লুটপাট-ভাঙচুর: এখনো বন্ধ অনেক মার্কেট, সতর্ক দোকান মালিকরা

লুটপাট
রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় নূর হোসেন চত্বরে বন্ধ দোকান। ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার

কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার সরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে সৃষ্ট সংকট, লুটপাট ও ভাঙচুরের আশঙ্কায় গতকাল দেশের অনেক দোকান ও শপিংমল বন্ধ রেখেছেন।

ব্যবসায়ীরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙে পড়ায় গত দুই দিন ধরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি জায়গায় বেশকিছু স্থাপনা ও দোকানপাটে লুটপাট, হামলা ও ভাঙচুর হয়। ফলে শপিংমল ও মার্কেট বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা দোকান খোলেননি। অনেক ব্যবসায়ীকে তাদের মালপত্র রক্ষার জন্য দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা গেছে।

রঙ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৌমিক দাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অনিরাপদ পরিস্থিতির কারণে গতকাল সারাদেশে আমাদের ২০টি আউটলেট বন্ধ ছিল।'

তিনি আরও বলেন, 'সংবাদমাধ্যমে দেখেছি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুট হচ্ছে। এ অবস্থায় দোকান খোলা সম্ভব না।'

নেত্রকোনায় তাদের দোকানের কাঁচ ভেঙে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'পরিস্থিতির উন্নতি হলে বুধবার দোকান খোলা হবে।'

দোকান খুললেও শিগগিরই ক্রেতা পাওয়া যাবে না বলে আক্ষেপ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পরপরই একদল দুর্বৃত্তরা যখন বুঝতে পারে যে, দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, তখন তারা লুটপাট ও ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।

পুলিশের সদ্য সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বাহিনীর সব সদস্যকে ধৈর্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

পুলিশ সদরদপ্তর থেকে পাঠানো ভিডিও বার্তায় তিনি পুলিশের সব সদস্যকে তাদের নিরাপত্তা রক্ষা করে ধৈর্য ও দৃঢ় মনোবলের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানান।

গত সোমবার রাজধানীতে বিক্ষোভকারী, আওয়ামী লীগ নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৬৬ জন নিহত ও এক হাজারেরও বেশি আহত হন। রাজধানীর বাইরে কমপক্ষে ৭৬ জন নিহত ও প্রায় ৫০০ জন আহত হয়েছেন।

শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই বিক্ষুব্ধ জনতা আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশাপাশি তাদের সম্পদ, বাড়িঘর ও অফিসে হামলা চালায়।

ফ্যাশনওয়্যার, এক্সেসরিজ, হোম টেক্সটাইল, হস্তশিল্প ও তাঁত পণ্যের খুচরা বিক্রেতা কে ক্রাফটের বিক্রয় ব্যবস্থাপক এ এম সলিমুল্লাহ ডেইলি স্টারকে জানান, গতকাল তাদের ১৬ টি আউটলেটের মধ্যে ১৪টি বন্ধ ছিল।

তারা শুধু যমুনা ফিউচার পার্ক ও পুলিশ প্লাজা শপিং মলের আউটলেট দুটি খুলেছেন।

গত সোমবার থেকে দিনাজপুর ও রংপুরে শপিং কমপ্লেক্সের পাশাপাশি রাস্তার পাশের অধিকাংশ দোকান বন্ধ আছে বলে ব্যবসায়ীরা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার দিনাজপুরের গুলশান মার্কেট, বেগম প্লাজা ও মালদহপট্টিসহ কয়েকটি জায়গায় ঘুরে দেখা যায়, শপিং মল ও ব্র্যান্ডের শোরুম সবই বন্ধ।

দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রেজা হুমায়ুন কবির চৌধুরী শামীম ডেইলি স্টারকে বলেন, লুটপাটের ভয়ে দিনাজপুরে দোকানপাট বন্ধ আছে।

গতকালও একই কারণে সিলেটের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সিলেট শাখার যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রহমান রিপন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সোমবার হট্টগোলের সময় বড় শপিংমলসহ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুট হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা ব্যবসায়ীদের দোকান খুলতে উৎসাহিত করেছি। একসঙ্গে আমরা একে অপরকে রক্ষায় কাজ করব।'

নারায়ণগঞ্জে শপিং মল ও দোকানপাটও বন্ধ ছিল। আজ বুধবার থেকে দোকান খোলার কথা ভাবছেন তারা।

নারায়ণগঞ্জের টানবাজার এলাকার রিভারভিউ কমপ্লেক্সের সমীর ফ্যাশনের মালিক আতিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সকালে কয়েকজন ব্যবসায়ী বাজারে গিয়েছিলেন। তারা দোকানপাট খুলতে চেয়েছিলেন। গতকাল সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজার কমিটি দোকান না খোলার সিদ্ধান্ত নেয়।'

নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচ শপিংমলে গিয়ে দেখা গেছে, সবগুলোই বন্ধ।

কয়েকজন ব্যবসায়ীকে শপিং মলের সামনে বসে নিরাপত্তা দিতেও দেখা গেছে।

নরসিংদী ইনডেক্স প্লাজার সজীব ব্রাদার্সের মালিক মাহিম ইসলাম সজীব ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আওয়ামী লীগ নেতারা দীর্ঘদিন ধরে বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্বে ছিলেন।'

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ না থাকায় দুর্বৃত্তরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

'সাহায্য করার মতো অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নেই। তাই দোকানপাট বন্ধ,' যোগ করেন তিনি।

নিরাপত্তা জোরদার না হলে আবার ব্যবসা শুরু করা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রতিবেদনে তৈরিতে সহায়তা করেছেন দিনাজপুরের কংকন কর্মকার, সিলেটের দ্বোহা চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জের সৌরভ হোসেন সিয়াম ও নরসিংদীর জাহিদুল ইসলাম

Comments

The Daily Star  | English
BNP's stance on president removal in Bangladesh

BNP for polls roadmap in 2 to 3 months

Unless the interim government issues a roadmap to the next election in two to three months, the BNP may take to the streets in March or April next year, say top leaders of the party.

6h ago