সুন্দরবন: ২৩ বছরের সব অগ্নিকাণ্ড মাত্র ৫ শতাংশ এলাকায়

পূর্ব সুন্দরবনের চাদঁপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া বনের গহীনে আগুন নেভাতে পানি ছিটাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা। ছবি: তানজির এইচ রুবেল

সুন্দরবনে গত ২৩ বছরে যতগুলো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, তার সবগুলোই পূর্ব বনবিভাগের আওতাধীন এই ম্যানগ্রোভ বনের মাত্র পাঁচ শতাংশ এলাকায়।

বন কর্মকর্তারা বলছেন, পলি পড়ে বনভূমি উঁচু হওয়ার কারণে এখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। যদিও স্থানীয় বাসিন্দা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, মাছ শিকারের জন্য বনের ভেতরে ইচ্ছাকৃতভাবে এই আগুন লাগানো হয়।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক কারণে বা মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণেই আগুন লেগেছে।

অগ্নিকাণ্ডের প্রাকৃতিক কারণ ব্যাখ্যা করে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পলির কারণে পূর্ব বনবিভাগে জমি উঁচু হয়েছে। ফলে জোয়ার-ভাটার প্রভাব মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, যা যেকোনো ম্যানগ্রোভ বনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।'

তিনি বলেন, 'জোয়ার-ভাটা সুন্দরবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বনের অনেক অংশে পানি ঢুকতে পারে না। বনের ভেতরে সেইসব জায়গায় অনিয়মিত পানি প্রবেশের কারণে সেখানে বাস্তুসংস্থানে পরিবর্তন আসছে। শুধু নদীতে নয়, বনের তলের উচ্চতাও বেড়েছে।'

'মাটিতে জমে থাকা শুকনো পাতা পচে এক ইঞ্চি থেকে এক ফুট পর্যন্ত পুরু স্তর তৈরি করেছে, যেখানে দীর্ঘসময় আগুন জ্বলতে পারে,' যোগ করেন তিনি।

তিনি জানান, শুষ্ক মৌসুমে বন ও এর আশেপাশের মানব বসতির মাঝে থাকা প্রাকৃতিক সীমানা—সরু নালা ও খাল—আর থাকে না। এর ফলে বনে মানুষের যাতায়াত বেড়ে যায়।

স্থানীয় ও বনবিভাগ সূত্র জানায়, ধূমপান শেষে সিগারেটের ফিল্টার যেখানে-সেখানে ফেলা এবং কাদায় লুকিয়ে থাকা মাছ ধরার জন্য ঝোপের ভেতরে জেলেদের দেওয়া আগুনই পূর্ব বনবিভাগের অধীনে থাকা বনে আগুনের মূল কারণ।

তারা জানান, পূর্ব বনবিভাগে মৎস্যচাষ নিয়ন্ত্রণ করে প্রভাবশালীরা। কিছু নালা ও খালে মিঠা পানির মাছ চাষ করা হয়।

দাবি করা হয়, স্থানীয় বাসিন্দা ও মৌয়ালরা মৌমাছি তাড়ানোর জন্য ধোঁয়া দিতে গিয়ে অনেক সময়ই বনে আগুন ধরিয়ে ফেলেন।

যদিও মৌয়ালরা জানান, পূর্ব বনবিভাগের এলাকায় খুব কম মধু পাওয়া যায়। বেশিরভাগ মধু সংগ্রহ করা হয় পশ্চিম বনবিভাগ থেকে এবং গত ২৩ বছরে পশ্চিম বনবিভাগের এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, 'এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে এবং একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সবগুলো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব এলাকা জনবসতির বেশ কাছাকাছি এবং মানুষ সহজেই যেখানে যেতে পারে। সেখানে প্রচুর মিঠা পানি ও মাছও পাওয়া যায়।'

তিনি বলেন, 'জোয়ারের সময় বনের ভেতরে পানির সঙ্গে মাছও আসে, বিশেষ করে স্বাদু পানির মাছ। ম্যানগ্রোভ বনে জাল দিয়ে মাছ ধরা যায় না। তাই চ্যানেল ও খালের ধারে ঝোপঝাড়ে আগুন ধরিয়ে জমি পরিষ্কার করে রাখে, যাতে সেখানে কাদায় আটকে যাওয়া মাছ সহজে ধরা যায়।'

'মানুষের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বনবিভাগ সহজেই এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে পারে,' যোগ করেন তিনি।

বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো অবশ্য বলেছেন, 'জেলেরা খুব একটা ঝোপে আগুন দেয় না। পুরো সুন্দরবনে জেলেরা মাছ ধরলেও সব জায়গায় আগুন লাগে না। বনের মাত্র পাঁচ শতাংশ এলাকায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

No immediate tax relief despite inflation woes

There will be no tax relief for individuals in low- and middle-income brackets, at least in the next fiscal year, even though high inflation has significantly eroded their purchasing power over the last couple of years.

10h ago