হাসপাতালে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।

এই ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা বেলা ২টা থেকে কর্মবিরতি শুরু করে। এর ফলে চিকিৎসা না পেয়ে রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।

বিকেল ৪টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নোয়াখালী মৌজা এলাকা থেকে গুরুতর অসুস্থ সুমি আক্তারকে (২৯) তার স্বামী রাজু হোসেন জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। রোগীর স্বামী রাজু বলেন, 'বেলা ২টা বাজে আমার অসুস্থ স্ত্রীকে জরুরী বিভাগে আনলেও কর্মচারীরা সিএনজি থেকে নামাতে দেননি।'

একই কথা জানিয়েছেন কবির হাট উপজেলার নলুয়া ভূইয়ারহাট গ্রামের সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'আমার বাবা সালাহ উদ্দিন (৭০) পেট ফুলে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। ২ ঘণ্টা আগে হাসপাতালে আনা হলেও ডাক্তার তার চিকিৎসা করেননি। এখন বাধ্য হয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যেতে হচ্ছে।'

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ৯ কোটি টাকা মূল্যের (এমএসআর) সামগ্রী কেনার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত ৫ সেপ্টেম্বর দরপত্র আহ্বান করে। ওই দরপত্র বিক্রির স্থান ছিল জেলা প্রশাসক কার্যালয়, নোয়াখালী সিভিল সার্জন কার্যালয় ও জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার জানান, ৩ জায়গায় সিডিউল বিক্রির কারণে বিপুল পরিমাণ সিডিউল বিক্রি হয়। এর ফলে কৌশলে জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই দরপত্র বাতিল করে। এরপর পুনরায় গত ১১ নভেম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয়। এবার কেবল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ে দরপত্র সিডিউল বিক্রির স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, 'জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন প্রায় ২০০ অনুসারী নিয়ে রোববার বেলা ১২টার দিকে তার কার্যালয়ে দরপত্র সিডিউল কিনতে আসেন। এ সময় দাপ্তরিক রেজিস্ট্রার মেন্টেইন করতে একটু দেরি হয়ে যায়। ফলে দুপুর সোয়া ১টার দিকে ২০-৩০ জন যুবক উত্তেজিত হয়ে আমার ওপর চড়াও হয়। এ সময় তারা আমাকে কিল-ঘুষি মেরে আহত করে।'

 হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম বলেন, 'আমি তত্ত্বাবধায়কে রক্ষা করতে গেলে হামলাকারীরা আমাকেও আঘাত করে স্যারের (তত্ত্বাবধায়কের) ওপর হামলা করে তার গলা চেপে ধরে ঘুষি মারে।'

এ ব্যাপারে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের ১ নং যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, '৯ কোটি টাকার দরপত্র সিডিউল বিক্রি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লুকোচুরি খেলছে। পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে দেড় কোটি টাকা কমিশন নিয়ে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন। তাই কৌশলে প্রথম দরপত্রটি বাতিল করে দ্বিতীয় দরপত্র আহ্বান করা হয়। আমি রোববার বেলা ১২টার দিকে দরপত্র সিডিউল কিনতে গেলে তত্ত্বাবধায়ক ও তার কর্মচারীরা আমাকে ২ ঘণ্টা বসিয়ে রাখে। এরপর আমাকে সিডিউল দিলে আমি চলে আসি। আমি সিডিউল কেনার খবর ছড়িয়ে পড়লে অন্যান্য ঠিকাদাররা সিডিউল কিনতে হাসপাতালে যান। তাদের কাছে সিডিউল বিক্রি না করায় তারা উত্তেজিত হয়েছে বলে শুনেছি। এই ঘটনা সর্ম্পকে আমি জানি না।'

তিনি আরও বলেন, 'দীর্ঘদিন থেকে হাসপাতালের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা সরকারের বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা ভুয়া ভাউচার ও টেন্ডারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করে আসছেন।'

হাসপতালের বিগত ১০ বছরের ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়গুলো ক্ষতিয়ে দেখার দাবি জানান তিনি।

এদিকে, হাসপাতালের সাইনবোর্ড ও প্রধান ফটক ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা বেলা ২টা থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন। কেবল জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা চালু রয়েছে।      

সুধারাম মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.জাকির হোসেন বলেন, 'খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। হাসপাতালের আরএমও সৈয়দ মহি উদ্দিন আবদুল আজিমের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে বলে শুনেছি। জরুরি বিভাগ ছাড়া হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) নোয়াখালী জেলা শাখা সভাপতি ডা. ফজলে এলাহী খান হাসপাতালে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, 'যারা এই হামলা করেছে তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।'

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান বলেন, 'বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে জানিয়েছে। আমি হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা কর্মচারীদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে হাসপাতালের কার্যক্রম ও চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ দিয়েছি। এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।'
 

Comments

The Daily Star  | English

Three difficult choices to heal economy

Bangladesh yesterday made three major decisions to cushion the economy against critical risks such as stubborn inflation and depletion of foreign currency reserves.

4h ago