তালেবানকে হামাসের অভিনন্দন

ফিলিস্তিনি মুক্তি সংগ্রামী সংগঠন হামাস এক বক্তব্যে বলেছে, আমরা আফগান মুসলমানদের অভিনন্দন জানাই তাদের ভূমি দখল করে রাখা আমেরিকানদের পরাজিত করার জন্য এবং আমরা তালেবান ও তার সাহসী নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানাই এই বিজয়ের জন্য, যেটি ২০ বছর দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
হামাস আরও জানায়, আফগানিস্তানে একতা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন অর্জনের জন্য দেশটির মুসলিম জনতা ও নেতাদের শুভ কামনা জানাচ্ছে হামাস। মার্কিন বাহিনী ও তাদের মিত্রদের পরাজয় এটাই প্রমাণ করে, দুর্দশায় জর্জরিত ফিলিস্তিনি জনগণসহ সারাবিশ্বের বিপ্লবী জনতাও শিগগির বিজয় লাভ করবে।
রোববার সন্ধ্যায় হামাসের রাজনৈতিক দপ্তরের সদস্য মুসা আবু মারজৌক একটি টুইটার বার্তায় লেখেন, 'আজ তালেবান জয়যুক্ত হয়েছে, যদিও আগে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও সমাজকে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ এসেছে। এখন তালেবানরা আগের চেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত ও বাস্তববাদী। তারা যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে লড়েছে এবং তাদের দেওয়া আংশিক সমাধানগুলো মেনে নেয়নি। তালেবানরা গণতন্ত্র ও নির্বাচনের স্লোগান ও মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে প্রতারণার শিকার হয়নি। এটি শোষিত জনগোষ্ঠীর জন্য একটি শিক্ষা।'
সম্প্রতি হামাস তাদের নেতা ইসমাইল হানিয়াহ ও তালেবান প্রতিনিধিদের মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকের ছবি প্রকাশ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বৈঠকটি কাতারের দোহায় অবস্থিত তালেবান অফিসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত দুই বছর ধরে দোহা থেকেই হানিয়াহ হামাসের কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
গাজা উপত্যকার এক ফিলিস্তিনি সাংবাদিক জানান, তালেবান প্রতিনিধিরা বৈঠকে হামাস নেতাদের গত মে মাসে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ১১ দিনব্যাপী যুদ্ধে জয়লাভ করার জন্য অভিনন্দন জানান।
তিনি জানান, আগামীতে হামাস ও তালেবানদের মধ্যে সাহায্য-সহযোগিতার পরিমাণ বাড়বে।
ওই সাংবাদিক আরও জানান, তালেবানদের বিজয় ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী সংগঠনগুলোর কার্যক্রমের সঙ্গে মিলে গেছে, যাদের মধ্যে হামাস অন্যতম। এ ঘটনায় এটাই প্রমাণিত হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের সামরিক সক্ষমতা অনেক বেশি থাকলেও তাদেরকে পরাজিত করা সম্ভব।
অনেক ফিলিস্তিনি নাগরিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মার্কিন বাহিনীর 'পরাজয়ের' জন্য আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করেছেন। তারা ছবি ও কমেন্টের মাধ্যমে আফগানিস্তানের বীরদের 'কাবুলের স্বাধীনতা' এনে দেওয়ার জন্য অভিনন্দন জানান।
তবে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন দ্য প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) নির্বাহী কমিটির সদস্য আহমেদ মাজদালানি তালেবানদের বিজয় উদযাপনকারীদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।
মাজদালানি বলেন, 'যারা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জয়ী হওয়ার ব্যাপারটি নিয়ে উল্লাস করছেন, তাদের মনে রাখা উচিত তালেবানরা আফগান সেনাবাহিনীর কাছ থেকে কোনো ধরনের বাঁধা না পেয়েই কাবুলে প্রবেশ করেছে। এ বিষয়টি সম্ভব হয়েছে কারণ গত বছর তালেবানদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে "দোহা চুক্তি" স্বাক্ষর করেছিল।'
মাজদালানি তালেবানদের একটি 'অশুভ ও নিষ্ঠুর বাহিনী, যারা আইসিস ও আল কায়েদার জন্ম দিয়েছে এবং সব ধরনের জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের নেপথ্যে রয়েছে' বলে অভিহিত করেন।
তিনি জানান, আরব ও মুসলমানদেরকে এই জঙ্গি কার্যক্রম ও সন্ত্রাসবাদের জন্য চরম মূল্য দিতে হবে।
Comments