পুতিন যা বললেন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: রয়টার্স

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছেন। পশ্চিমের বিশ্লেষকরা ভাবছেন, এতে ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত হয়েছে।

গতকাল সোমবার রাতে টেলিভিশনে দেওয়া পুতিনের ভাষণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রয়টার্স। ভাষণে তিনি চলমান পরিস্থিতির বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন।

রাশিয়া সমর্থিত বিদ্রোহী অঞ্চলের স্বীকৃতি প্রসঙ্গে

আমার মতে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেটি আরও অনেক আগেই নেওয়া উচিৎ ছিল। সেটি হচ্ছে, এ মুহূর্ত থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী দোনেৎস্ক ও গণপ্রজাতন্ত্রী লুহানস্ককে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।

ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ প্রসঙ্গে

ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিলে তা রাশিয়ার নিরাপত্তার ওপর সরাসরি হুমকি হবে।

আধুনিক ইউক্রেনের ভিত্তিমূল প্রসঙ্গে

আধুনিক ইউক্রেন পুরোপুরি রাশিয়ার হাতে তৈরি হয়েছে, বিশেষত বলশেভিক ও সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার হাতে। ১৯১৭ সালের বিপ্লবের পর থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু হয়।

বলশেভিক নীতির কারণে সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থান হয় এবং আজও ইউক্রেনকে 'ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের' ইউক্রেন বলা হয়। তিনিই এ রাষ্ট্রের রচয়িতা এবং স্থপতি। সব পুরনো নথি এ বিষয়কে সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করে। এখন তাদের কৃতজ্ঞ উত্তরসূরিরা ইউক্রেনে লেনিনের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপক স্মৃতিস্তম্ভগুলোকে ধ্বংস করছে। এটাকে তারা সাম্যবাদের প্রভাব মুক্তকরণের (ডিকমিউনাইজেশন) তকমা দিয়েছে।

তারা কী আসলেই সাম্যবাদ থেকে মুক্তি চায়? তাহলে সেটাই তাদের জন্য উত্তম। তবে কথিত আছে, অর্ধেক পথে থেমে যাওয়া অনাবশ্যক। প্রকৃতপক্ষে ইউক্রেনে ডিকমিউনাইজেশন বলতে কী বোঝায়, প্রয়োজনে তা দেখিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।

২০০৮ সালে ইউক্রেন ও জর্জিয়াকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়ার অঙ্গীকার প্রসঙ্গে

ইউরোপের বেশ কিছু মিত্র এ দেশগুলোকে সদস্যপদ দেওয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়। এর মাধ্যমে মার্কিনরা বস্তুত একটি রুশবিরোধী নীতি বাস্তবায়ন করে।

ন্যাটোর বেশ কিছু সদস্য রাষ্ট্র এখনো তাদের মধ্যে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে দ্বিধায় ভুগছে। একইসঙ্গে অন্য কিছু ইউরোপীয় দেশের রাজধানী থেকে আশ্বাস বাণী আসছে, চিন্তার কিছু নেই। আগামীকালই ইউক্রেনকে সদস্যপদ দেওয়া হচ্ছে না। মার্কিনরাও একই সুরেই কথা বলছে।

এ ক্ষেত্রে আমাদের উত্তর হলো- আগামীকাল না হলেও পরশু দিন এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হবে। বস্তুত এতে কোনো কিছুর পরিবর্তন হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান হচ্ছে, পূর্ব ইউক্রেনের সহিংসতা নিরসনের সঙ্গে ইউক্রেনের ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। শুধু ন্যাটোর মানদণ্ডে পৌঁছানো ও দুর্নীতি দূর করাই যথেষ্ট।

একইসঙ্গে তারা আমাদের বার বার বোঝাতে চায় যে, ন্যাটো একটি শান্তিকামী ও পুরোপুরি প্রতিরক্ষামূলক মৈত্রী। তারা জানায়, এটি কোনো দিক দিয়ে রাশিয়ার জন্য কোনো ঝুঁকি সৃষ্টি করছে না। তারা আমাদের তাদের মুখের কথা মেনে নিতে বলে। কিন্তু আমরা জানি, তাদের এসব বাক্যের মূল্য কতটুকু।

রাশিয়ার প্রতি ঝুঁকি প্রসঙ্গে

বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারছি, আগামীতে রাশিয়ার ওপর সামরিক হুমকি অনেক বেড়ে যাবে। আমি এ বিষয়টির দিকে বিশেষ নজর দিতে চাই যে, আমাদের দেশের ওপর হঠাৎ আক্রমণের সম্ভাবনা অনেকাংশেই বেড়ে যাচ্ছে।

আমি ব্যাখ্যা করতে চাই, মার্কিন কৌশলগত পরিকল্পনার নথিতে একটি তথাকথিত পূর্ব-আক্রমণের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে, যা শত্রুদের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে পরিচালনা করা হয়। এখানে প্রশ্ন আসে, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর প্রধান শত্রু কে? উত্তর খুব সহজ, রাশিয়া।

ন্যাটোর নথিতে আমাদের রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে এবং সরাসরি উত্তর আটলান্টিক অঞ্চলের প্রতি সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইউক্রেন (ডুবসাতারুদের সুইমিং পুলে ঝাঁপিয়ে পড়ার) স্প্রিংবোর্ডের মতো আক্রমণ শুরুর ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আমাদের পূর্বপুরুষরা এ ধরনের কথা শুনলে তা বিশ্বাস করতে চাইতেন না। আজকের দিনে আমরাও এটা বিশ্বাস করতে চাই না। কিন্তু এটাই বাস্তবতা।

বিধিনিষেধ প্রসঙ্গে

তারা আবারো আমাদের ব্ল্যাকমেইল করতে চাইছে। তারা আমাদের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপের হুমকি দিচ্ছে, যেটি আমার ধারণা, তারা এমনিতেও দেবে, কারণ রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর শক্তিমত্তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সার্বভৌমত্ব আরও শক্তিশালী হচ্ছে। তারা আরও একটি বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের জন্য অজুহাত খুঁজে পাবে বা সাজিয়ে নেবে। ইউক্রেন পরিস্থিতি যেমনটাই হোক না কেন।

তাদের একটাই লক্ষ্য এবং তা হলো- রাশিয়ার উন্নয়নের রাশ টেনে ধরা। তারা এটা করবেই, যেমনটা আগেও করেছে। এমনকি কোনো আনুষ্ঠানিক অজুহাত না থাকলেও, শুধু আমাদের অস্তিত্বের কারণেই তা ঘটবে এবং এ ক্ষেত্রে আমরা কখনোই আমাদের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ ও মূল্যবোধ ক্ষুণ্ণ হয় এরকম কোনো ধরনের সমঝোতায় যাব না।

আমি পরিষ্কারভাবে এবং সরাসরি বলতে চাই যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন জাতিসংঘ ও ন্যাটোর প্রতি আমাদের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে একটি সমপর্যায়ের আলোচনার প্রস্তাবের কোনো উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না, সে অবস্থায় আমাদের দেশের প্রতি হুমকি উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে রাশিয়ার নিজ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যেকোনো ধরনের প্রতিক্রিয়ামূলক উদ্যোগ নেওয়ার পূর্ণ অধিকার রয়েছে এবং ঠিক সেটাই আমরা করব।

Comments

The Daily Star  | English

Govt decides to ban activities of AL until completion of ICT trial

Law Adviser Prof Asif Nazrul said this at a press briefing after a special meeting of the advisory council tonight

1h ago