চালের দাম কেন নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না জানালেন কৃষিমন্ত্রী

কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক। ফাইল ছবি

আমন মৌসুমে উৎপাদন ভালো হলেও অগ্রহায়ণ মাসে চালের দাম বাড়ছে। মোটা চালের দামও বাড়ছে। নিম্নবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চালের দাম কেন রাখা যাচ্ছে না তা জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিবিদ ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কৃষি মন্ত্রণালয়ে গণমাধ্যমে তিনি কারণগুলো উল্লেখ করেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, খাদ্য-শস্যের দাম বাড়ার পেছনে এবার অনেকগুলো কারণ আছে। করোনা মহামারির কারণে এ বছর আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিকভাবে খাদ্য-শস্যের দাম বেড়েছে। সারের দাম বেশি। এ বছর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন ৪৫০ ডলারে গম বিক্রি হচ্ছে। আমরাও কিনছি। যেটা আগে ৩০০ ডলারের বেশি কোনো দিন ছিল না। ৪ গুণ বেড়েছে সারের দাম।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্রতি বছর ২৪ লাখ নতুন মুখ যোগ হচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশে ২৪ লাখ মানুষ নেই। ১০ লাখ রোহিঙ্গা, তাদেরও আমাদের খাওয়াতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চালের ওপর চাপ বাড়াতে; গম না খেয়ে মানুষ বেশি চাল খাচ্ছে। গত অর্থবছর এই সময় প্রায় ৪৮ লাখ টন গম আমদানি হয়েছিল। এ বছর জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানি হয়েছে মাত্র ১৭-১৮ লাখ টন। মনে হচ্ছে, এই অর্থবছরে ৩০ লাখ টন গমও আমদানি হবে না। তাতে চালের ওপর প্রভাবটা পড়ছে। পশু খাদ্য হিসেবেও চাল ব্যবহৃত হয়। সেটাও একটা কারণ।

মানুষের আয় বাড়ছে, যারা আগে একবার খেতে তারা এখন দুবার খায়। যারা দুবার খেত তারা ৩ বার খায়। চর-হাওর এলাকার মানুষ খাবারের কষ্ট করতো, তাদের আয় বেড়েছে, তাদের ওই রকম অভাব নেই—তারাও বেশি খায়। সার্বিকভাবে চাহিদা বেড়েছে। এই চাহিদা মেটানোর জন্য অবশ্যই আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে, বলেন রাজ্জাক।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের জনসংখ্যা বাড়ছে এবং জমির পরিমাণ প্রতিনিয়ত কমছে। শিল্প কারখানা, বাড়ি-ঘর, বিভিন্ন অকৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য আমাদের অনেক উর্বর-আবাদি জমি চলে যাচ্ছে। ২০১৫-১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কৃষি উৎপাদন, বিশেষ করে দানা জাতীয় খাদ্য উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাই। ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিদেশ থেকে আমাদের তেমন চাল আমদানি করতে হয়নি। সরকারি পর্যায়ে একদমই করা হয়নি, বেসরকারি পর্যায়ে সরু চাল এসেছে।

সিলেট-ময়মনসিংহ হাওর এলাকায় ২০১৭ সালে ভয়াবহ বন্যা হয়। ধানের প্রচণ্ড ক্ষতি হয়, তখন চাল আমদানির জন্য আমরা শুল্ক কমিয়ে দিয়েছিলাম। ফলে চালের দাম কমে যায়। এর ধারাবাহিকতায় ২০২০ সাল পর্যন্ত অব্যাহতভাবে চালের দাম কমতে থাকে। পরে শুল্ক বাড়ানো হলে চালের দাম বেড়ে যায়। চালের দাম সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা যাচ্ছে না। মোটা চালের দামও বাড়ছে, গত ৮-৯ মাস যাবত আমরা লক্ষ করছি। গত আমন উৎপাদন একটু খারাপ হয়েছিল, এবার ভালো হয়েছে। গতবার বোরোর উৎপাদন খুবই ভালো হয়েছে। তারপরও নবান্নের মাস, অগ্রহায়ণ মাসেও আমরা দেখছি চালের দাম বাড়ছে—বলেন কৃষিমন্ত্রী।

বোরো ধান চাষ সংক্রান্ত পরিসংখ্যানে অসঙ্গতি থাকায় সরকার অস্বস্তিতে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা ইউনিয়নে আমাদের একজন করে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আছেন। তার এলাকায় কতটুকু জমিতে কী পরিমাণ বোরো হয়েছে এবং কী কী ধরন আছে এটা বের করা কঠিন না। কেন এটা আমরা পারছি না। এই পরিসংখ্যান নিয়ে একটা অস্বস্তির মধ্যে আছে সরকার।

Comments

The Daily Star  | English

Jatiya Party HQ set afire, vandalised

The Jatiya Party headquarters at the capital’s Kakrail was set on fire and vandalised last night by a group of people who claimed themselves to be “anti-fascist students, workers, and masses”.

1h ago