শুধু ২০২৩ সালে নতুন বেকার ১ লাখ স্নাতক

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, শ্রমশক্তি জরিপ, বেকার, কর্মসংস্থান,
প্রতীকী ছবি, স্টার ফাইল ফটো

গত বছর উচ্চতর ডিগ্রিধারী এক লাখের বেশি বেকার চাকরি খুঁজেছিলেন। তারা দেশে বেকারের সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি উচ্চ ডিগ্রিধারীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি তাদের দক্ষতার অভাবকেই তুলে ধরছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে—২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা স্নাতকসহ বেকারদের সংখ্যা ছিল নয় লাখ ছয় হাজার। এক বছর আগে ছিল সাত লাখ ৯৯ হাজার।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩ অনুসারে, শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার এক বছর আগে ১২ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালে বেড়ে ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ হয়েছে।

বছরের পর বছর ধরে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ-হতাশা নিয়ে শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাইয়ে দেশব্যাপী আন্দোলন করেছিলেন।

সরকারের নানান ব্যবস্থার কারণে তরুণদের মনে যে হতাশা তৈরি হয়েছিল তা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটায়।

সম্প্রতি দেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া ৩৯৭ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্রেও কর্মসংস্থান ও শ্রমবাজারের গতিপ্রকৃতিকে 'টিকিং টাইম বোমা' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, 'স্নাতকধারীদের সংখ্যাই যে শুধু বেড়েছে তা নয়। তাদের অনেকে চাকরির জন্য যথাযথভাবে প্রস্তুত নয়। অনেকের দক্ষতা খুবই কম।'

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক কাজী ইকবাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্নাতকধারী বেকাররা চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।'

সরকারি তথ্য অনুসারে, গত বছর দেশের ৫৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল সাড়ে ১০ লাখ। এটি মোট শিক্ষার্থীর ৬৮ শতাংশ। বাকি ৩২ শতাংশ ১১৬ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন।

এ ছাড়াও, দেশজুড়ে এক হাজার ৯৪১ কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হয়।

গত ১০-১৫ বছরে অনেক কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান তিনি।

সরকারি তথ্য বলছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান, ২৪ শতাংশ বাণিজ্য ও ১২ শতাংশ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (এসটিইএম) নিয়ে পড়ছেন।

তবে স্নাতক কলেজগুলোয় বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক কম।

শ্বেতপত্র অনুসারে, বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকধারীদের সংখ্যা কম হওয়ায় এর প্রভাব অর্থনীতিতে পড়ছে।

অর্থনীতিতে আইসিটিসহ প্রযুক্তির ব্যবহার না হলে বিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রিধারীদের চাহিদা কম।

পরিষেবা ও শিল্প খাতে সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের তুলনায় কারিগরি প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব দেওয়া হয়।

লেবার ফোর্স সার্ভে ২০২২ অনুসারে, শিল্পে কর্মসংস্থানের প্রায় নয় শতাংশ ও সেবা খাতে ২৩ শতাংশ সম্মানজনক কাজের সুযোগ আছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশে ধীরগতিতে বিনিয়োগ হচ্ছে। এ কারণে বেকারের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে।

কাজী ইকবাল বলেন, 'দেশে অপরিকল্পিতভাবে যে হারে কলেজের সংখ্যা বেড়েছে, আগামীতে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।'

জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কর্মসংস্থান খাতের সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা রিজওয়ানুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চাহিদা ও সরবরাহের দিক থেকেই এর কারণ বের করা যায়।'

চাহিদার বিষয়ে তিনি মনে করেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্নাতকধারীদের জন্য পর্যাপ্ত কাজের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি।

তিনি বলেন, 'স্নাতকধারীদের জন্য কাজের সুযোগ যথেষ্ট নয়।'

তার মতে, শ্রমবাজারে যে ধরনের যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রয়োজন এবং শিক্ষার্থীদের দক্ষতার মধ্যে অসামঞ্জস্যতা আছে।

এর প্রভাব সম্পর্কে তার ভাষ্য, মূল্যবান সম্পদের অপচয় হচ্ছে। শিক্ষায় বিনিয়োগ থেকে যথাযথ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, 'অর্থনীতি সম্ভাব্য জনসম্পদের সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না।'

তিনি আরও বলেন, 'কর্মজীবনের শুরুতে বেকারত্ব তরুণদের জীবনে কালো দাগ ফেলে।'

'গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের প্রথম চাকরির জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় তারা পেশাজীবনে অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়েন।'

তরুণদের বেকারত্ব সামাজিক অস্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।

বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক কাজী ইকবাল মনে করেন, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই বিপুল সংখ্যক স্নাতক ডিগ্রিধারী তৈরির কৌশল পুনর্বিবেচনা করা দরকার।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে এটি পরিচালিত হতে পারে। সরকারের উচিত কলেজ প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে প্রযুক্তিগত ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের দিকে মনোযোগ দেওয়া।

অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে পথ দেখাতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

IMF slashes global growth outlook on impact of Trump tariffs

Worldwide economic output will slow in the months ahead as US President Donald Trump's steep tariffs on virtually all trading partners begin to bite

21m ago