কুয়েতে প্রবেশের আগেই বিমানবন্দরে আটকা পড়লো ১৩ বাংলাদেশি
কুয়েত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১৩ জন বাংলাদেশি কর্মীকে ফেরত পাঠাচ্ছে দেশটির ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরে পৌঁছার আগেই তাদের ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় কুয়েত প্রবেশের সুযোগ হারিয়েছে তারা।
বর্তমানে তাদের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের হেফাজতে বিমানবন্দরের হোটেলে রাখা হয়েছে। আজ শনিবার রাতের ফ্লাইটে তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কথা রয়েছে।
তাদের মধ্যে ২ জন জামালপুর, ২ জন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২ জন টাঙ্গাইলের এবং বাকিরা গাজীপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা।
গত ২২ জুন কুয়েতের আল ফয়সাল নামক কোম্পানির ভিসায় কুয়েতে যান ওই ১৩ বাংলাদেশি। বিমানবন্দরে পৌঁছার পর ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার সময় জানতে পারেন ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগেই তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
ভুক্তভোগী বাংলাদেশিদের সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে ২২ জুন সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি ০৩৪৩ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কুয়েতের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তারা। ফ্লাইটটি কুয়েতে পৌঁছানোর নির্ধারিত সময় ছিল কুয়েতের স্থানীয় সময় ২২ জুন রাত ১০টা ৫০ মিনিটে। কিন্তু ফ্লাইটটি নির্ধারিত সময়ের ৫২ মিনিট পরে কুয়েত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ফ্লাইট থেকে যাত্রীরা ইমিগ্রেশন পর্যন্ত পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত ১২টা পেরিয়ে গেলে তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। সেই কারণে কুয়েত বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের প্রবেশ করতে দেয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগীদের কয়েকজন জানান, নতুন ভিসা বের হওয়ার পর ৩ মাস পর্যন্ত মেয়াদ থাকে। যেদিন ভিসার মেয়াদ শেষ, তারা সেদিনই পৌঁছেছেন। এজেন্সির লোক যদি একদিন আগেও ফ্লাইট দিয়ে দিত, তাহলে আর তাদের সমস্যা হতো না। টিকিটের দাম কম পাওয়ার জন্য দেরি করায় তাদের এই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের একজন আজিজুল মিয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া ভিডিও বার্তায় তিনি জানান, গত ১৯ জুন তাদের ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল। সেই অনুযায়ী ৪ দিন আগেই তারা ঢাকায় চলে আসেন। কিন্তু রিক্রুট্রিং এজেন্সি ফ্লাইট দেয় ২২ জুন। ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এজেন্সি থেকে তাদের টিকিট দেওয়া হয়। পরে তারা দ্রুত মোটরসাইকেলে বিমানবন্দরে পৌঁছান। সময়মতো বিমানের বোর্ডিং পাস পেলেও বিএমআই কার্ড (জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ছাড়পত্র) না থাকায় বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের আটকে দেয়। পরে রিক্রুট্রিং এজেন্সি থেকে কার্ড দিয়ে যায়। সেই কারণে ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা পর ছাড়ে।
'কুয়েতে বিমানবন্দরে নেমে সে দেশের ইমিগ্রেশন পর্যন্ত পৌঁছাতে রাত ১২টার বেশি হয়ে যায়। যে কারণে তখন ২২ জুন পার হয়ে ২৩ জুন হয়ে যাওয়ায় আমাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ফলে কুয়েত ইমিগ্রেশন পুলিশ আমাদের আটকে রাখে', বলেন তিনি।
আজিজুল বলেন, 'এর দায় সম্পূর্ণ রিক্রুটিং এজেন্সিকে নিতে হবে। তাদের গাফলতির কারণে কুয়েতে প্রবেশ করতে পারেনি ১৩ বাংলাদেশি।'
ভিডিও বার্তায় অন্য কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা খরচ করে তারা কুয়েতে ভাগ্য ফেরাতে গিয়েছিলেন। রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় এবং শাস্তি দাবিও করেছেন তারা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস কুয়েতের মিনিস্টার (শ্রম) আবুল হোসেন বলেন, 'খবরটি জানার পর দূতাবাসের পক্ষ থেকে নিয়োগদাতা কোম্পানির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। মালিক নিজে গিয়ে চেষ্টা করলে তাদের হয়তো কুয়েতে প্রবেশ করানো সম্ভব হবে। সম্পূর্ণ ব্যাপারটা এখন মালিকের ওপরে। আমাদের কাজ কুয়েতে প্রবেশের পর।'
লেখক: কুয়েতপ্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক
Comments