জিডিপি প্রবৃদ্ধির ঘোরে বেড়েছে আয় ও সম্পদ বৈষম্য

ছবি: স্টার

সরকারি তথ্য বলছে—২০১০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে আয় বৈষম্য ব্যাপক হারে বেড়েছে। অর্থনীতিবিদরা আয় বৈষম্য দূর করার পরিবর্তে জিডিপি প্রবৃদ্ধির দিকে সরকারের বেশি মনোযোগকে এজন্য দায়ী করেছেন।

বৈষম্যের পরিমাপ গিনি সহগ ২০১০ সালে শূন্য দশমিক ৪৫৮ থেকে বেড়ে ২০১৬ সালে শূন্য দশমিক ৪৮ হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুসারে, এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত আছে। ২০২২ সালে তা শূন্য দশমিক ৫০ এ পৌঁছেছে। এটি বাংলাদেশকে বিশ্বের সর্বোচ্চ আয় বৈষম্যের দেশগুলোর একটি করে তুলেছে।

বিদায়ী ২০২৪ সালে আয় বৈষম্য আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে এক কোটি বা এর বেশি টাকার মালিকদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বিবেচনা করা যেতে পারে।

গত এপ্রিল থেকে জুনে এই সংখ্যা বেড়েছে দুই হাজার ৮৯৪টি।

অন্যদিকে, গত দুই বছরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি অন্তত ৭৮ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৮ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড)।

বিশ্বব্যাংকের সংজ্ঞা অনুসারে, অতিদরিদ্র মানুষ গত দুই বছরে দৈনিক ২৫৬ টাকাও আয় করতে পারেনি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) জানিয়েছে, দরিদ্রতম গ্রামীণ বাসিন্দারা তাদের ক্ষুধা মেটাতে ক্রমবর্ধমান হারে ভাতের ওপর নির্ভর করছে। আমিষসমৃদ্ধ খাবার কমিয়ে দিয়েছে।

গত ছয় মাসে দেশে সাড়ে তিন কোটি থেকে আট কোটি টাকা দামের আটটি বিলাসবহুল রোলস রয়েস গাড়ি আমদানি করা হয়েছে।

আমলা হিসেবে নিজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগের সরকারগুলো বৈষম্য কমাতে তেমন আগ্রহ দেখায়নি।'

তার মতে, 'সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল জিডিপি প্রবৃদ্ধি।'

বৈষম্য কমাতে তিনি আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, 'বেসরকারি বিনিয়োগ বছরের পর বছর ধরে স্থবির হয়ে আছে। বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে। আয় বাড়বে ও বৈষম্য কমবে।'

সম্পদের বৈষম্য আরও গভীর সমস্যা

আয় বৈষম্যের তুলনায় বাংলাদেশে সম্পদের বৈষম্য পরিস্থিতি আরও খারাপ। এর অর্থ জনসংখ্যার ছোট অংশ সংখ্যাগরিষ্ঠের তুলনায় অনেক বেশি সম্পদের মালিক।

অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত এবং ডিসেম্বরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে তৈরি শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে—২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে সম্পদের বৈষম্য শূন্য দশমিক ৮২ থেকে বেড়ে শূন্য দশমিক ৮৪ হয়েছে।

ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ও বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক মুস্তফা কে মুজেরি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সময়োপযোগী হস্তক্ষেপের অভাব ঐতিহাসিকভাবে আয় ও সম্পদ বৈষম্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'অর্থনীতির পরিধি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরাঞ্চলে আয়ের সুযোগ বেড়ে যায়। তবে সরকার যদি এসব বৈষম্য দূর করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তা আরও বাড়তে পারে।'

তার মতে, 'দুর্নীতি উচ্চ বৈষম্যের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে। কারণ এ দেশে ক্ষমতা, আয় ও সম্পদ বাড়ানো একসঙ্গে যুক্ত।'

উচ্চ করই কি সমাধান

আয় বৈষম্য কমাতে মুস্তফা কে মুজেরি প্রগতিশীল আয়কর ব্যবস্থার পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে, ধনীদের ওপর উচ্চহারে কর আরোপ করা দরকার।

তবে তিনি উচ্চ উপার্জনকারীদের প্রকৃত আয় সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে অসুবিধা ও নীতি নির্ধারণে ধনীদের প্রভাবের মতো বাধাগুলোর কথা স্বীকার করেছেন।

তাই করনীতির পাশাপাশি সরকারের উচিত কম আয়ের মানুষদের জন্য সুযোগ সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া। এর মধ্যে আছে কম আয়ের পরিবারের জন্য শিক্ষার মানোন্নয়ন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বাড়ানো ও তহবিল অপব্যবহার ঠেকিয়ে সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনী সম্প্রসারণ করা।

আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত আর্থ-সামাজিক কাঠামো তৈরি করতে এ ধরনের উদ্যোগ জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
road accidents death in Bangladesh April

Road accidents killed 583 in April: Jatri Kalyan Samity

Bangladesh Jatri Kalyan Samity (BJKS), a passenger welfare platform, said that a total of 583 people were killed and 1,202 injured in 567 road accidents across the country in the month of April, citing media reports

5h ago