হায়াতের রক্তক্ষরণে নূরের অভিনেতা হিসেবে সূচনা হলো

নূরের সঙ্গে আমার পথচলা শুরু হয়েছে প্রথমে সহযাত্রী, এরপর সহকর্মী, তারপর বন্ধু। বিভিন্ন দিক থেকে ওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক। এখন সবচেয়ে বড় হয়ে যেটা দেখা দিয়েছে সেটা বন্ধু। হাতেগোনা যে কয়েকজন বন্ধু রয়েছে তার মধ্যে একজন। খুব গভীর বন্ধুত্ব। এখন তো বয়স বাড়ছে। অসুখে-বিসুখে, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে কাছে পাই। নূরের সঙ্গে প্রথম পরিচয় ১৯৭২ সালে। এসএম পারভেজ ভাই সম্পাদিত চিত্রালী পত্রিকায় নূর তখন লেখালেখি করত। ওকে একটা দায়িত্ব দেয়া হলো। মঞ্চ নাটকের চর্চা শুরু হয়েছে তখন। শাহাদত চৌধুরী এটা নিয়ে কাভার স্টোরি করেছে বিচিত্রায়। ‘বাকী ইতিহাস’ তখন নিয়মিত মঞ্চায়ন হচ্ছে। আমার একটা সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য পাঠানো হয়েছিল। একটা পাতা তাকে দেয়া হয়েছিল। আমার বাসা তখন রাজারবাগ।

নূরের সঙ্গে আমার পথচলা শুরু হয়েছে প্রথমে সহযাত্রী, এরপর সহকর্মী, তারপর বন্ধু। বিভিন্ন দিক থেকে ওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক। এখন সবচেয়ে বড় হয়ে যেটা দেখা দিয়েছে সেটা বন্ধু। হাতেগোনা যে কয়েকজন বন্ধু রয়েছে তার মধ্যে একজন। খুব গভীর বন্ধুত্ব। এখন তো বয়স বাড়ছে। অসুখে-বিসুখে, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে কাছে পাই। নূরের সঙ্গে প্রথম পরিচয় ১৯৭২ সালে। এসএম পারভেজ ভাই সম্পাদিত চিত্রালী পত্রিকায় নূর তখন লেখালেখি করত। ওকে একটা দায়িত্ব দেয়া হলো। মঞ্চ নাটকের চর্চা শুরু হয়েছে তখন। শাহাদত চৌধুরী এটা নিয়ে কাভার স্টোরি করেছে বিচিত্রায়। ‘বাকী ইতিহাস’ তখন নিয়মিত মঞ্চায়ন হচ্ছে। আমার একটা সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য পাঠানো হয়েছিল। একটা পাতা তাকে দেয়া হয়েছিল। আমার বাসা তখন রাজারবাগ। নূর এলো সাক্ষাৎকার নিল, এরপর নাগরিকের রিহার্সেলে আসতে চাইল। আসতে বললাম। তারপর নিয়মিত আসত। ছাত্র ইউনিয়ন করার সময় থেকেই ও নাটকের প্রম্পটিং করত। এর ফলে নূরকে স্ক্রিপ্ট ধরিয়ে দেয়া হতো। এভাবে আস্তে আস্তে নাগরিকের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ল। একটা দুর্ঘটনার কারণে নূর অভিনয়ের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। ‘বিদগ্ধ রমণীকুল’, ‘তৈল সংকট’ মিলিয়ে নাটক হচ্ছে। সেখানে আবুল হায়াত অভিনয় করছে। নায়ক চরিত্রে আবুল হায়াত, নায়িকা চরিত্রে লুলু (সুলতানা কামাল) অভিনয় করছে। একটা ক্রাউডের দৃশ্য ছিল। এই দৃশ্য করতে গিয়ে বাদল রহমান একটা ঘুষি মারে। এটা গিয়ে আবুল হায়াতের নাকে লাগে। প্রচুর রক্তপাত হয়। হায়াতের নাকের একটা জায়গায় কোনোরকম আঘাত লাগলে রক্ত পড়তে শুরু করে। চার দিন পর আমাদের নাটকটা মঞ্চে আসবে। হায়াতকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। ও বলল, ‘আমি অভিনয় করতে পারব না।’ এদিকে টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। কী করা যায়? নূরকে বললাম, এটা তো প্রম্পট করতে করতে মুখস্থ হয়ে গেছে, এটা তোমাকে করতে হবে।’ আমাদের নাগরিকে একটা নিয়ম আছে, একটা শো করলে চারটা করতে হবে। কারণ অনেক কষ্ট করে নিজেকে তৈরি করতে হয়তো। পরে বললাম, হায়াতের রক্তক্ষরণে নূরের অভিনেতা হিসেবে সূচনা হলো। একজন ভালো অভিনেতা নূর। বয়সের দিক দিয়ে আমার দু’বছরের ছোট।


