জুলাই-মার্চে কর আদায় বেড়েছে ১৫ শতাংশ

এনবিআরের প্রাথমিক হিসাব অনুসারে, ভ্যাট ও আয়কর আদায় বেড়ে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চে রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে দুই লাখ ৫৯ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা।
এনবিআর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, আইএমএফ,

চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর আদায় বেড়েছে ১৫ শতাংশ। এটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত পূরণে সহায়ক বলে আশা করা হচ্ছে।

এনবিআরের প্রাথমিক হিসাব অনুসারে, ভ্যাট ও আয়কর আদায় বেড়ে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চে রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে দুই লাখ ৫৯ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা।

তবে উল্লেখিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রার ২১ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা আদায় হয়নি।

তারপরও আইএমএফ রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্য দিয়েছিল তা পূরণের পথে আছে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত আইএমএফ এক লাখ ৪৩ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা কর-রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরে দিয়েছিল। তা পূরণ করে এক লাখ ৬২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।

অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে এনবিআরের রাজস্ব ও কর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ে দুই লাখ ৭৬ হাজার ১৭০ কোটি টাকা কর-রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে আইএমএফ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, কর বহির্ভূত রাজস্বের তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে এটি শর্ত পূরণ করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরে মোট তিন লাখ ৯৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আইএমএফ।

সরকার প্রাথমিকভাবে এনবিআরকে চলতি অর্থবছরের জন্য চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা কর-রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দিয়েছিল। পরে সংশোধন করে তা চার লাখ ১০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

এনবিআরের তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে মোট সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার ৬৩ শতাংশ আদায় করতে পেরেছে কর কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশের পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সংস্কার ছাড়াই ১৫ শতাংশ কর প্রবৃদ্ধি খারাপ নয়।'

তার মতে, কিন্তু এই হারে চলতে থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি দেখা দেবে।

তিনি আরও বলেন, 'বেশ কয়েকটি খাতে বিদ্যমান কর ছাড়ের পরিমাণ কমিয়ে দিলে সরকার আগামী অর্থবছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে পারবে।'

'করহার বাড়ানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে না' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। বছরের পর বছর ধরে জাতীয় বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাও হাতছাড়া হচ্ছে।'

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সংশোধনের পরও এ বছরের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা আছে।'

তিনি মনে করেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও নতুন আয়কর আইন চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে আরও বেশি কর-রাজস্ব আদায়ে সহায়তা করেছে।

'সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে প্রয়োজনীয় সমন্বয় ও আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে রাজস্ব আয় বাধাগ্রস্ত হয়েছে,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

'আসন্ন বাজেটে রাজস্ব সংগ্রহ ত্বরান্বিত করা অগ্রাধিকার পাবে। আইএমএফও এ বিষয়ে জোর দিয়েছে। তবে নীতিগত প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কীভাবে তা অর্জন করতে চায়,' যোগ করেন তিনি।

'দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কর ছাড়ের দাবি উঠবে। তাই কর আদায়ে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো ও সুশাসন নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। জনগণ অনেক সময় কর দেয় কিন্তু তা কোষাগারে পৌঁছায় না। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকারি অর্থের গুরুত্ব নিশ্চিত করা ও সরকারি পরিষেবায় উন্নতি করা জরুরি। তবেই জনগণ স্বেচ্ছায় কর দিতে আগ্রহী হবেন।'

'কর ব্যবস্থার সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ' উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, 'সরকারের রাজস্ব সংস্কারের এখনই উপযুক্ত সময়।'

মাথাপিছু আয় বাড়লেও বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত আট দশমিক চার শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা বিশ্বের সর্বনিম্ন।

গত সপ্তাহে প্রকাশিত ফিসক্যাল মনিটরে আইএমএফ বলেছে, ভ্যাট ছাড়ের পরিমাণ কমানো গেলে রাজস্ব বাড়বে বলে আশা করা যায়।

সংস্থাটির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত আট দশমিক আট শতাংশে উন্নীত হবে। এটি এক বছর আগে আট দশমিক তিন শতাংশ ছিল।

এনবিআরের তথ্য বলছে, আমদানি কমে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চে শুল্ক আদায় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ২১ শতাংশ বেড়ে ৭৪ হাজার ২৬২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

রাজস্বের সবচেয়ে বড় উৎস ভ্যাট আদায় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে প্রায় ১৬ শতাংশ বেড়ে এক লাখ ৭০২ কোটি টাকা হয়েছে।

এনবিআরের তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চে আয়কর আদায় হয়েছে ৫৪ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। এটি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি।

পিআরআইয়ের সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, করের পরিধি বাড়ানো ও ব্যক্তিগত আয়ের ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্সের মাধ্যমে কর-রাজস্ব আদায় দুই শতাংশ পয়েন্ট বাড়াতে পারলে বাংলাদেশ অতিরিক্ত ৬৫ হাজার কোটি টাকা কর-রাজস্ব পাবে।

ফলে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত দাঁড়াবে ১০ দশমিক চার শতাংশ।

সরকার এই বাড়তি রাজস্ব অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক দুই শতাংশ বাড়বে বলে জানিয়েছে পিআরআই।

Comments