মার্কিন বিনিয়োগ পেতে বাংলাদেশকে ১১ শর্ত দিল যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন বিনিয়োগ পেতে হলে বাংলাদেশকে এই শর্ত মেনে চলতে হবে।
মার্কিন বিনিয়োগ
বাংলাদেশ ও যুুক্তরাষ্ট্রের পতাকা। ছবি: সংগৃহীত

জো বাইডেন প্রশাসন গতকাল 'বাংলাদেশ লেবার অ্যাকশন প্ল্যান' এর অধীনে ১১টি শ্রম সংক্রান্ত শর্তের কথা জানিয়েছে। আরও বেশি মার্কিন বিনিয়োগ পেতে হলে বাংলাদেশকে এই শর্ত মেনে চলতে হবে।

ঢাকায় সফররত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের কাছে 'বাংলাদেশ লেবার অ্যাকশন প্ল্যান' হস্তান্তর করেন।

গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্টের (টিকফা) সপ্তম পর্যায়ের বৈঠক পর্যালোচনা সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল।

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির পথে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে দূর করতে একটি বার্ষিক ফোরাম গঠনের লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র টিকফা চুক্তি স্বাক্ষর করে।

গতকাল বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন তপন কান্তি ঘোষ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ইউএসটিআরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ।

প্রথম শর্ত হলো- ইউনিয়ন সংগঠক, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও হয়রানির ঘটনা প্রতিরোধ ও আইনগত প্রতিবাদ কার্যক্রম প্রতিরোধ ও আইন অমান্যকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে বাংলাদেশকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

এছাড়া, বাংলাদেশকে শ্রমিক কর্মীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ প্রত্যাহার বা সমাধান করতে হবে এবং গৃহীত বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে হবে।

দ্বিতীয় শর্ত হলো- বাংলাদেশ শ্রম আইন প্রদত্ত শ্রমিকদের অধিকার পরিপন্থী যে কোনো আচরণের জন্য কারখানার মালিক, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও ব্যক্তিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা।

বাংলাদেশকে নিয়োগকর্তাদের অন্যায্য শ্রমের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তদন্ত ও সমাধান করতে হবে এবং ইউনিয়ন বিরোধী বৈষম্য, প্রতিশোধ এবং অন্যান্য অন্যায্য শ্রমের জন্য শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোর জন্য ন্যায়বিচারের সুযোগ বাড়াতে হবে।

তৃতীয়ত, বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে পরামর্শ করে বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন করতে হবে, যেন সংগঠনের স্বাধীনতা এবং যৌথ দর কষাকষি আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।

তদুপরি, আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে এবং ন্যূনতম সীমার নিচে নেমে গেলে ট্রেড ইউনিয়ন বাতিল করার বিধান বাতিল করতে বাংলাদেশকে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিকের শতকরা হার বর্তমান ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনতে হবে।

ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে হলে একটি ইউনিয়নকে সকল সদস্যের অংশগ্রহণে দুটি সাধারণ সভা করতে হবে এবং নিবন্ধনের জন্য একটি গঠনতন্ত্র পেশ করতে হবে, এই বাধ্যবাধকতা বাংলাদেশের প্রত্যাহার করা উচিত।

মার্কিন সরকার ধর্মঘটের অধিকারের ওপর অত্যধিক বিধিনিষেধ ও অবৈধ ধর্মঘটের জন্য কঠোর শাস্তির অপসারণও চেয়েছিল।

চতুর্থত, ইউএসটিআর সংশোধিত বাংলাদেশ শ্রম আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা সংশোধন করতে বলেছে।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বাংলাদেশ আমদানি করা পণ্য, বিশেষ করে আমদানি করা তুলা থেকে তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার দাবি করে।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইডিএএফ) কাছে বিনিয়োগ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ পণ্য নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সহজ করারও দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ।

এর আগে ২০১৩ সালে দুর্বল শ্রম অধিকার ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার কারণে বাংলাদেশের জন্য জিএসপি স্থগিত করার সময় তৎকালীন ওবামা প্রশাসন ১৬ দফা 'বাংলাদেশ অ্যাকশন প্ল্যান' দিয়েছিল।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ১৬ দফা শর্ত মেনে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিলেও এখনো জিএসপি পুনর্বহাল করা হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English
Digital journalism has not been kind to rural journalists

Digital journalism has not been kind to rural journalists

As the mainstream media adapts to the demands of digital age, the ugly sides of digital journalism continue to emerge.

7h ago