পাঁচজন নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম। পরে ১৬ জন হলো। তখন আর পেরে উঠছিলাম না। এটা ১৯৭৭-৭৮ সাল হবে হয়তো। আমাদের সামনে উদাহরণ হিসেবে ছিলেন রামেন্দু মজুমদার। ১৯৭৯ সালের ১ মার্চ মনে হয় নূর এলো আমাদের সঙ্গে। এশিয়াটিকের শুরুর সময় সারা যাকেরের বাবা আমার শ্বশুর টাকা ধার দিয়েছিলেন। জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে নূর এলো আমাদের সঙ্গে। তার তিন-চার বছর পর পার্টনার হয়ে গেল। আমি ম্যানেজিং ডিরেক্টর, নূর ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
আমাদের মধ্যে তথাকথিত মালিকদের মতো সম্পর্ক ছিল না। এখনো নেই। আমাদের মধ্যে অগাধ স্বচ্ছতা রয়েছে।
নূর তো সবসময় রাজনীতির সঙ্গেই ছিল। ওর বাবাও রাজনীতি করতেন। ও স্বপ্ন দেখত রাজনীতি করার। মানুষের কাছাকাছি থাকার। রাজনীতির কারণে কিন্তু অভিনয় ছেড়েছে। এটা চিন্তা করা যায়? আমি হলে সেটা পারতাম না। গণমানুষের মধ্যে যেতে খুব পছন্দ করে নূর। যারা সৎভাবে রাজনীতি করতে চায় নূর তাদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।


মুক্তিযুদ্ধের সময় আলমগীর কবীর ভাইয়ের প্ররোচনায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দিলাম। হাতিয়ার হাতে যুদ্ধ করা হলো না। তিনি বললেন, ‘দ্যাখো তোমার যেখানে প্রয়োজন সেখানেই থাকা উচিত। শব্দ সৈনিক হিসেবে তুমি অনেক বেশি কন্ট্রিবিউশন করতে পারবে। তিনি বললেন, আমরা একটা ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ প্রোগ্রাম চালু করব, সেটা তোমাকে দেখতে হবে।’ আরো বলেছিলেন, ‘যার যে দায়িত্ব সেটা সঠিকভাবে পালন হলেই বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। তখন আমরা কাজগুলো ঠিকভাবে পালন করে গেছি, অন্যকিছু চিন্তা করিনি। অনেক বাজে কথা শুনেছি। এই যে, নিজের কাজটা ঠিকমতো করে গেছি একটা আদর্শ নিয়ে। ঠিক এই আদর্শ নিয়ে নূর রাজনীতি করছে। ওর দায়িত্ব সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে। এর বাইরে ও নাক গলায় না। এটা একটা বিশাল ব্যাপার। এর ফলে অনেক রকম কাজ করতে পেরেছে ওর মন্ত্রণালয়ে। কোনো মন্ত্রীকে দেখিনি এত ডিভাইসে কাজ করতে। ১০০ বছরের পুরনো যে লাইব্রেরি সেগুলো সংস্কার করা হচ্ছে, অর্থ দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন প্রদর্শনীতে সে নিজে যাচ্ছে। শিল্পকলা একাডেমি নাচ, গান, এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। নূর প্রমাণ করল শিল্পকলা একাডেমি বড় একটা ব্যাপ্তি।
অনেক ভালো অভিনেতা, নিজেকে অনেক ভাঙতে পারে, ভাঙতে চায়। বন্ধু হিসেবে খুব বড়মাপের। বিপদে-আপদে যার ওপর নির্ভর করা যায়। সবচেয়ে বড় কথা, নূর খুব বড়মাপের বাঙালি।

Comments

The Daily Star  | English

Beyond Dollar: Bangladesh to seek over 36b yuan in Chinese loans

Bangladesh is going to seek more than 36 billion yuan, equivalent to $5 billion, as soft loans from China to reduce pressure on its dollar reserves.

7h ago