করোনার টিকাদান: স্কুলশিক্ষার্থীদের আনন্দ, আছে ভোগান্তিও
লম্বা লাইন, টিকা কেন্দ্রের অব্যবস্থাপনা এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়ার নানা ধরনের জটিলতার কারণে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষার্থীদের ফাইজারের টিকা দেওয়ার উদ্যোগে উৎসাহ ও উদ্দীপনা কমেছে।
ধানমন্ডির কামরুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লামিয়া আখতার দ্য ডেইলি স্টারকে গতকাল বলেন, 'ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য আমাদেরকে প্রায় দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে।'
লামিয়ার মতো আরও অনেক অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ এনেছেন। তারা টিকা কেন্দ্র বাড়ানোরও দাবি জানান।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভ্যাকসিন নিবন্ধনের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৪ লাখ শিক্ষার্থীর তালিকা পাঠানো হয়েছিল। ঢাকার স্কুলগুলোতে অধ্যয়নরত এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে আড়াই লাখের নিবন্ধন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
বর্তমানে ঢাকার স্কুলগুলোতে সর্বমোট সাড়ে ৬ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি আছে যাদের বয়স ১২ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে।
এই সংবাদদাতা মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং ধানমন্ডির কাকলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে সরেজমিনে পরিদর্শন করতে যেয়ে উভয় স্কুলের গেটের বাইরে গোলযোগপূর্ণ পরিবেশ দেখতে পান।
শিক্ষার্থীরা এমনকী স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করতেও বিভিন্ন বাধাবিপত্তির মুখোমুখি হচ্ছিল।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের পরিচালনা পরিষদের একজন সাবেক সদস্য সোমবার দুপুরে গেটের সামনে থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের গ্রহণ করছিলেন। সেখানে ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেখা যায়।
স্কুলটির স্কাউট ও বিএনসিসির সদস্যরা অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তা করছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক পরিচালনা পরিষদ সদস্য দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, কেন্দ্রে ২৪টি বুথ আছে কিন্তু সবগুলো চালু নেই। এ কারণে কর্তৃপক্ষ ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
ফরিদ আহমেদ তার সন্তানকে ভ্যাকসিন দিতে এসে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি জানান, বারবার চেষ্টা করেও তিনি নিবন্ধন করতে পারেননি, কারণ স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়নি। অবশেষে তিনি ব্যক্তিগতভাবে একজন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিবন্ধন করেন।
জন্ম সনদ না থাকায় একজন বিএনসিসি সদস্য ভিকারুননিসার এক ছাত্রীকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেননি। তবে তার সঙ্গে ভ্যাকসিন কার্ড ছিল।
অভিভাবকরা জন্ম সনদের সংখ্যা নিয়ে আরেকটি বড় সমস্যার কথা তুলে ধরেন, যেটি ভ্যাকসিনের নিবন্ধনকে প্রভাবিত করছে। তাদের অভিযোগ অনুযায়ী, যাদের ১৭ ডিজিটের সংখ্যার পরিবর্তে ১৬ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন সংখ্যা রয়েছে, তারা সুরক্ষা অ্যাপ ব্যবহার করে ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করতে পারছেন না।
মরিয়ম বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও তার মেয়ের জন্য ভ্যাকসিনের নিবন্ধন করতে পারেননি। মেয়ে আইডিয়াল স্কুলের বনশ্রী শাখার ছাত্রী এবং তার জন্ম নিবন্ধন সংখ্যা ১৬ ডিজিটের বলে জানান তার মা মরিয়ম।
কাকলী স্কুলের ভেতরে ২৪টি ভ্যাকসিন বুথ আছে এবং সেখানে বড় ধরনের কোনো ঝামেলা নেই। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনেক অভিভাবক থাকায় কেন্দ্রে ঢুকতে যেয়ে সমস্যায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।
কেন্দ্রের ভেতর কিছু শিক্ষার্থী জানায়, সার্বিক ব্যবস্থাপনা বেশ ভালো, কিন্তু তাদেরকে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।
সরকার ১ নভেম্বর থেকে ঢাকার ৮টি ভ্যাকসিন কেন্দ্রে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করেছে।
রাজধানীর যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিকা দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো হলো— বসুন্ধরার হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, মালিবাগের সাউথপয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বনানীর চিটাগং গ্রামার স্কুল, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুরের ঢাকা কমার্স কলেজ, ধানমন্ডির কাকলি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তরার সাউথ ব্রিজ স্কুল ও মিরপুরের স্কলাস্টিকা।
মাউশির ইএমআইএস সেলের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট খন্দকার আজিজুর রহমানের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইতোমধ্যে তারা সুরক্ষা অ্যাপ দলের সঙ্গে জন্ম সনদ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
'আমরা তাদেরকে জানিয়েছি ১৬ ডিজিটের সনদ গ্রহণ করতে। তারা এ ব্যাপারে কাজ করছেন', বলেন আজিজুর।
বিভিন্ন ধরনের বাধাবিপত্তি থাকা সত্ত্বেও অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এই টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন এবং কেউ কেউ জানিয়েছেন তারা এতে আশ্বস্ত হয়েছেন।
আইডিয়াল স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে আসজাদুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি এবং তার স্ত্রী উভয়ই একটি ব্যাংকে চাকরি করেন এবং তাদেরকে প্রতিদিন বাসা থেকে বের হতে হয়।
আসজাদুল বলেন, 'আমরা আমাদের সন্তানকে নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম। আমরা ২ জনই টিকা নিয়েছি এবং ফাহাদের (তার সন্তান) স্কুলও খুলে গেছে। সে আমাদের পরিবারের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা সদস্য ছিল। এখন সবাই নিরাপদ হতে পারল।'
অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments